CPM

রাস্তার ঝাঁঝ হঠাৎ উধাও কেন, প্রশ্ন সিপিএমেই

সিপিএমের অন্দরে প্রশ্ন বাড়ছে লোকসভা ভোটের পরে দলের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে। ভোটের আগে এবং ভোটের প্রচারে দলের যে তরুণ বাহিনী নজর কাড়ছিল, তাদের আর রাস্তায় প্রায় দেখাই মিলছে না!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫৮
Share:

ডিওয়াইএফআইয়ের মুখপত্রের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানে সিপিএমের যুব সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। বিরাটিতে। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যের প্রশাসনিক উদ্যোগে ‘জবরদখল’ উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে তখন। যার কোপে পড়েছেন হকারেরা। সেই সময়ে ইজ়রায়েলের হামলার প্রতিবাদে এবং প্যালেস্তাইনের সমর্থনে শহরে মিছিল ছিল বামফ্রন্টের। পুলিশের বাধায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্র পর্যন্ত বাম মিছিল যেতে পারেনি। গ্র্যান্ড হোটেলের কাছে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। সিপিএমের এক নেতার প্রশ্ন, ‘‘নিউ মার্কেট, গ্র্যান্ড হোটেল চত্বরে উচ্ছেদের মুখে থাকা হকারেরা দাঁড়িয়ে দেখলেন, প্যালেস্তাইনের জন্য মিছিল করছে বামেরা!’’

Advertisement

ধর্মতলা চত্বরেই ভিক্টোরিয়া হাউজ়ের সামনে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, সিইএসসি-র মালিক রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে নির্বাচনী বন্ডে চাঁদা দিয়েছেন। এখন শহরবাসীকে বাড়তি বিদ্যুতের বিল ধরিয়ে টাকা উসুল করা হচ্ছে! বর্ধিত বিল প্রত্যাহার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন শুভেন্দু। সিপিএমের অন্দরে প্রশ্ন, যে বিজেপি নির্বাচনী বন্ডের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী, তাদের নেতার মুখে এই কথা শুনতে হচ্ছে! আর যে সিপিএম নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে এবং বাড়তি বিদ্যুৎ মাসুল নিয়ে গোড়া থেকে সরব, তাদের তেমন রাস্তায় দেখাই যাচ্ছে না!

দু’টো ঘটনা জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এই রকম একের পর এক ঘটনা জুড়েই সিপিএমের অন্দরে প্রশ্ন বাড়ছে লোকসভা ভোটের পরে দলের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে। ভোটের আগে এবং ভোটের প্রচারে দলের যে তরুণ বাহিনী নজর কাড়ছিল, তাদের আর রাস্তায় প্রায় দেখাই মিলছে না! দলের একাংশের আক্ষেপ, নির্বাচনে হার-জিত থাক‌েই। লোকসভা ভোটে রাজ্যে সিপিএম দারুণ কিছু ফল করবে, এমন প্রত্যাশাও ছিল না। তা হলে কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন একের পর এর সাধারণ মানুষের সমস্যা সামনে পেয়েও হাতছাড়া করবে কেন? রাজ্য ভাগের নানা দাবি এবং হিন্দুত্বের জিগির তুলে বিজেপি যখন ‘সঙ্কীর্ণতাবাদী’ অবস্থান নিচ্ছে, সেই সময়ে বিরোধী পরিসরে বামেদের ‘শিথিলতা’য় প্রশ্ন উঠছে নানা মহলেই। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, ভোটের ফলপ্রকাশের পরে দু’মাস ধরে বিশদ পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত তাঁদের ঘোষিত। সেই প্রক্রিয়াই এখন চলছে। আর আন্দোলন-প্রতিবাদও জারি আছে স্থানীয় স্তরে।

Advertisement

দলের নেতা-কর্মীদের বড় অংশই অবশ্য দ্রুত মাঠে নেমে পড়তে উৎসুক। বিজেপি নেতারা ‘রাজ্য ভাগের চক্রান্ত’ করছেন, এই অভিযোগে সিপিএম মিছিলের ডাক দিয়েছিল গড়িয়া থেকে যাদবপুরে। তাতেই শামিল হয়েছিলেন সুজন চত্রবর্তী, বিকাশ ভট্টাচার্য, সৃজন ভট্টাচার্যেরা। দলের একাংশের মতে, সময় থাকতেই রাজ্য স্তরে এমন প্রতিবাদের ডাক দিলে আরও সাড়া মিলতো।

বাংলাদেশের ঘটনা নিয়েও রাস্তা থেকে দূরেই থেকেছে সিপিএম। সে ক্ষেত্রে অবশ্য কৌশলী অবস্থান নিতে হয়েছে। ছাত্র-মৃত্যুর প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নামতে গেলে পাছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধিতা করা হয়ে যায় এবং ঘুরপথে মৌলবাদী শক্তির কোনও ফায়দা হয়, এই আশঙ্কায় হাত গুটিয়েই ছিল তারা। কলকাতার রাজপথে সিপিআই, আরএসপি, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন এবং এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ‘সংহতি মিছিল’ করলেও তাতে এসএফআই শামিল হয়নি।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘হকার, বিদ্যুৎ মাসুল— এগুলো আমাদেরই ধরার বিষয়। যতটুকু প্রতিবাদ হয়েছে, খুবই নমো নমো করে! দ্বিধা করতে গিয়ে আমরা অনেক কিছু হাতছাড়া করে ফেলছি, মনে হচ্ছে। সাধারণ, প্রান্তিক মানুষের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন বাড়ানোই এখন কর্তব্য।’’

মালদহে বিদ্যুৎ নিয়ে পুলিশের গুলি চালনার প্রতিবাদ, বন্‌ধের কর্মসূচি অবশ্য সিপিএম এর মধ্যে নিয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলছেন, ‘‘দু’মাস ধরে একেবারে নিচু তলা থেকে ধরে ধরে ভোটের ফল এবং আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতির পর্যালোচনা হচ্ছে। রাজ্য নেতারা জেলায় জেলায় বৈঠকে অংশগ্রহণ করছেন। আন্দোলন থেকে আমরা সরে গিয়েছি, এমনও নয়। স্থানীয় স্তরে নানা বিষয়ে রাস্তায় নামা হচ্ছে। এর পরে সর্বত্র তার গতি বাড়ানো হবে।’’ বিভিন্ন পুরসভা যে ভাবে রাস্তা থেকে হকার, ছোট ব্যবসায়ীদের তুলে দিচ্ছে, সেই বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় স্তরে বার্তাও দেওয়া হয়েছে সিপিএমের তরফে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement