Air India

Air India: কারও নেই ইঞ্জিন, কারও বা ল্যান্ডিং গিয়ার! এয়ার ইন্ডিয়ার অকেজো বিমান ফের উড়বে কি

দেশের অভ্যন্তরে এয়ারবাস সংস্থার তৈরি ৩১৯, ৩২০, ৩২১— এই তিন ধরনের যাত্রিবিমান ওড়াত এয়ার ইন্ডিয়া।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:১৪
Share:

কলকাতা বিমানবন্দরে রানওয়ের পূর্ব প্রান্তে অকেজো হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার একাধিক এয়ারবাস ৩১৯ বিমান। নিজস্ব চিত্র

কারও কারও ইঞ্জিন নেই। কারও বা নেই ল্যান্ডিং গিয়ার। অনটনের বাণে বেঁধা যেন সব ডানাভাঙা পাখি! নতুন ইঞ্জিন বসিয়ে, নতুন ল্যান্ডিং গিয়ার লাগিয়ে শুশ্রূষার পরে ফের তাদের কেউ ওড়াবে কি? লোকসানের দরুন এয়ার ইন্ডিয়ার বসিয়ে দেওয়া অকেজো এবং আধা-অকেজো ওই সব বিমানের কী হবে ভবিষ্যৎ?

Advertisement

প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠছে। কারণ, অর্থাভাবে এয়ার ইন্ডিয়া এত দিন বহু বিমানের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেনি। ওই সব বিমানের মধ্যে কোনওটার ইঞ্জিন বদলানো দরকার। কোনওটায় লাগবে নতুন ল্যান্ডিং গিয়ার। কিন্তু যে-সব সংস্থা কয়েক দশক ধরে বিমানের ইঞ্জিন বা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে আসছিল, তাদের কোটি কোটি টাকা পাওনা বকেয়া। উড়ান সংস্থা সূত্রের খবর, টাটা গোষ্ঠী গত জানুয়ারির শেষে এয়ার ইন্ডিয়া কিনে নেওয়ার পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বকেয়া মিটিয়ে দিতে শুরু করেছে। কর্মীদের বকেয়া বেতনের একাংশও ইতিমধ্যে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দেশের অভ্যন্তরে এয়ারবাস সংস্থার তৈরি ৩১৯, ৩২০, ৩২১— এই তিন ধরনের যাত্রিবিমান ওড়াত এয়ার ইন্ডিয়া। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, তার মধ্যে এয়ারবাস-৩১৯ ছিল ২০টি। তার মধ্যে মাত্র সাতটি চলছে। বাকি সব বসে। এয়ারবাস-৩২০ ছিল ৩৬টি। তার ৩২টি উড়ছে। এয়ারবাস-৩২১ ছিল ১৮টি। তার মধ্যে ১০টি নিয়মিত যাত্রী বহন করছে।

Advertisement

বাকি বসে যাওয়া বিমানের বেশির ভাগেরই পুরো ইঞ্জিন বদলে ফেলা প্রয়োজন। প্রশ্ন উঠছে, টাটা গোষ্ঠী কি ওই সব বিমানে নতুন ইঞ্জিন লাগিয়ে আবার ওড়াবে? এই প্রশ্ন ওঠার পিছনে একটা বড় কারণ ‘নিও ইঞ্জিন’। নতুন ধরনের এই নিও ইঞ্জিনে ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হয়। তাই দেশ-বিদেশের অধিকাংশ উড়ান সংস্থাই এখন নিও ইঞ্জিন-বিশিষ্ট বিমান কিনতে বা ভাড়া নিতে চাইছে।

এই মুহূর্তে ভারতের আকাশে এয়ার ইন্ডিয়ার যে-সব (৩২টি) এয়ারবাস-৩২০ বিমান চলছে, তার ২৭টিতেই নিও ইঞ্জিন বসানো। এয়ার ইন্ডিয়ার এক কর্তা বলেন, “যে-সব বিমান বসে গিয়েছে, সেগুলিতে নিও ইঞ্জিন বসাতে পারলে তখন লাভ হবে। কিন্তু বিদেশের বাজারে এখন নিও ইঞ্জিনের যে-চাহিদা, তাতে চাওয়া মাত্র সেই ইঞ্জিন পাওয়া মুশকিল। এক-একটি উড়ান সংস্থাকে দেড় থেকে দু’বছর পর্যন্ত সেই ইঞ্জিনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।”

প্রশ্ন, তত দিন কি বসেই থাকবে এয়ার ইন্ডিয়ার ওই সব বিকল বিমান, না, টাটা গোষ্ঠী অন্য ইঞ্জিন বসিয়ে সেগুলিকে আবার ওড়াবে।

এয়ারবাস-৩২০ বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং ঘাঁটি দিল্লিতে। এয়ারবাস-৩২১ বিমানের মুম্বই এবং ৩১৯-এর ঘাঁটি কলকাতায়। এই মহানগরে ই ঘাঁটি তৈরি হয় ২০০৫ সালের শেষে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ২০টির মধ্যে যে-তেরোটি এয়ারবাস-৩১৯ বসে রয়েছে, তার মধ্যে আটটির ইঞ্জিন নেই, তিনটিতে নেই ল্যান্ডিং গিয়ার। দু’টি বিমান গিয়েছে রক্ষণাবেক্ষণে। এই ২০টি বিমানের মধ্যে দু’টি ভাড়ায় নেওয়া। বাকি ১৮টি বিমান সরাসরি কিনে নিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া।

বসে যাওয়া বিমানের মধ্যে কলকাতায় আছে ন’টি। কলকাতা বিমানবন্দেরর রানওয়ে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। তার পূর্ব প্রান্তে ফাঁকা জমির কাছে ট্যাক্সি বে-তে রয়েছে সাতটি বিমান আর বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার বা গ্যারাজে রয়েছে দু’টি। বসে যাওয়া একটি বিমান আছে দিল্লিতে এবং মুম্বইয়ে রয়েছে অন্য একটি বিমান।

এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “ভাড়ায় নেওয়া বিমানগুলি অনায়াসে ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যেগুলি সরাসরি কেনা, সেগুলি এখন গলগ্রহ হয়ে উঠতে পারে টাটাদের কাছে। বসে যাওয়া বিমানে নিও ছাড়া অন্য ইঞ্জিন লাগালে তাতে কতটা সাশ্রয় হবে, তা খতিয়ে দেখবেন টাটারা। লোকসান দিয়ে তো ওঁরা ব্যবসা করবেন না!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement