কথা সারলেন ইয়েচুরির সঙ্গে

আসন ভাগাভাগির সম্মতি রাহুলেরও

সরাসরি জোটের কথা না বললেও পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়ে ক’দিন আগে বাম-কংগ্রেস সমঝোতার প্রস্তাবে ছাড়পত্র দিয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এড়িয়ে গিয়ে এ বার রাহুল গাঁধীও অধীর চৌধুরীদের জানিয়ে দিলেন, বামেদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির জন্য যেন দ্রুত প্রস্তুতি সেরে ফেলেন তাঁরা। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৮
Share:

সরাসরি জোটের কথা না বললেও পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়ে ক’দিন আগে বাম-কংগ্রেস সমঝোতার প্রস্তাবে ছাড়পত্র দিয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এড়িয়ে গিয়ে এ বার রাহুল গাঁধীও অধীর চৌধুরীদের জানিয়ে দিলেন, বামেদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির জন্য যেন দ্রুত প্রস্তুতি সেরে ফেলেন তাঁরা। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। বামেদের সঙ্গে আসন ভাগের ব্যাপারে তার আগেই যেন মোটামুটি ভাবে একটা সহমতে পৌঁছতে পারেন রাজ্যের নেতারা।

Advertisement

সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হল আজ থেকে। সেই অবসরেই সংসদের অলিন্দে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কথা হয়েছে রাহুলের। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল ইয়েচুরিকেও জানিয়েছেন, বাম-কংগ্রেস জোটের হাওয়া পশ্চিমবঙ্গে যে ‘ইতিবাচক প্রভাব’ ফেলছে, সেই রিপোর্ট তিনি রাজ্যের নেতাদের কাছ থেকে পেয়েছেন। আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে রাজ্যের বাম নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার জন্য তিনি শীঘ্রই প্রদেশ নেতাদের দায়িত্ব দেবেন। তার পরে যত দ্রুত সম্ভব তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে বসে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলবেন।

তবে প্রশ্ন হল, রাজ্য স্তরে এই বোঝাপড়া নিয়ে কেন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করছে না কংগ্রেস হাইকম্যান্ড? কংগ্রেসের শীর্ষ সারির এক নেতার ব্যাখ্যা, সরাসরি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের কথা সিপিএম কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলেননি। এই অবস্থায় কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে জোট নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হলে তা একতরফা দেখাবে। তাই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এড়িয়ে রাজ্যের নেতাদের আসন সমঝোতার প্রস্তুতি সেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। অর্থাৎ সমঝোতা হলেও জোটের ব্যাপারটা অলিখিত থাকার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও আব্দুল মান্নানদের বক্তব্য, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না করলেও হাইকম্যান্ডের অন্তত বলা উচিত যে, রাজ্যের মানুষের আকাঙ্খাকে মর্যাদা দিয়ে নির্বাচনী সমঝোতার জন্য প্রদেশ নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হল।

Advertisement

সিপিএম সূত্রেও বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বারের জোট অলিখিতই থাকবে। যৌথ ভাবে জোটের কোনও ঘোষণা হবে না। যৌথ ভাবে প্রার্থী তালিকা বা ইস্তাহারও হবে না। এমনকী, জেলা স্তরের নেতাদের মধ্যে যৌথ প্রচার, মিছিল-মিটিং হলেও দু’দলের শীর্ষ নেতারা এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রচার করার সম্ভাবনা কম। তবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে সব বিধানসভা কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস সহমতের ভিত্তিতে নির্দল প্রার্থী দেওয়া হবে, সেখানে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’-এর ছাতার তলায় এক মঞ্চে দেখা যেতে পারে উভয় দলের নেতাদের। যেমনটা ইদানীং রাজ্যে মান্নান-বিকাশ ভট্টাচার্যেরা বিষয়-ভিত্তিতে করছেন। প্রচারের কৌশল নিয়েও আজ রাহুলের সঙ্গে ইয়েচুরির আলোচনা হয়েছে বলে খবর। ইয়েচুরি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমার সঙ্গে রাহুলের কোনও বৈঠক হয়নি। সংসদের মধ্যে দু’জন সাংসদ মুখোমুখি হয়েই যায়। আজ ঘটনাচক্রে তিন বার ওঁর সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছি। এক বার টয়লেটেও দেখা হয়েছে!’’

কংগ্রেস সূত্রে খবর, আসন নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরুর আগে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনায় বসতে পারেন রাহুল। আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে তাঁরা কী প্রস্তুতি নিয়েছেন, সে ব্যাপারে জানতে চাইবেন তিনি। দলীয় সহ-সভাপতির সঙ্গে সম্ভাব্য সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আজ সন্ধ্যায় প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বাড়িতে এক প্রস্ত আলোচনায় বসেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নান, আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী, সোমেন মিত্র-সহ প্রদেশ নেতারা। জেলাওয়াড়ি কোন কোন আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী দেওয়ার মতো শক্তি রয়েছে, তার তালিকা ইতিমধ্যেই জেলা সভাপতিদের কাছে চেয়েছেন অধীর। আজকের আলোচনায় তিনি জেলা সভাপতিদের মতই তুলে ধরেন।

আবার বৈঠকে ডালুবাবু বলেন, গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের জেতা সবক’টি আসনেই তাঁদের প্রার্থী দেওয়া উচিত। তাঁর জেলা মালদহে সেই সূত্র বাস্তবায়নের জন্য তিনি স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে এর পরেও কয়েকটা আসন নিজেদের মধ্যে বদলাবদলি করে নেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব নমনীয়। অধীরও এ দিন বলেছেন, ‘‘বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে আসন ভাগাভাগি করাটাই আমাদের লক্ষ্য।’’

তবে রাহুল-ইয়েচুরি প্রকাশ্যে কিছু বলুন বা না বলুন, দু’দলের নেতাদেরই মূল লক্ষ্য, সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মানুষকে কাছে টানা। তৃণমূলের বিপরীতে জেতার মতো শক্তিশালী প্রার্থী দেখলে তাঁরা সেই ব্যক্তিকেই ভোট দেবেন। লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিজেপি যত ভোট (১৭%) পেয়েছিল, সেখান থেকেও ভোট ভাঙিয়ে বাম-কংগ্রেস জোটের দিকে আনার চেষ্টা চলবে। অতীতে দীর্ঘ দিন পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসা কংগ্রেস ও বাম কর্মীদের ১০০%-ই একে অপরকে ভোট দেবেন না, এটা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি চালাচ্ছেন দু’দলের নেতারা।

বিরোধী জোটের এই তৎপরতাকে ফুৎকারে উড়িয়ে বাঁকুড়ায় রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য মন্তব্য করেছেন, ‘‘জয় আমাদের নিশ্চিত। মুখ্যমন্ত্রী কবে শপথ নেবেন, সেই দিন এখন ঠিক করছি আমরা! বাজারে এখন যা হচ্ছে, ওটা হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement