Outpatient Department

জুনিয়র ডাক্তার সামলাচ্ছেন সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ, ক্ষোভ পরিষেবা নিয়ে, মানছে প্রশাসন

সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের সময়ে না আসার বিষয়ে এনএমসি-র প্রশ্ন, কেন আধারযুক্ত বায়োমেট্রিক হাজিরা ব্যবস্থা এখনও চালু করা হয়নি হাসপাতালে?

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:০৭
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সময় পেরিয়ে গেলেও চিকিৎসকের অভাবে খুলছেই না বহির্বিভাগ। কোথাও আবার নির্দিষ্ট সময়ে খুলে যাচ্ছে বহির্বিভাগ। কিন্তু দেখা নেই সিনিয়র চিকিৎসকের। জুনিয়র চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে পরিষেবা চালু রাখতে গিয়ে বহু ক্ষেত্রেই রোগীর লাইন দীর্ঘ হচ্ছে, বাড়ছে ক্ষোভ।
সময় মতো খোলা হয় না হাসপাতালের ওষুধ বিতরণের ঘরও। রাজ্যের স্বাস্থ্য কাঠামোর মেরুদণ্ড, সরকারি হাসপাতাল নিয়ে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ বার সেই অভিযোগে সিলমোহর দিল ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন’ (এনএমসি)। নজরদারির ফাঁক গলে এমন অনিয়ম চলছে বলেই মনে করছে এনএমসি। বহির্বিভাগ সংক্রান্ত এমন অভিযোগের কথা মেনে নিচ্ছেন শহরেরই এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের সময়ে না আসার বিষয়ে এনএমসি-র প্রশ্ন, কেন আধারযুক্ত বায়োমেট্রিক হাজিরা ব্যবস্থা এখনও চালু করা হয়নি হাসপাতালে? এর উত্তর চেয়ে শহরের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে শোকজ় করেছে এনএমসি। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, এনএমসি-র চোখে যে অনিয়ম ধরা পড়েছে, তা রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা কেন দেখতে পাচ্ছেন না?

২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদলের পরে সময়ে বহির্বিভাগ চালু করার উপরে জোর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন নিজেই তিনি সকালে বিভিন্ন হাসপাতালে আচমকা পরিদর্শনে চলে যেতেন। এমনকি, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দিষ্ট পোর্টালে বহির্বিভাগ শুরুর তথ্য আপলোড করতে হত তখন থেকে। সময়ের সঙ্গে সে সবই ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে বলে দাবি করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ। কারও আবার মত, ‘‘ইন্টার্নদের বসিয়ে বহির্বিভাগ সময়ে চালু রেখে পোর্টালে আপলোড করে কী লাভ? রোগী পরিষেবা কি আদৌ যথাযথ হচ্ছে? বরং এই পদ্ধতিতে রোগী দেখতে সময় অনেক বেশি লেগে যাচ্ছে। তাতে রোগীর ভিড় যেমন বাড়ছে, তেমনই বেড়ে চলছে ক্ষোভও।’’

Advertisement

এমন অভিযোগের কথা মেনে নিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিছু চিকিৎসক সময়ে বহির্বিভাগে আসছেন না। কখনও কখনও আবার
চিকিৎসক না থাকায় খুলছেই না বহির্বিভাগ। এমনকি, সময় মতো খোলা হয় না ওষুধ বিতরণের ঘরও। এ সবের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দূর থেকে আসা রোগীরা। শহরের প্রথম সারির ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে রোগীদের এমন অভিযোগ যে অমূলক নয়, তা কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ জন্য রোগী কল্যাণ সমিতির তরফে বৈঠক ডেকে সম্প্রতি সব বিভাগীয় প্রধানকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

এমনিতেই সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রে তা আরও কয়েক গুণ বেশি হয়। যেখানে সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের পরিকাঠামোর উন্নয়নে খরচ করা হচ্ছে, সেখানে একাংশের উদাসীনতা কেন বরদাস্ত করছে প্রশাসন?

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্ষেত্রে এ বার ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলছেন সেখানকার রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়। তাঁর মতে, ‘‘কিছু চিকিৎসকের সময়ে বহির্বিভাগে না যাওয়ার প্রবণতা আমাদেরও নজরে এসেছে। তাই সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট সময়ে বহির্বিভাগ না চালু করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রের খবর, সকাল ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে প্রতিটি বহির্বিভাগ চালু করতে বলা হয়েছে। হাসপাতাল প্রশাসনের তরফে একটি দল ওই সময়ে বহির্বিভাগে গিয়ে পরিস্থিতি দেখছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘যদি দেখা যায়, ঘর ফাঁকা কিংবা সিনিয়র চিকিৎসক নেই, তা হলে সেখানে দাঁড়িয়েই হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো কল করে বিভাগীয় প্রধানকে পরিস্থিতি দেখানো হচ্ছে। বহির্বিভাগ শুধু চালু করলেই হবে না। পরিষেবার গুণগত মানের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’’

রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের একটি অংশের সময়ে না আসা, বহির্বিভাগে না যাওয়া, সময়ের আগেই হাসপাতাল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতা যে বাড়ছে, মানছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও। হাসপাতালে আধারযুক্ত বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর জন্য নির্দেশিকা রয়েছে এনএমসি-র। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ, বহির্বিভাগ, সুপার এবং অধ্যক্ষের অফিসে ওই যন্ত্র থাকার কথা। বাস্তব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে হয় সেটি নেই, থাকলেও ব্যবহার হয় না। সব সরকারি হাসপাতালে দ্রুত ওই ব্যবস্থা চালু করা নিয়ে বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement