Doctors protest on R G Kar Incident

জেলায় জেলায় ডাক্তারদের আন্দোলন অব্যাহত, কোথাও টিকিট কেটেও চিকিৎসা হল না, কোথাও স্বল্প বিরতি

জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ এবং সরকারি হাসপাতালগুলিতেও কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকেরা। যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক চিকিৎসা পরিষেবায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৪ ১৪:১২
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতি পালনের ডাক দিয়েছে ২১টি হাসপাতাল। এর মধ্যে কলকাতার সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল তো রয়েইছে, পাশাপাশি জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ এবং সরকারি হাসপাতালগুলিতেও কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকেরা। যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক চিকিৎসা পরিষেবায়। বহির্বিভাগের চিকিৎসা বিপর্যস্ত হয়েছে অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে। জরুরি বিভাগেও চিকিৎসকের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা। এর মধ্যে কিছু হাসপাতালে মঙ্গলবার সকালে স্বাভাবিক পরিষেবা শুরু হলেও জুনিয়র ডাক্তারদের চাপে তা মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। হাসপাতালে পৌঁছে আতান্তরে পড়েন রোগী এবং তাঁদের পরিবার। তবে কিছু কিছু হাসপাতালে রোগীদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে কর্মবিরতিতে রাশ টানা হয়েছে। এক ঘণ্টার প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করার পরে আবার স্বাভাবিক হয়েছে পরিষেবা।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনা

বসিরহাটে স্বাস্থ্য জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে সোমবারও স্বাভাবিক পরিষেবা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে সেখানে নার্স এবং চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলেছেন, ‘‘আমাদের এক সহকর্মীকে খুনের প্রতিবাদে আমরা ১ ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতির ডাক দিতে বাধ্য হয়েছি।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁরা বলেন, ‘‘বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার সীমান্ত থেকে সুন্দরবনে দশটি ব্লকের প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। যে কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হাসপাতালের সমস্ত বিভাগে পরিষেবা বন্ধ রেখে এক ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতি পালন করব। তার পরে আবার পরিষেবা চালু হবে।’’ মঙ্গলবার বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালেও চিকিৎসকেরা এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করে হাসপাতাল চত্বরে প্রতিবাদ জানান।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনা

আইটডোর বন্ধ। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে অবস্থান বিক্ষোভ। দাবি, অবিলম্বে ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত অপরাধীরা না ধরা পড়বে, তত দিন আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা।

হাওড়া

আন্দোলন অব্যাহত মহেশ ভট্টাচার্য হোমিয়োপ্যাথি কলেজে। সোমবারের পর মঙ্গলবারও ফের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বুধবার সকাল এগারোটা থেকে হাসপাতালের গেটের সামনে অবস্থানে বসেন তাঁরা। মৃত চিকিৎসকের জন্য সুবিচার এবং নিজদের নিরাপত্তার দাবিতে স্লোগানও তোলেন।

হুগলি

চুঁচুড়া ইমামবারা হাসপাতালে ওপিডি-তে কাজ করছেন না জুনিয়র চিকিৎসকরা। সিনিয়ররা পরিষেবা চালু রেখেছেন। মঙ্গলবার বেলা এগারোটা থেকে বারোটা পর্যন্ত ‘পেন ডাউন’ করেন হাসপাতালের সব চিকিৎসক। তাতে যোগ দেন নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। মঙ্গলবারও কালো ব্যাজ পরে হাতে পোস্টার নিয়ে স্লোগান দেন। আন্দোলনকারীরা বলেন, আরজি করে যা ঘটেছে, তাকে জঘন্য অপরাধ বললেও কম বলা হবে। দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে। হাসপাতালের চিকিৎসক পার্থ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘এমন অপরাধের প্রতিবাদ না হলে মানুষ হিসাবে আমাদের লজ্জা।’’

মেদিনীপুর

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মবিরতি চলছে। ইমার্জেন্সিতে নেই জুনিয়ার ডাক্তারেরা। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে সকাল থেকেই শুরু হয়েছে আন্দোলন।

মুর্শিদাবাদ

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সকাল থেকে আউটডোর বিভাগে চিকিৎসার জন্য রোগীদের টিকিট দেওয়া শুরু হলেও পরে কয়েক জন জুনিয়র চিকিৎসক এসে কাউন্টার বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। এতে বিপাকে পড়েন দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগী এবং তাঁদের পরিবারগুলি। রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, সকাল ৯টা নাগাদ কয়েক জন জুনিয়র চিকিৎসক এসে টিকিট কাউন্টার বন্ধ করে দিতে বলেন। তত ক্ষণে ২০০টি টিকিট দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরাও চিকিৎসককে দেখাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছড়ায়। রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি শুরু করলেও সিনিয়র ডাক্তারেরা পরিষেবা দিচ্ছেন। তবে আন্দোলনের কারণে বহু রোগীই যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

বাঁকুড়া

বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক পড়ুয়াদের আন্দোলন চতুর্থ দিনেও অব্যাহত। সকাল থেকে মেডিক্যাল কলেজের মূল বিল্ডিং-এক সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। আউটডোর ও ইনডোর পরিষেবায় প্রভাব পড়েছে। তবে সিনিয়র চিকিৎসকদের দিয়ে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি পরিষেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। পড়ুয়াদের দাবি, কোন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে কোথায় বদলি করা হল, তা তাঁদের বিচার্য বিষয় নয়, তাঁরা চান দ্রুত দোষীরা শাস্তি পাক এবং বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে পরিকাঠামোগত যে সব সমস্যা রয়েছে, তার দ্রুত সমাধান করুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পুরুলিয়া

নিরাপত্তার দাবিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করল পুরুলিয়া গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়ারা। মেডিক্যাল কলেজের মূল দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা। বন্ধ রয়েছে আউটডোর পরিষেবা, বন্ধ ডাক্তারি পঠনপাঠন । ডাক্তারি পড়ুয়াদের দাবি, পুরুলিয়া গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের হাতুয়াড়া ক্যাম্পাস এবং পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের ক্যাম্পাসের মাঝে দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। এই দুই ক্যাম্পাসে রাতে যাতায়াত বিপজ্জনক। বিশেষ করে মহিলা ডাক্তারদের নিরাপত্তার পক্ষে এই দূরত্ব সমস্যার। তাই অবিলম্বে সদর হাসপাতালের ক্যাম্পাসের যাবতীয় বিভাগ নবগঠিত হাতুয়াড়া ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষ যত ক্ষণ না লিখিত ভাবে এই দাবি মানার আশ্বাস দিচ্ছেন, তত ক্ষণ অবস্থান প্রতিবাদ চলবে বলে জানান ছাত্রছাত্রীরা।

জলপাইগুড়ি

বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলে মিছিল করে পথে নামেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে শুরু হয় মিছিল। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বর ঘুরে প্রধান সড়কে পৌঁছে মিছিল শেষ হয়। জুনিয়র চিকিৎসকেরা মিছিলে যোগ দেওয়ায় ব্যাহত হয় চিকিৎসা পরিষেবা। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘জরুরি বিভাগ চলছে , বহির্বিভাগ সিনিয়র ডাক্তারেরা চালাচ্ছেন। জুনিয়র ডাক্তারেরা এখনও কাজে যোগ দেননি। তাই এ ভাবেই যতটুকু পরিষেবা দেওয়া যায়, আমরা দিচ্ছি।’’ জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন। বহির্বিভাগের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান করছেন জুনিয়র ডাক্তার-সহ ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে জরুরি বিভাগে রোগী পরিষেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে। বহির্বিভাগ সামলাচ্ছেন সিনিয়র ডাক্তারেরা।

উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর

চিকিৎসক না আসায় বালুরঘাট হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে এক বালকের। সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ তাকে গুরুতর জখম অবস্থায় ভর্তি করানো হলেও সকাল ৭টা পর্যন্ত কোনও চিকিৎসক দেখতে আসেননি। তবে এর সঙ্গে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির সম্পর্ক নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। বালুরঘাট হাসপাতালে চিকিৎসকদের একাংশের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ মাঝেমাঝেই ওঠে। তাঁরা অন ডিউটি থাকলেও হাসপাতালে থাকেন না। বার বার ডাকা হলেও তাঁরা সঠিক সময়ে এসে হাসপাতালে পৌঁছন না।

কোচবিহার

মঙ্গলবার কোনও কর্মবিরতি বা বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement