উন্নয়নের একাধিক প্রতিশ্রুতি দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।—ফাইল চিত্র।
গোলমালের ঘটনার জেরে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পরে শনিবারই খুলল দাড়িভিট হাইস্কুল। আর তার কিছুক্ষণ পরেই দাড়িভিট পৌঁছলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। এ দিনের সফরে তিনি ওই এলাকায় উন্নয়নের একাধিক প্রতিশ্রুতিও দিলেন।
এর আগে দাড়িভিটে মন্ত্রী গোলাম রব্বানি, বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়াল নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। এরই মধ্যে দাড়িভিট কাণ্ডকে সামনে রেখে পরপর রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে জমি শক্ত করেছে বিজেপি। এই অবস্থায় স্কুল খোলার দিনই দাড়িভিটে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর যাওয়া আলাদা মাত্রা পেয়েছে।
তবে এ দিন নিহতদের বাড়ি যাননি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। প্রথমে তিনি যান দলঞ্চা নদীর ধারে। নদীর ধারে বাঁশের সাঁকোতে উঠে মন্ত্রী আধিকারিকদের নির্দেশ দেন এই সেতু পাকা করার জন্য। দু’মাসের মধ্যে কাজ শুরু করার কথাও বলেন তিনি। বাসিন্দাদের একাংশ ওই এলাকায় শ্মশানঘাটের দাবি জানান। সেটা করারও আশ্বাস দেন মন্ত্রী। এলাকার উন্নয়নে আরও কিছু প্রয়োজন হলে তিনি সাহায্য করবেন বলেও জানান মন্ত্রী। বাসিন্দাদের কয়েকজন রবীন্দ্রনাথবাবুকে স্কুলে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি যাননি। তবে তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের জন্য কোনও উন্নয়নের দাবি জানালে ব্যবস্থা নেব।’’
বিরোধী দলগুলো অবশ্য প্রশ্ন তুলেছে এতদিন পরে হঠাৎ কেন দাড়িভিট এলাকার উন্নয়নের দিকে নজর পড়ল রবীন্দ্রনাথবাবুর।
যদিও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর কথায়, ‘‘সরকারি কর্মসূচিতে জেলা সফরে এসেছি। কোথায় কী খামতি রয়েছে, কী উন্নয়ন দরকার তা দেখতে। স্থানীয় বিধায়ক এবং মন্ত্রী আমাকে জানান দাড়িভিটে একটি সেতু দরকার। তাই এসেছি দেখতে। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।’’ সেতুর কাজের সঙ্গে শ্মশান ঘাট নির্মাণ করার জন্য দফতরের সচিব বরুণ রায়কে নির্দেশ দেন। এ দিন মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন গোয়ালপোখরের বিধায়ক তথা রাজ্যের পঞ্চায়েত উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানি ও ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়াল। ছিলেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরাও।
দাড়িভিট হাইস্কুলের পাশেই দলঞ্চা সেতু। ওই নদীর তীরে নিহত রাজেশ এবং তাপসের দেহ কবর দেওয়া হয়েছে। দীর্ধ দিন ধরেই ওই এলাকায় সেতুর দাবি করেছেন বাসিন্দারা। কিন্তু কোনও ফল হয়নি বলেই অভিযোগ। গত ২০ সেপ্টেম্বর দাড়িভিট হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে, গুলি-বোমা চলে। গুলিতে নিহত হন রাজেশ সরকার এবং তাপস বর্মণ। তারপর থেকে এলাকায় উত্তেজনা থাকায় শাসকদলের নেতা মন্ত্রীরা যেতে পারেননি। ঘটনার পরে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী তথা উত্তর দিনাজপুর জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী ইসলামপুরে দু’বার সভা করেছেন। কিন্ত দাড়িভিট যাননি। শনিবার উত্তর দিনাজপুর জেলা সফরে এসে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী দাড়িভিট গেলেন উন্নয়নের বার্তা নিয়ে। এর পিছনে রাজনীতি দেখছেন বিরোধীরা।
নিহতদের বাড়ি এ দিন গেলেন না কেন? উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, এই সফর সরকারি। প্রয়োজনে আবার আসবেন, নিহতদের বাড়ি যাবেন।
মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর বাসিন্দাদের একাংশ বলেন, ‘‘দাড়িভিটের ক্ষোভ শান্ত করতে এখন সকলেই তৎপর। রাজনৈতিক মহলের অভিমত দাড়িভিট কাণ্ডে শাসক দল কার্যত ব্যাকফুটে। ফলে দাড়িভিটের রাশ নিজেদের হাতে নিতে উন্নয়নের বার্তায় ভরসা করছে তারা। বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী বলেনে, ‘‘এখন অনেক কিছুই করতে চাইবে শাসক দল। মানুষ সবই বুঝছেন। নিহতদের পরিবারের দাবির বিষয়টি তারা দেখুন।’’