ছবি: সংগৃহীত।
কেন্দ্রের প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে চালু হতে সময় লেগেছে। কিন্তু ‘ই-নাম’ (ইলেকট্রনিক ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল মার্কেট)-এ বিকিকিনিতে এখনও তাঁরা সুযোগ পাননি, দাবি রাজ্যের অনেক চাষির। করোনা-আবহে লকডাউন যেখানে মানুষের কম্পিউটার নির্ভরতাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, সেখানে এমন একটি প্রকল্পের সুবিধা রাজ্যের সর্বত্র কৃষিজীবীরা পুরোদস্তুর পাচ্ছেন না কেন সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার অবশ্য জানাচ্ছেন, রাজ্যে ২২টি জায়গায় ‘ই-নাম’ প্রকল্প চালু হয়েছে। তাঁর সংযোজন: ‘‘ই-নাম প্রকল্পের পরিকাঠামো গড়লেই হবে না, সে সব জায়গায় ক্রেতা-বিক্রেতা কেমন হচ্ছে তা-ও দেখতে হবে। তার পরে বাকি জায়গাতেও গড়ে তোলা হবে।’’
কৃষকদের সুবিধে এবং বিপণনের ক্ষেত্র বাড়াতে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের উদ্যোগ ‘ই-নাম’। কেন্দ্রের পরিকল্পনা, দেশের ২২ হাজার কৃষক বাজারকে (মান্ডি) ‘ই-নাম’-এর সঙ্গে যোগ করবে। কৃষি উৎপাদনের খরচ কমানো, কৃষককে লাভজনক দাম পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা, খাদ্যের অপচয় রোধ করাই এর মূল লক্ষ্য। মূলত এক মান্ডি থেকে দেশের বা রাজ্যের অন্য প্রান্তের মান্ডিতে বিকিকিনি করায় সহায়ক এই প্রকল্প। এর মাধ্যমে চাষিরা ব্যক্তিগত ভাবে উৎপাদিত জিনিস বিক্রি করতে পারেন, আবার কোনও সংস্থা গড়ে ভিন্ রাজ্য বা ভিন্ জেলার উৎপাদিত দ্রব্য কিনতে পারেন।
শিলিগুড়ি মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, চাষিরা যাতে তাঁদের উৎপাদনের যথাযথ দাম পান, সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ‘ই-নাম’-এর মাধ্যমে অনলাইন কেনা-বেচা শুরু করার কথা জানিয়েছিল। শিলিগুড়িতে গত বছর কিছু চাষিকে নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল। কিন্তু পরে ব্যবস্থাটাই চালু হয়নি। বীরভূমে একমাত্র মহম্মদবাজার ব্লকে, মেদিনীপুরের জেলাগুলির মধ্যে একমাত্র পাঁশকুড়া কৃষক বাজারে ‘ই-নাম’ পোর্টালের সুবিধা রয়েছে। মালদহে ‘ই-নাম’ পোর্টাল চালু হতে চলেছে রতুয়া ১ ব্লকের সামসি নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির মুখ্য বাজার চত্বরে। এখন তার পরিকাঠামো গড়ার কাজ চলছে। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে আবার এই প্রকল্পের নামই শোনেননি অনেক চাষি।
কিন্তু যেখানে প্রকল্পটি চালু হয়েছে?
মাসখানেক আগে ‘পাইলট প্রকল্প’ হিসেবে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ‘ই-নাম’ প্রকল্প চালু হয়। কালনা ১ ব্লকের কিসান মান্ডিতেই একমাত্র ‘ই-নাম’ পোর্টালের মাধ্যমে কেনাবেচার সুযোগ রয়েছে জেলার কৃষকদের। চাষিদের নিয়ে গঠিত পূর্বস্থলীর একটি সংস্থা ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের কিসান মান্ডি থেকে অনলাইনে আলু, টোম্যাটো এবং বাঁধাকপি কিনেছে। এখনও পর্যন্ত ২,০২৫ জন চাষি পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করেছেন। চাষিদের নিয়ে কেনা-বেচা করার জন্য ১৫টি সংস্থা গড়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (কৃষি) হুমায়ুন বিশ্বাস বলেন, “এখনও পর্যন্ত ২৩ বার অন্য মান্ডি থেকে জিনিস কেনা হয়েছে। সব মান্ডিতে পরিকাঠামো গড়ে উঠলে ক্রয়-বিক্রয় বাড়বে।“
পরিকাঠামো গড়ে তোলা গেল না কেন? জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “ধীরে ধীরে সব জায়গাতেই পরিকাঠামো গড়ে উঠবে। চাষিরাও ন্যায্য মূল্য পাবেন।’’
বাঁকুড়ায় ‘ই-নাম’ পোর্টালে মোট ১১টি ‘ফার্মাস প্রডিউসার অর্গানাইজেশন’-এর নাম নথিভুক্ত রয়েছে, যাদের আওতায় রয়েছেন এক হাজারের বেশি চাষি। এ বছর লকডাউনের সময় বাঁকুড়ার চাষিদের তরমুজ বিক্রি হয়েছিল ওই পোর্টালের মাধ্যমে। বর্তমানে কুমড়ো বিক্রি হচ্ছে। জেলার সহ কৃষি বিপণন আধিকারিক শান্তনু বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রায় তিন লক্ষ টাকার বেচা-কেনা ওই পোর্টালের মাধ্যমে হয়েছে। লকডাউন-পরিস্থিতিতে এই পোর্টালের জন্যই তরমুজ চাষিরা বৃহত্তর বাজারে বেচাকেনার সুযোগ পেয়েছিলেন।’’ জেলার তরমুজ চাষি অসীম পাল, রোহিত দে-রা বলেন, ‘‘লকডাউনে তরমুজ বিক্রি করতে পারব কি না তা নিয়ে চিন্তা ছিল। পোর্টালের দৌলতে তরমুজ বেচে মুনাফাও হয়েছে।’’
কৃষকসভার প্রাক্তন রাজ্য যুগ্ম সম্পাদক তথা সর্বভারতীয় খেতমজুর ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট অমিয় পাত্র বলেন, ‘‘উদ্যোগটি খুবই ভাল। ভবিষ্যতে ব্যবসার অন্যতম মাধ্যমই হল ই-কমার্স। তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই উদ্যোগের কোনও প্রচার নেই। সবাই সুযোগও পাচ্ছেন না।’’ অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্য অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিজ় কর্পোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশিস বটব্যালের দাবি, ‘‘ই-নাম পোর্টাল রাজ্যের চাষিদের ঘরে বসেই বৃহত্তর বাজারে ব্যবসার নতুন দরজা খুলে দিয়েছে৷ আগামী দিনে কী ভাবে এই পোর্টালের মাধ্যমে বেচা-কেনা আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি।’’ (শেষ)