—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
শুরুর দিকে তবু কিছু বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ-মিছিল দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে, আর জি কর কাণ্ড নিয়ে কার্যত নিরুত্তাপ হয়েছে ‘প্রতিবাদের সন্দেশখালি’!
এ তল্লাটে কোনও ‘রাত দখল’ কর্মসূচি হয়নি। দেখা যায়নি মহালয়ার ‘ভোর দখল’ও। ন্যাজাটের একটি পুজো কমিটি প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারি অনুদান নিচ্ছে না ঠিকই, এ বাদে তেমন কোনও ব্যানার-ফেস্টুনও রাস্তাঘাটে চোখে পড়ছে না। হল কী সন্দেশখালির!
অথচ, বছরের শুরু থেকে লোকসভা ভোট পর্যন্ত দফায় দফায় সন্দেশখালির দরিদ্র আদিবাসীরা শাসক দলের চোখে চোখ রেখে, ভয় উপেক্ষা করে দীর্ঘদিনের ‘শোষণ ও অত্যাচার’-এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। মাসের পর মাস বিক্ষোভ-আন্দোলন চালিয়েছিলেন। যা গোটা রাজ্য ও দেশের নজর কেড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেই সমবেত প্রতিবাদ আর জি কর-কাণ্ডের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না কেন?
ন্যাজাট থানা এলাকায় কিছু মিছিল হয়েছে আগে। দু’একটা মিছিল হয়েছে সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম ভরকেন্দ্র বেড়মজুরেও। ব্যস, তার পরে আর কিছু নেই। দরিদ্র গ্রামবাসীদের কেউ কেউ জানান, এ নিয়ে কোনও মহলই সে ভাবে উদ্যোগী হয়নি। কলকাতার মিছিল দেখে কেউ কেউ শুরুর দিকে উৎসাহিত হয়েছিলেন। তার পরে যে যাঁর কাজে ফিরে গিয়েছেন। এক সময়কার আন্দোলনকারী এক মহিলা বলেন, “সংবাদমাধ্যমকে ফোন করেছিলাম। কেউ আসেনি আর জি কর নিয়ে ব্যস্ত থাকায়। তাই মিছিল-বিক্ষোভ করার উৎসাহ পায়নি কেউ। টিভি-র লোকজন এলে দু’এক দিন তবু বিক্ষোভ করা যেত।”
অশোক মুখোপাধ্যায় নামে ন্যাজাটের এক শিক্ষক মানছেন, ‘‘এখানে শাসক দলের এক শ্রেণির নেতার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়ে সংবাদমাধ্যমকে পাশে পেয়ে গ্রামবাসীরা বাড়তি জোর পেয়েছিলেন। তা ছাড়া, সেটা ছিল নিজেদের লড়াই। আর জি কর-কাণ্ড তা নয়। তাই আর কোনও কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে না পুজোর মুখে।” সমাজতত্ত্ববিদ অনিরুদ্ধ চৌধুরী মনে করেন, আর জি কর নিয়ে নাগরিক সমাজের আন্দোলন হচ্ছে। সন্দেশখালির আন্দোলন ঠিক নাগরিক সমাজের নয়। তাঁর কথায়, ‘‘সন্দেশখালির আন্দোলন একটি রাজনৈতিক আবর্তে হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বলা যায়, রাজনৈতিক পরিকল্পনা করে করা হয়েছিল। তখন সামনে লোকসভা নির্বাচনও ছিল। নাগরিক আন্দোলন বরাবরই সমাজের অগ্রসর শ্রেণির মাধ্যমে শুরু হয়। তা সমাজের প্রান্তিক অংশকে সচেতন করে।’’
রাজনৈতিক মহলের একাংশও মানছে, সন্দেশখালির আন্দোলনে ঝাঁঝ বেড়েছিল বিজেপি নেতৃত্ব দেওয়ায়। তাই লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রে সন্দেশখালির ‘ভূমিকন্যা’ রেখা পাত্রকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। বামেরাও প্রার্থী করেছিল এখানকার ‘ভূমিপুত্র’ নিরাপদ সর্দারকে।
সেই নিরাপদর দাবি, ‘‘সন্দেশখালির প্রান্তিক মানুষ আর জি কর নিয়ে কী চলছে, তার খবর রাখছেন। কিন্তু শহরের মানুষের মতো পথে নেমে সরব হতে পারছেন না।’’ রেখার দাবি, ‘‘সন্দেশখালির মানুষের মনে অভয়া-কাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ আছে। আমরাও পথে আছি। তবে তা সংবাদমাধ্যমের প্রচারের আলো পায়নি।’’ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর গলায় আবার অন্য সুর। তাঁর দাবি, ‘‘এখানকার মানুষের নৈতিক সমর্থন হয়তো আছে। তবে, জুনিয়র চিকিৎসকেরা যে ভাবে কর্মবিরতি করছেন, তাতে অনেক গরিব মানুষ সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তাতে তাঁরা ক্ষুব্ধ।”
সেই ক্ষোভের কথা ‘দ্বীপভূমি’তে কানে আসেনি।