প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ঘরের অন্দরেই। প্রতীকী ছবি।
বলা হয়েছিল, সাময়িক ব্যবস্থা। তার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে ৬ মাসে পা দিলেও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দুই জেলা সম্পাদককে বদল করে নতুন মুখ আনতে পারেনি সিপিএম। বাম দলে ‘বেনজির’ এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ঘরের অন্দরেই।
কান্নুরে গত এপ্রিলে সিপিএমের ২৩তম পার্টি কংগ্রেসে বাংলা থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলেন শমীক লাহিড়ী ও সুমিত দে। তার আগে জেলা সম্মেলন থেকে তাঁরা যথাক্রমে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলার সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন। জেলা সম্পাদক হিসেবে তাঁরা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তো বটেই, এখন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতেও আছেন। সিপিএমের সাংগঠনিক নিয়মে একসঙ্গে তিন স্তরের কমিটিতে থাকা যায় না। দলের অন্দরে আলোচনা হয়েছিল, শমীক ও সুমিত জেলার দায়িত্ব থেকে সরে যাবেন। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের কমিটিতে তা হলে আর তাঁদের কাজ করতে কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু পরিবর্ত দুই জেলা সম্পাদক বাছতে এখনও পদক্ষেপ হয়নি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের তরফে।
বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতা হারানোর পরের বছরেই কিছুটা চমক দিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবকে দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক করা হয়েছিল। তখন তিনি কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। গৌতমের জন্য পলিটবুরো থেকে বিশেষ অনুমোদন নিয়েছিলেন বিমান বসুরা। বলা হয়েছিল, বিশেষ পরিস্থিতিতে এই ‘ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত’। এখন ১০ বছর পরে সেই দ্রুত ব্যবস্থা কেন সাংগঠনিক ভাবে হল না, তা নিয়ে দলের ভিতরে প্রশ্ন আছে। দলের এক পলিটবুরো সদস্যের মতে, ‘‘গৌতম দেব আগেই উচ্চতর কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁকে জেলার দায়িত্ব দেওয়া অনেকটাই প্রথা-ভাঙা সিদ্ধান্ত ছিল। তখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদনও নেওয়া হয়েছিল দ্রুত। দুই জেলা সম্পাদকের উচ্চতর কমিটিতে যাওয়া সেই রকম প্রথা ভাঙা নয়। কিন্তু এক সঙ্গে ত্রিস্তর কমিটিতে যে হেতু থাকা যায় না, তাই বিকল্প ব্যবস্থা এত দিনে করে ফেলা উচিত ছিল।’’
সিপিএম সূত্রের খবর, শমীক ও সুমিতের পরিবর্ত জেলা সম্পাদক হিসেবে কাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেই রকম কিছু নাম নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়ে গিয়েছিল। পার্টি কংগ্রেসের পরে প্রথমে ঠিক হয়, আপাতত ওই দু’জনই কাজ চালাবেন। কিছু দিনের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কিন্তু তার পরে দুই জেলা কমিটিরই একাধিক বৈঠক হয়ে গিয়েছে। এই জটিলতা কাটানোর কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। দুই জেলা সম্পাদকই অবশ্য দলকে জানিয়ে রেখেছেন, রাজ্য নেতৃত্ব যখন বলবেন, নিয়ম মেনে তাঁরা জেলার দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন।
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘সমস্যা একটা রয়ে গিয়েছে। আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যেই বিষয়টার নিষ্পত্তি হবে।’’