গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
ডেকেছিলেন সাংবাদিক বৈঠক। অথচ সাংবাদিকদের প্রায় কোনও প্রশ্নেরই জবাব দিলেন না রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। বদলে স্বাস্থ্য ভবনে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে একটি লিখিত বিবৃতি পাঠ করে গেলেন নারায়ণ। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কম-বেশি একই কথা বলে চার মিনিটেরও কিছু কম সময়ে বৈঠক শেষ করে চলে গেলেন স্বাস্থ্যসচিব। এই অতি স্বল্পদৈর্ঘ্যের সাংবাদিক বৈঠক নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকে এমনও বলছেন, বৈঠকে যা বলেছেন স্বাস্থ্যসচিব, তার অধিকাংশ কথাই ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে। ঘটনা ঘটার চার দিন পরে এই সাংবাদিক বৈঠক তবে কেন ডাকলেন স্বাস্থ্যসচিব?
স্বাস্থ্যসচিব যা পড়লেন
স্বাস্থ্যসচিব বললেন, ‘‘আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে যা ঘটেছে, তার কড়া ভাষায় নিন্দা করছে রাজ্য সরকার। আমরা এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। কলকাতা পুলিশ কমিশনার ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টির তত্ত্ববধান করছেন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরে প্রথম দিনেই যথাযথ তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে নিশ্চিত করা হচ্ছে, আমরা অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করব। নিহত মেয়েটির বাবা-মাকে নিয়মিত তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। পুলিশের তৎপরতায় ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে মূল অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই তদন্ত প্রক্রিয়া আমাদের দেখা দ্রুততম তদন্তগুলির মধ্যে একটি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করেছি এবং তাঁদের নিশ্চিত করে এসেছি যে, ওই ঘটনার যথাযথ তদন্ত হবে এবং অপরাধীরা শাস্তি পাবে। কলকাতার পুলিশ কমিশনারও আন্দোলনকারী ডাক্তারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রবিবার। তাঁদের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়েছেন। আন্দোলনকারীরাই ওই দাবি করেছিলেন। কলেজের অধ্যক্ষ এবং সুপারকেও বদলে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার বোঝাতে চেয়েছে, এই নৃশংস ঘটনায় তারা আন্দোলনকারীদের পক্ষে রয়েছে। যদিও তার পরেও রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালগুলিতে রোগী পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।’’
স্বাস্থ্যসচিবের আবেদন
এর পরে চিকিৎসকদের উদ্দেশে একটি আবেদন করেছেন নারায়ণ। তিনি বলেন, ‘‘আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি জারি রেখেছেন রাজ্য জুড়ে বহু হাসপাতালে। সিনিয়র ডাক্তারেরা হাসপাতালগুলির বহির্বিভাগ এবং জরুরি পরিষেবা ও জরুরি বিভাগের চাপ সামলাচ্ছেন। আমরা রোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাচ্ছি কিছু কিছু হাসপাতালে জরুরি বিভাগে যথাযথ পরিষেবা না পাওয়ার। জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে আমাদের আবেদন, যে হেতু রাজ্য সরকার এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত করতে বদ্ধপরিকর এবং তার প্রমাণও ইতিমধ্যেই দিয়েছে, তাই চিকিৎসকেরা যেন রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার কাজ বন্ধ না করেন। বৃহত্তর জনস্বার্থ এবং মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তাঁরা যেন দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক করেন।
স্বাস্থ্যসচিবকে প্রশ্ন
বিবৃতি পাঠ শেষ হলে স্বাস্থ্যসচিবকে প্রশ্ন করা হয় আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বদলি নিয়ে। যদিও তার জবাব এড়িয়ে যান স্বাস্থ্যসচিব। সন্দীপের বিষয়টিকে ‘বিচারাধীন’ বলে উল্লেখ করে মন্তব্য না করার পর বাকি প্রশ্নেরও জবাব দেননি নারায়ণ।
সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কয়েক মিনিটের বিবৃতি পাঠ করলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। তাঁকে আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বদলি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি সেই প্রশ্নের জবাব তো দিলেনই না, এড়িয়ে গেলেন অন্য সব প্রশ্নও।
‘‘দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে, কর্মবিরতি প্রত্যাহার করুন!’’ আন্দোলনরত চিকিৎসকদের আর্জি জানালেন স্বাস্থ্যসচিব।
আমরা যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করছি। কিন্তু রোগীদের কথা ভেবে পরিষেবা স্বাভাবিক করতে হবে। জানালেন স্বাস্থ্যসচিব নিগম।