Rahul Gandhi

নেতাজির ‘মৃত্যুদিন’ ঘোষণা রাহুলের, যৌথ আক্রমণে তৃণমূল-বিজেপি, রাহুলকে ‘অর্বাচীন’ বলে তোপ ফব’র

নেতাজি জয়ন্তী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৮মিনিটে রাহুল তাঁর এক্স হ্যান্ডলে পোস্টটি করেন। তাতে নেতাজির ছবির নীচে জন্মতারিখ এবং ‘মৃত্যুর তারিখ’, দুই-ই লেখা রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৬
Share:
Rahul Gandhi mentions Nataji Subhas Chandra Bose’s date of death in social media post, Invites steep criticism from BJP and INDIA allies as well

সমাজমাধ্যমে নেতাজির ‘মৃত্যুর তারিখ’ লিখে ফের বিতর্কে রাহুল। ছবি: সংগৃহীত।

জন্মজয়ন্তীতে ‘শ্রদ্ধা’ জানাতে পোস্ট করেছিলেন সমাজমাধ্যমে। কিন্তু তাতে এমন কথা লিখলেন যে, শ্রদ্ধার বদলে ‘অপমান’ করার অভিযোগ উঠে গেল! নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৮তম জন্মবার্ষিকীতে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর পোস্টে নেতাজির ‘মৃত্যুর তারিখ’-এর উল্লেখ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। নেতাজির নিজের তৈরি দল ফরওয়ার্ড ব্লক অপমানের অভিযোগ তুলে রাহুলকে ‘অর্বাচীন’ বলে আক্রমণ করেছে। বিজেপি, তৃণমূলও রাহুলের সমালোচনায় সুর চড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অবশ্য বৃহস্পতিবার অনেক বেলা পর্যন্তও ‘দেখে উঠতে পারেননি’ রাহুলের পোস্ট।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালেও নেতাজি জয়ন্তীতে রাহুল একই কাজ করেছিলেন। সে বারও তুমুল বিতর্ক হয়েছিল।

নেতাজি জয়ন্তী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৮মিনিটে রাহুল তাঁর এক্স হ্যান্ডলে পোস্টটি করেন। তাতে নেতাজির ছবির নীচে জন্মতারিখ এবং ‘মৃত্যুর তারিখ’, দুই-ই লেখা রয়েছে। মৃত্যুদিন হিসেবে লেখা রয়েছে ১৮ অগস্ট, ১৯৪৫। অর্থাৎ, তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর তথাকথিত এবং বিতর্কিত তত্ত্বেই সিলমোহর দিয়ে দিয়েছেন রাহুল। অথচ নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান খুঁজতে গঠিত বিভিন্ন কমিশনের কোনওটিই ওই তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর কোনও অকাট্য প্রমাণ দিতে পারেনি। রাহুল তা হলে কিসের ভিত্তিতে সে তত্ত্বে সিলমোহর দিয়ে দিলেন, এই প্রশ্ন তুলেই লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে আক্রমণ শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

Advertisement

রাহুলকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তোলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘লোকসভার বিরোধী দলনেতা নিজের পোস্টে যে ভাবে নেতাজির মৃত্যুদিন ঘোষণা করে দিয়েছেন, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং দুঃখজনক। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান করার জন্য একাধিক কমিশন গঠিত হয়েছে। শেষ যে কমিশন মত দিয়েছে, তাদের মতে ওই দিনটা নেতাজির মৃত্যুদিন নয়। তার পরেও বিরোধী দলনেতার মতো পদে বসে থাকা ব্যক্তি যে কাজ করলেন, তা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। গোটা দেশের কাছে রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’

রাহুলের পোস্ট সম্পর্কে তৃণমূলের সুরও চড়া। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘নেতাজি সম্পর্কে অন্তর্ধান রহস্য কথাটা ব্যবহার করা হয়। তাইহোকুতে কোনও বিমান দুর্ঘটনা ওই দিন আদৌ ঘটেছিল কি না, তাতে আদৌ কারও মৃত্যু হয়েছিল কি না, তার কোনও প্রমাণ নেই। বরং এর পরের অনেকটা ঘটনা অকথিত রয়েছে। সুতরাং ১৯৪৫-এর ১৮ অগস্ট নেতাজির মৃত্যুদিন বলে দেওয়া কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়।’’ রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে বিজেপি যে দাবি তুলেছে, তৃণমূল কি তার সঙ্গে সহমত? কুণাল বলেন, ‘‘ক্ষমা শব্দটা ব্যবহার করছি না। তবে রাহুল গান্ধীর উচিত নিজের বক্তব্য সংশোধন করা। নেতাজি আসলে ভারতের ইতিহাসের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৩ সালে যে প্রথম আজাদ হিন্দ সরকার গঠিত হয়েছিল, নেতাজি তার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ছ’টি দেশ সেই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর একটা তারিখ এ ভাবে কোনও প্রমাণ ছাড়া কিছুতেই ঘোষণা করা যায় না। এটা বাংলা ও বাঙালি মানবে না।’’

ফরওয়ার্ড ব্লক চেয়ারম্যান নরেন চট্টোপাধ্যায় রাহুলকে ‘অর্বাচীন’ বলে আক্রমণ করেছেন। নরেনের কথায়, ‘‘নেতাজির মৃত্যুদিন সম্পর্কে কংগ্রেস আগেও বিতর্ক তৈরি করেছে। আবার করল। কংগ্রেস বরাবরই এটা করে থাকে।’’ নরেনের তোপ, ‘‘রাহুল গান্ধী অর্বাচীনের মতো মন্তব্য করেছেন। অর্বাচীন বলছি, কারণ, ওঁকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে, কী ভাবে জানলেন নেতাজি ওই দিন মারা গিয়েছিলেন, উনি উত্তর দিতে পারবেন না। প্রমাণ দেখাতে পারবেন না। পালিয়ে যাবেন। একটা সাংবিধানিক পদে বসে থাকা ব্যক্তি এত দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করলে তাঁকে অর্বাচীন ছাড়া আর কী বলা যায়?’’

রাহুলের এই সমাজমাধ্যম পোস্ট ঘোর অস্বস্তিতে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসকে। এক দিকে গান্ধী পরিবার, অন্য দিকে নেতাজি নিয়ে বাঙালির চিরন্তন আবেগ। বঙ্গ কংগ্রেসের পক্ষে অবস্থান নেওয়া কঠিন তো বটেই। ফলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার মন্তব্য এড়ানোরই চেষ্টা করেছেন। তিনি জানালেন, রাহুলের পোস্ট তাঁর ‘দেখে ওঠা হয়নি’। পোস্টে কী লেখা রয়েছে, তা জানানোর পর শুভঙ্কর তির ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন নেতাজির পরিবারের দিকে। বলেছেন, ‘‘সুগত বসু এ বিষয়ে কী বলছেন, জেনে নিন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement