(বাঁ দিকে) মাটিতে বসে খাচ্ছেন কর্মীরা। নেতানেত্রীদের জন্য চেয়ার (ডান দিকে)। চাপড়ায় তৃণমূলের ইফতারে। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার সভায় বৈষ্যমের অভিযোগ উঠল দলের অন্দরেই। শনিবার নদিয়ার চাপড়ায় ওই ইফতারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ ছড়ায়। জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাশিস রায় বলেন, “স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে দেখা হবে, ঠিক কী ঘটেছে।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই ইফতারে নেতা ও সাধারণ কর্মীদের জন্য ছিল দু’ধরনের ব্যবস্থা। সাধারণ কর্মীদের বসতে দেওয়া হয় মাটিতে। তাঁদের পাতে দেওয়া হয়েছিল লুচি, ছোলার ডাল। পাশেই নেতা ও বিধায়কদের চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে খাওয়ানো হয় লুচি ও দেশি মুরগির মাংস। ইফতারে এমন বিভাজন দেখে উপস্থিত দলীয় কর্মীদের অনেকে অপমানিত বোধ করেন। সমাজমাধ্যমে সরবও হন।
চাপড়ার ইসলামগঞ্জ হাই মাদ্রাসার মাঠে শনিবার ইফতারের আয়োজন করেন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের ব্লক নেতৃত্ব। সেখানে চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বিধায়ক ও জেলা-নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আমন্ত্রিত ছিলেন ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের হাজার দুয়েক কর্মীও।
ইফতারে উপস্থিত কর্মীদের একটা বড় অংশের দাবি, মাঠে মাটিতে ত্রিপল পেতে এক-এক সারিতে এক-একটা পঞ্চায়েতের কর্মীদের বসার ব্যবস্থা ছিল। সেখানে কর্মীদের পাতে দেওয়া হয়েছে লুচি, ছোলার ডাল, তিন-চার রকম ফল, মিষ্টি ও শরবত। অথচ, ঠিক পাশেই নেতা-বিধায়কদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে চেয়ার-টেবিলে। টেবিলে নীল-সাদা কাপড়ের চাদর। সাদা প্লেটে কচুরি, ছোলার ডাল, ফল, মিষ্টি আর কাচের গেলাসে শরবত। সাদা বাটিতে দেশি মুরগির ঠ্যাং, বোতলবন্দি জল।
দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এই বিভাজন ভাল চোখে দেখছেন না তৃণমূলের জেলা নেতাদেরও একাংশ। এক নেতার কথায়, “ইফতার পার্টিতে এমন বৈষম্য-বিভাজন মেনে নেওয়া যায় না। এতে যেমন সাম্যের আদর্শ অমান্য করা হয়, অপমান করা হয় দলের কর্মীদেরও।” একাধিক নেতার বক্তব্য, দলের সাধারণ নেতা-কর্মীরাই রোদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে সারা বছর মাঠে থাকেন। শীর্ষ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বার বার কর্মীদের আলাদা গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। সেখানে আমন্ত্রণ করে এমন ব্যবহার অপমানের শামিল। ইফতারের অন্যতম আয়োজক তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক জানালি মোল্লার অবশ্য দাবি, “এমন কিছু ঘটেনি।” তিনি বলেন, “সবার জন্য সমান আয়োজন করেছিলাম। কিছু নেতা ও বিধায়ক অসুস্থ। মাটিতে বসতে পারেন না। তাই তাঁদের জন্য চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা হয়েছিল।”
ইফতারে ছিলেন চাপড়ার বিধায়ক তথা তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান। তাঁর কথায়, “যাঁরা অসুস্থ, তাঁদের পাশাপাশি মহিলাদের জন্যও চেয়ারে বসার ব্যবস্থা হয়েছিল। আর মাংস সবার জন্যই ছিল। যাঁরা খেতে চেয়েছেন, তাঁদের দেওয়া হয়েছে। যাঁরা চাননি, তাঁদের দেওয়া হয়নি।”