পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে বোঝাপড়া হলেও কিছু আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই করতে চায় প্রদেশ কংগ্রেস। রাহুল গাঁধীকে আজ সে কথা জানিয়েছেন অধীর চৌধুরী। তবে রাহুল তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে কংগ্রেস যেখানে দুর্বল, সেখানে আসন নিয়ে যেন অযথা দরকষাকষি না হয়।
রাহুলের সঙ্গে দেখা করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জানিয়েছেন, বামেদের সঙ্গে আলোচনা ও দলে সর্বসম্মতির মধ্যে ৭৫টি আসনের তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে। আরও কিছু আসনে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে বাম নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সেই দায়িত্ব প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রকে দেওয়া হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত হয়তো কয়েকটি আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই এড়ানো সম্ভব হবে না। কেননা, ওই আসনগুলি নিয়ে বাম শিবির যেমন অনড়, তেমনই অনমনীয় রাজ্য কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা!
কংগ্রেসের জন্য জায়গা রেখে গত পরশু প্রথম পর্যায়ে ১১৬টি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিল বামফ্রন্ট। তার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কংগ্রেস প্রথম তালিকা প্রকাশ করে। তার পরেই আজ দিল্লিতে রাহুলের সঙ্গে অধীরের বৈঠক হয়। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বারো নম্বর তুঘলক রোডে পৌঁছতেই অধীরকে রাহুল বলেন, ‘‘আজ তোমায় খুশি খুশি দেখাচ্ছে যে!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হেসে বলেন, ‘‘রাজ্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এক মাস আগে আপনার সঙ্গে যখন দেখা করেছিলাম, তখনও বামেদের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে দলের কোনও কোনও স্তর থেকে প্রতিরোধ ছিল। কিন্তু এখন আর কোনও বাধা নেই। ৭৫টি আসনের তালিকা প্রকাশের পরে দল বা বাম শিবির থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও আসেনি।’’ রাহুলের কাছে অধীরের দাবি, ‘‘আসন সমঝোতা যে রকম মসৃণ ভাবে হচ্ছে, তাতে তৃণমূলের নেতারা ঘাবড়ে গিয়েছেন!’’
জোট নিয়ে তৃণমূলের উদ্বেগের কথা তিনি যে জানেন, তা নিয়ে আগেও রাজ্য নেতাদের কাছে মন্তব্য করেছিলেন রাহুল। আজ তিনি অধীরকে বলেন, ‘‘তৃণমূলের মধ্যেই প্রচুর অসন্তোষ রয়েছে শুনছি!’’ এক সময়ে রাহুল এ-ও জানতে চান, ৭৫ টি আসনের তালিকাটিই চূড়ান্ত কিনা!
অধীর রাহুলকে বলেন, গত কাল প্রদেশ নির্বাচন কমিটির বৈঠক ডেকে দলের নেতাদের তিনি জানিয়েছিলেন, ৭৫টি আসনে বামেদের সঙ্গে আপাতত সমঝোতা হয়েছে। আরও আসন নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এই সংখ্যা নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের চিন্তার কারণ নেই। চাইলে কংগ্রেস ২৯৪টি আসনেও প্রার্থী দিতে পারে। কেননা সেই এক্তিয়ার হাইকম্যান্ড দিয়ে রেখেছে। কিন্তু রাজ্য কংগ্রেসের কমবেশি সকলেই এই আসনগুলি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। জোটের আবহ ধরে রাখার ব্যাপারেও সবাই একমত। তবে এর বাইরে আরও ১০-১৫টি আসন নিয়ে রাজ্য নেতাদের দাবি রয়েছে। সেজন্য বামেদের সঙ্গে আলোচনা করতে সোমেনবাবুকে সর্বসম্মতিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হতে পারে এর মধ্যে কয়েকটি আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে।
সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের ডোমকল, হরিহরপাড়া, মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর, মালতীপুর সহ সম্ভাব্য ওই পাঁচ-ছ’টি আসনের নামও রাহুলকে জানান অধীর। প্রদেশ সভাপতির ব্যাখ্যা, ওই আসনগুলি গত বিধানসভা ভোটে বামেদের কাছে ছিল ঠিকই। কিন্তু লোকসভা ভোটে সেখানে কংগ্রেস বামেদের তুলনায় অনেক বেশি ভোট পেয়েছিল। যেমন, ডোমকলে লোকসভা ভোটে বাম প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ভোট। কিন্তু কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ৯০ হাজারের বেশি। মালদহের মালতীপুর আসন নিয়েও মৌসম বেনজির নুরদের বক্তব্য তাই। ওই বিধানসভা আসনটি আরএসপি-র কাছে থাকলেও লোকসভা ভোটে কংগ্রেস সেখানে বাম প্রার্থীর তুলনায় ৩৫ হাজার বেশি ভোট পেয়েছিল। ফলে অধীর যুক্তি দিয়েছেন, এই আসনগুলিতে কংগ্রেস প্রার্থী না দিলে তৃণমূল সুবিধা পেয়ে যেতে পারে। রাহুলকে অধীর জানান, কয়েকটি আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই যে হতে পারে, সে ব্যাপারে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে। এ নিয়ে সীতারামের কোনও আপত্তি নেই।
রাহুল-অধীর বৈঠকের পর সন্ধ্যায় বারো নম্বর তুঘলক লেন ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, বামেদের সঙ্গে যে ভাবে আসন সমঝোতা এগোচ্ছে, তাতে রাহুল সন্তুষ্ট। তা ছাড়া রাজ্য নেতৃত্ব যে রকম সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোচ্ছেন, তা-ও ইতিবাচক। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে রাহুল এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, আরও আসনে লড়ার ব্যাপারে রাজ্য নেতারা যে আলোচনা চালাচ্ছেন, তাতে তাঁর আপত্তি নেই ঠিকই। কিন্তু দেখতে হবে, সেঞ্চুরি হাঁকাতে গিয়ে যেন স্ট্রাইক রেট পড়ে না যায়! বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গে যে আসনে কংগ্রেসের জনভিত্তি দুর্বল সেখানে জোর করে প্রার্থী দিয়ে শক্তি খরচ করে লাভ নেই।
প্রশ্ন হল, আসনের কথা জানালেও প্রার্থী তালিকা কবে ঘোষণা করবে কংগ্রেস? জবাবে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসিসাধারণ সম্পাদক সি পি জোশীবলেন, ‘‘প্রার্থী তালিকা বাছাইয়ের জন্য প্রদেশ নির্বাচন কমিটির বৈঠক এখনও হয়নি। মোটামুটি ভাবে আসনের ভিত্তিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নিয়ে রাজ্য নেতারা কিছুটা আলোচনা করেই রেখেছেন। ওই তালিকা হাইকম্যান্ডের কাছে পাঠানোর পরে প্রার্থী ঘোষণার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হয়ে যাবে।’’