আহত: শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে মণিকুমার তামাঙ্গ। —নিজস্ব চিত্র।
দলের কট্টরপন্থীদের সামলে আন্দোলনের রাশ হাতে রাখতে ঘাম ছুটছে মোর্চা নেতাদের।
সব ক্ষেত্রে যে তাঁরা পারছেন, তা নয়। তাই বৃহস্পতিবার দীর্ঘ সর্বদল বৈঠকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলা হলেও সেই রাতেই আক্রান্ত হল পুলিশ। হামলা, ভাঙচুর, পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটল। বেগতিক দেখে শুক্রবারই দলীয় বৈঠকে মোর্চার নেতারা নানা ব্লকে বার্তা পাঠান, কেউ যেন হিংসার পথে না যায়।
কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে? অভিযোগ, মোর্চার কয়েক জন সমর্থক রংলি রংলিওট থানার পুলিশকে আক্রমণ করেন। একটি ভ্যান ভাঙচুর করা হয়। খুকুরি দিয়ে কোপানো হয় পুলিশকে। কেড়ে নেওয়া হয় তাদের অস্ত্রও। পরে অবশ্য গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র নরবুজি লামা দাবি করেন, বৃহস্পতিবার রাতে রংলি রংলিওট থানার পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছিল। সেই সময়ে হঠাৎ এক মহিলার আর্ত চিৎকার শোনা যায়। সেই শব্দ আশপাশের বাসিন্দারা জড়ো হয়ে পুলিশের উপরে চড়াও হন। তখনই ভ্যান ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। তাঁর আরও বক্তব্য, পুলিশ যে অস্ত্র ফেলে পালিয়েছিল, মোর্চা নেতৃত্বের নির্দেশে শুক্রবার সেগুলি এলাকার চা বাগানের ম্যানেজারের মাধ্যমে পুলিশকে আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নরবুজি জোরের সঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা কোথাও হিংসাত্মক কার্যকলাপ সমর্থন করি না।’’
কিন্তু হিংসাত্মক ঘটনা এখানেই শেষ নয়। মোর্চা নেতারা কয়েক জন একান্তে মানছেন, তাঁরা বারবার বলা সত্ত্বেও হামলা বন্ধ হচ্ছে না। যেমন, বৃহস্পতিবার মিরিকে জিটিএ-র নির্মাণ শাখা, টুং পঞ্চায়েত অফিস ও মিরিক পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মণিকুমার তামাঙ্গ ওরফে জিম্বার বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুন ধরানো হয়েছে। জিম্বার ডান চোখ-সহ শরীরের একাংশ ঝলসে গিয়েছে। তিনি বর্তমানে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন।
তাই মুখে যা-ই বলুন, দলের কট্টরপন্থীদের সামলাতে নরবুজি লামাদের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। এর মধ্যেই শরীরে টিউবলাইট ভেঙে রক্তাক্ত হয়ে মিছিল করেছেন কট্টরপন্থীরা। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রয়োজনে আমরণ অনশন বা গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহনন। বৃহস্পতিবার সর্বদল বৈঠকের সময়ে বাইরে বসে ক্রমাগত স্লোগান দিয়ে গিয়েছেন, বন্ধ তোলা যাবে না।
অনেকে বলছেন, কট্টরপন্থীদের হাতে আন্দোলনের রাশ চলে যেতে পারে, এই আশঙ্কাতেই গোপন ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে বিমল গুরুঙ্গকে। কারণ, তিনি জানেন, রাশ একবার বেরিয়ে গেলে কী দশা হতে পারে। তিনি এ-ও জানেন, আন্দোলনে ভাঙচুর-হাঙ্গামা বা পুলিশ আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। তখন প্রশাসন চেপে ধরার সুযোগ পেয়ে যাবে।
সুযোগ বুঝে গুরুঙ্গদের উপরে চাপ বাড়াচ্ছেন রাজেন মুখিয়া, বিন্নি শর্মাদের মতো পাহাড়ের তৃণমূল নেতারাও। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা পাহাড়ের মানুষ। জিম্বা, অনিকেত ছেত্রী গোর্খা। আমাদের উপরে হামলা করলে যদি গোর্খাল্যান্ড হয়ে যায়, তা হলে মোর্চা সেটাই করুক। কিন্তু পাহাড়বাসী তা মানতে পারবেন না।’’