ফাইল চিত্র।
চলতি মরসুমের প্রথম দু’মাসে দক্ষিণবঙ্গে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করেছিল বর্ষা। বৃষ্টির পরিমাণের নিরিখে দক্ষিণ অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছিল উত্তরবঙ্গকে। কিন্তু মরসুমের দ্বিতীয় ইনিংসে উত্তরের জেলাগুলি ক্রমশ ছন্দে ফিরছে। যদিও খনও দক্ষিণের জেলাগুলিকে সামগ্রিক ভাবে টপকে যেতে পারেনি তারা। দিল্লির মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, ১ জুন থেকে ২০ অগস্ট (শুক্রবার) পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে স্বাভাবিকের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে কিন্তু সাত শতাংশ ঘাটতি রয়েছে বর্ষণের।
কয়েক দিন আগেও দক্ষিণবঙ্গে উদ্বৃত্ত বৃষ্টির হার ছিল প্রায় ২৮ শতাংশ। আর ১৫ শতাংশ বর্ষণ-ঘাটতি ছিল উত্তরে। কিন্তু উত্তরে জোরালো বর্ষণ চলায় এবং দক্ষিণে বৃষ্টি না-হওয়ায় হিসেব বদলে যাচ্ছে। মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীদের মতে, বর্ষা ঋতুতে জোরালো বৃষ্টির জন্য মৌসুমি অক্ষরেখার অবস্থান এবং দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর থেকে জোরালো জলীয় বাষ্পের জোগান প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে অক্ষরেখা তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে বেশ কিছুটা উত্তর দিকে সরে গিয়ে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থান করছে। তার ফলে সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পের জোগান গিয়েছে কমে। অক্ষরেখার ঠাঁইবদলের পাশাপাশি জলীয় বাষ্পের জোগান কমাতেই বৃষ্টি কমেছে দক্ষিণে।
আবহবিজ্ঞানীদের হিসেবে বৃষ্টির এক থেকে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতি বা উদ্বৃত্তকে স্বাভাবিকের গোত্রেই ফেলা হয়। সেই হিসেবে উদ্বৃত্ত বর্ষার গোত্রে দক্ষিণবঙ্গ এখনও সামান্য এগিয়ে। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বর্ধমান এবং উত্তর ২৪ পরগনায়। ওই দুই জেলাতেই স্বাভাবিকের থেকে ৩৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। উদ্বৃত্ত বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং বাঁকুড়াতেও। উত্তরবঙ্গও সাত শতাংশ ঘাটতি নিয়ে স্বাভাবিকের গোত্রে রয়েছে। সেখানে সব থেকে কম ঘাটতি রয়েছে দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলায় (১০ শতাংশ)।
দক্ষিণবঙ্গে আপাতত জোরালো বর্ষার পূর্বাভাস না-থাকায় উদ্বৃত্ত বর্ষণের তকমা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা যাবে কি না, আবহবিদেরা তা নিয়ে ঘোরতর সন্দিহান। তাঁরা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। এখন ঘাটতি হলে অস্বস্তি মালুম হতে পারে, কিন্তু ক্ষতি হবে না। বরং নদী, নালা, বিল জলে টইটম্বুর হয়ে থাকায় বাড়তি বৃষ্টি বিপদ ডেকে আনতে পারে।