Firecrackers in Police Warehouse

ফের বাজির স্তূপ পুলিশের মালখানা, নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা কবে

মজুত করা বাজি হঠাৎ ফেটে গেলে কী হতে পারে, নৈহাটি এবং চুঁচুড়ার ঘটনায় তা অতীতে দেখা গিয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তীব্র শব্দে কেঁপে উঠেছিল ওই দুই এলাকা।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ফের বারুদের স্তূপের উপর রয়েছে পুলিশের মালখানা! নেপথ্যে পুলিশি ধরপাকড়ে উদ্ধার হওয়া নিষিদ্ধ বাজি। সূত্রের খবর, এমন বাজির পরিমাণ প্রায় ৪৫০০ কেজি। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। বছরের শুরু থেকে উৎসবের মরসুম মিলিয়ে এই পরিমাণ বাজিই এ বার উদ্ধার করেছে লালবাজার। কিন্তু উৎসব কেটে গেলেও এখনও সেগুলি নিষ্ক্রিয় করে উঠতে পারেনি তারা। এতেই রীতিমত বিপদ মাথায় আইন রক্ষার কাজ করতে হচ্ছে তাদের। কবে এগুলি নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা হবে, সেই নিয়ে কারও স্পষ্ট ধারণা নেই। প্রশ্ন করায় লালবাজারের এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, ‘‘মামলা চলছে। প্রায়ই আদালতে হিসাব দিতে হচ্ছে। মামলা না মেটা পর্যন্ত বাজি নিষ্ক্রিয় করা শক্ত। এর জন্য তো আবার আলাদা করে এক জনকে দায়িত্ব দিতে হয়েছে। অসাবধান হলেই বিপদ ঘটে যেতে পারে যে কোনও মুহূর্তে!’’

Advertisement

মজুত করা বাজি হঠাৎ ফেটে গেলে কী হতে পারে, নৈহাটি এবং চুঁচুড়ার ঘটনায় তা অতীতে
দেখা গিয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তীব্র শব্দে কেঁপে উঠেছিল ওই দুই এলাকা। ছাদ ধসে, চাল উড়ে এবং জানলার কাচ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ৫০০টি বাড়ি। শিশু-সহ আহত হন তিন জন! জানা যায়, উদ্ধার হওয়া বাজি এবং বাজি তৈরির মশলা এক জায়গায় রেখে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করছিল পুলিশ। সেই সময়েই ঘটে বিপত্তি। এর পরে কড়া অবস্থান নেয় প্রশাসন। যতটা সম্ভব দ্রুত বাজি সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি করে নিরাপদে নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা করতে বলা হয় বাহিনীকে। ওই বছরই সামনে আসে, প্রায় ১৪ হাজার কিলোগ্রাম নিষিদ্ধ বাজি মজুত রয়েছে পুলিশের হেফাজতে। এমনকি, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন থাকায় পুলিশ বাজি নিষ্ক্রিয় করার সময়ই বার করে উঠতে পারেনি বলে খবর সামনে আসে। যদিও অবশেষে ওই বছর হলদিয়া পুর এলাকার শ্রীকৃষ্ণপুরের ‘পশ্চিমবঙ্গ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা লিমিটেড’-এ নিয়ে গিয়ে মজুত বাজি নিষ্ক্রিয় করা হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, ২০২০ এবং ’২১ সালে কলকাতা পুলিশ নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার করেছিল যথাক্রমে ৭০০০ কিলোগ্রাম এবং ১০০০০ কিলোগ্রামের মতো। যদিও কলকাতা হাই কোর্টের হস্তক্ষেপে শুধুমাত্র সবুজ বাজি বিক্রির ছাড়পত্র থাকায় ২০২২ সালে পুলিশের ধরপাকড়ে উদ্ধার হয় মাত্র ১১৪১ কিলোগ্রাম বাজি। চলতি বছরের ডিসেম্বরে দেখা যাচ্ছে, কলকাতা পুলিশ উদ্ধার করেছে প্রায় ৪৫০০ কেজি নিষিদ্ধ বাজি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা জানাচ্ছেন, এমন উদ্ধার হওয়া বাজি হেফাজতে রাখার ক্ষেত্রে যেমন সতর্ক থাকতে হয়, তেমনই সাবধান হতে হয় বাজি নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রেও। এ জন্য সবচেয়ে উপযোগী জায়গা পশ্চিমবঙ্গ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা লিমিটেড। বাজি ছাড়াও কারখানার বর্জ্য, নার্কোটিক্স দফতরের বাজেয়াপ্ত করা হেরোইন, ব্রাউন সুগার, গাঁজা এখানে নষ্ট করা হয়। করোনা-বর্জ্যেরও শেষ ঠিকানা ছিল এই কারখানা।

Advertisement

বাজির ক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডল ও ভূগর্ভস্থ জল যাতে দূষিত না হয়, সেই দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। বাজেয়াপ্ত বাজির নমুনা হলদিয়ার পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত হয়, নিষ্ক্রিয় করতে কী ধরনের রাসায়নিক মেশানো হবে। ওই জায়গায় জমিতে কয়েকটি বিশাল প্লাস্টিকের জলাধার রাখা থাকে। ওই ফাঁকা জলাধারের মধ্যে প্রথমে লোহার পাটাতন পাতা হয়। পাটাতনের উপরে ঢালা হয় ইট, সুরকি, বালির মিশ্রণ। তার উপরে ঢালা হয় রাসায়নিকের মিশ্রণ। তারও উপরে রাখা হয় বাজিগুলি। বাজির উপরে আর এক দফায় ওই মিশ্রণ ঢেলে জলাধারের মুখ আটকে মাটির গভীরে বসিয়ে দেওয়া হয়। মাটির নীচে ওই মিশ্রণ কয়েক বছর পরে বোল্ডারের আকার ধারণ করে। অর্থাৎ পুরো মিশ্রণটি দূষণ প্রতিরোধী ক্যাপসুলে আটকে থাকে। সেই বোল্ডার তুলে ব্যবহার করা হয় অন্য সরকারি কাজে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement