প্রশ্নবিদ্ধ সিবিআই
RG Kar Case Verdict

আশ্বাসই সার, কী হল তথ্যপ্রমাণ লোপাটের তদন্তে

কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার সঞ্জয়কে নিম্ন আদালত দোষী সাব্যস্ত করার দিনেও স্রেফ মামলার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে বলে সিবিআই কর্তাদের সূত্রে দাবি উঠে আসছে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:০৮
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

সরকারি হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণই নয়, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের তদন্ত চালানোর কথাও বলে আসছিল সিবিআই। আর জি কর-কাণ্ডের পাঁচ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় শনিবার দোষী সাব্যস্ত হলেও প্রমাণ লোপাটের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সন্দেহ জনমানসে গেঁথে থাকল।

Advertisement

কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার সঞ্জয়কে নিম্ন আদালত দোষী সাব্যস্ত করার দিনেও স্রেফ মামলার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে বলে সিবিআই কর্তাদের সূত্রে দাবি উঠে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের এখনও দাবি, সিবিআই খুব তাড়াতাড়ি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করতে চলেছে। মৃতার পরিজনের কাছে এই আশ্বাস টুকুই এখনও যা হাতের পেন্সিল হয়ে আছে।

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ১৩ অগস্ট কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে মামলার তদন্তভার নেয় সিবিআই। সিবিআই সূত্রে দাবি, এর পরেই তদন্তে বিভ্রান্তি সৃষ্টির নানা অপচেষ্টা হয়েছিল বলে তথ্যপ্রমাণ উঠে আসে। কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের পক্ষে একা হাতে চিকিৎসক ছাত্রীটিকে খুন ও ধর্ষণ করা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন থেকে শুরু করে চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার কক্ষের ঘটনাস্থল নিয়েও তখন নানা প্রশ্ন উঠছিল। ঘটনা জানাজানির হওয়ার পরে মৃতদেহ যেখানে দেখা যায়, সেই সেমিনার কক্ষে তথ্যপ্রমাণ বিকৃতির অভিযোগে কলকাতা পুলিশও বিদ্ধ হয়েছিল। শিয়ালদহ আদালতের বিচার শেষে সেই সব প্রশ্নের সদুত্তর এখনও ঘোর তিমিরে। মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া সিবিআই দু’ভাগে ভাগ করে এগোচ্ছিল বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। কলকাতা পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট এবং ফরেন্সিক রিপোর্টের ভিত্তিতে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সঞ্জয় জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত করা হয়। পাশাপাশি তথ্যপ্রমাণ লোপাটের তদন্তও চলতে থাকে বলে দাবি। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, টালা থানা এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খুন-ধর্ষণের ঘটনার তথ্যপ্রমাণ লোপাটে পর পর সাক্ষ্য উঠে আসতে থাকে।

Advertisement

আদালতে সেই দাবির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরে টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে ৯০ দিনের মধ্যে সিবিআই চার্জশিট পেশ করতে না পারায় তাঁরা জামিনে রয়েছেন। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল, তার একটি ব্যাখ্যা অবশ্য সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রেই উঠে আসছে। সূত্রটির দাবি, সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণের মূল মামলা চলতে চলতে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে মূল মামলাটির অগ্রগতি ধাক্কা খেত।

এখনও সঞ্জয় ছাড়া কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা না-গেলেও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের আনুষঙ্গিক অপচেষ্টার তদন্ত বন্ধ নেই বলেই সিবিআই সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। সিবিআইয়ের কর্তাদের সূত্রে দাবি, আর জি করের ডাক্তার ছাত্রীর মৃত্যু জানাজানির দিন সকাল (৯ অগস্ট) থেকেই তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চক্রান্তে টালা থানা এবং আর জি কর হাসপাতালে ইচ্ছাকৃত ভাবে নানা ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। তার একের পর এক সূত্র পাওয়া যায় বলেও দাবি। সেই সব সূত্র কবে স্পষ্ট আকার নেবে বা আদালতে পেশ করা হবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই প্রশ্নই এখন তীব্র হচ্ছে। সিবিআই সূত্রে এত দিন প্রমাণ লোপাটের নেপথ্যে নানা প্রভাবশালী যোগের কথাও উঠে আসে। যড়যন্ত্রের সেই পর্দা ফাঁস, কবে কী ভাবে ঘটবে— তার উত্তর এখনও অধরা।

তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, মৃত্যুর ঘটনার নথি বিকৃতির পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিকৃত করারও চেষ্টা হয়। সিসি ক্যামেরার ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিয়ো রেকর্ডার) বিকৃত করার তথ্যপ্রমাণ মিলেছে বলেও তখন থেকেই তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। টালা থানা এবং আর জি করের ডিভিআর একাধিক বার নানা কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। সিবিআই সূত্রে দাবি, সেই ফরেন্সিক রিপোর্টেও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অপচেষ্টার নানা প্রমাণ হাতে আসে। কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির রিপোর্টের ভিত্তিতে আর জি কর হাসপাতালেকয়েক জন পদাধিকারী এবং টালা থানার কয়েক জন পুলিশকর্মীকে বার বার জিজ্ঞাসাবাদও চালিয়ে যায় সিবিআই।

ধর্ষণ ও খুনে সরাসরি জড়িত না থাকলেও একাধিক ব্যক্তি পরোক্ষ ভাবে অপরাধ ধামাচাপায় জড়িত বলে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়। ফরেন্সিক রিপোর্ট ও নানা জনের বয়ানের ভিত্তিতে এই তথ্যপ্রমাণ মেলার দাবি উঠে আসে। সিবিআই সূত্রে দাবি, মামলার প্রথম ধাপের বিচার প্রক্রিয়া এবং সাজা ঘোষণা শেষ হওয়ার পরেই সন্দীপ ও অভিজিতের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হবে। তার পরও সাম্প্রতিক তদন্তে উঠে আসা আরও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইঙ্গিতেরপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রক্রিয়া চালু থাকবে। আদালতে সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করার পরে সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত শুধু বলেন, ‘‘ওই মামলায় সঞ্জয়ের জড়িত থাকার সমস্ত তথ্যপ্রমাণ এবং সাক্ষ্য আদালতে পেশ করা হয়েছিল। অভিযুক্তের আইনজীবীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সব জবাব বিচারকের সামনে পেশ করা হয়। ওই সব তথ্যের ভিত্তিতে সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। সঞ্জয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে বলে বিচারক জানিয়েছেন।’’ আদালত সূত্রে খবর, নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার পরিবারের তরফে মামলার রায় ঘোষণা স্থগিত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু শীর্ষ আদালত তাতে সাড়া দেয়নি। তবে বিচার প্রক্রিয়ার নথিতে মৃতার পরিবারের তরফে ওই আবেদন নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে এ দিন বিচারক জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement