এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
হাওড়ামুখী ডাউন কাটিহার এক্সপ্রেসে তবলা বাদক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে চলন্ত ট্রেনে কোথায় খুন করা হয়েছিল, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। এমনকি খুনের পর কোন স্টেশনে নেমে দক্ষিণ ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল ওই খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্ত রাহুল ওরফে ভোলু কর্মবীর জাঠ, তাও বুধবার পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি রেল পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে রেল পুলিশ মনে করছে, ফরাক্কার পর কোনও স্টেশনে নেমে ওই দিন দক্ষিণ ভারতের ট্রেন ধরেছিল অভিযুক্ত। ঠিক কোন স্টেশনে কাটিহার এক্সপ্রেস থেকে রাহুল নেমেছিল, তা জানার জন্য ওই ট্রেনের যাত্রাপথের সব স্টেশনের সিসিটিভি খতিয়ে দেখছে রেল পুলিশের একটি দল।
রেল পুলিশের এক কর্তা জানান, রাহুলকে গুজরাত পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। তার মেয়াদ শেষ হলেই এ রাজ্যের পুলিশ তাকে হেফাজতে নিতে আদালতে আবেদন করবে। পুলিশ সূত্রের খবর, রেল পুলিশের একটি দল বুধবারই গুজরাতের ভালসাদ জেলার পাদ্রিতে পৌঁছে গিয়েছে। তারা ধৃতকে জেরা করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে কোথায় খুন করা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করবে। এ দিন গভীর রাতেই জেরা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এ দিন বিকেলে ভালসাদের এসপি করণ রাজ বাঘেলা জানান, রাহুল তদন্তে তাঁদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে। হাওড়া রেল পুলিশের পুলিশ সুপারকে তবলাবাদক খুনের সবটা জানানো হয়েছে। এ দিন ধৃতকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল উর্বারা রেল স্টেশনের কাছে একটি আম বাগানে। যেখানে তবলা বাদককে ট্রেনে খুনের পাঁচ
দিন আগে এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের পরে খুন করেছিল ওই অভিযুক্ত। সেখানে এ দিন ওই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়।
গুজরাত পুলিশের কাছ থেকে রেল পুলিশ জানতে পেরেছে, রাহুলের অপরাধের হাতে খড়ি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়। ওই সময়ে সে একটি বাইসাইকেল চুরি করে হরিয়ানার রোহতক জেলায়। তবে নাবালক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন মামলা রুজু হয়নি। রাহুলের বাঁ পায়ে পোলিয়োর কারণে সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। এক পুলিশকর্তা জানান, রাহুল প্রথম পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় ২০১৫ সালে উত্তর প্রদেশের মথুরায়, ট্রাক চুরির অভিযোগে। ধৃত পুলিশকে জানিয়েছে, পায়ে সমস্যা থাকায় তাকে ট্রাক চালাতে দেওয়া হত না। সেই রাগেই সে ট্রাক ছিনতাই শুরু করে। তার বিরুদ্ধে প্রায় সাতটি ট্রাক চুরির মামলা রয়েছে। গুজরাত পুলিশ জানিয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অস্ত্র পাচারের অভিযোগে রাহুলকে পাকড়াও করে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার পুলিশ। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাজস্থানের যোধপুর রেল পুলিশ ডাকাতির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছিল। তার পরে তার স্থান হয়েছিল যোধপুর জেল। সেখান থেকে মে মাস নাগাদ ছাড়া পায় সে।
কী ভাবে তাকে পাকড়াও করা হল?
পুলিশ জানিয়েছে, উর্বারা রেল স্টেশনের কাছে তরুণীকে যেখানে খুন করা হয়েছিল, সেখান থেকে একটি ব্যাগ এবং জামা উদ্ধার হয়েছিল। ওই স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ওই জামা পরা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে সেখানকার রেল পুলিশ। সেই মতো তার ওপর নজরদারি শুরু হয়। গুজরাত পুলিশ জানিয়েছে, খুনের পর পোশাক বদলে ফেললেও তার ছবি মেলার পরেই বিভিন্ন রাজ্যে তা পাঠানো হয়। সেখান থেকেই যোধপুর এবং সুরাত জেল কর্তৃপক্ষ রাহুলের বিষয়ে সব তথ্য এবং ফোন নম্বর জানিয়ে দেয় গুজরাতের রেল পুলিশকে। কিন্তু তাতেও খোঁজ মিলছিল না রাহুলের। রবিবার রাহুল মুম্বইয়ের বান্দ্রা থেকে ভুজের ট্রেনে ওঠে। যা এক সোর্স জানতে পেরে রেল পুলিশকে জানালে ভাপি স্টেশনে তাকে গ্রেফতার করে সেখানকার পুলিশের বিশেষ দল।
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, কাটিহার এক্সপ্রেসে তবলাবাদককে খুনের পর তাঁর মোবাইল ফোনটি নিয়ে পালিয়েছিল রাহুল। যে ফোনটি সে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে ব্যবহার করেছিল বুধবার এবং বৃহস্পতিবার। সেকেন্দ্রাবাদে খুন করার সময়ে ওই মোবাইলটি তার কাছেই ছিল। তার পরে বন্ধ হয়ে যায় ফোনটি।