ফাইল চিত্র।
মন্ত্রী বদলানো হয়েছে। রদবদল হয়েছে বড়-মেজো-ছোট কর্তাদের মধ্যে। সব স্তরের কর্মী-অফিসার বদলি চলছে মাঝেমধ্যেই। নেওয়া হয়েছে নতুন বেশ কিছু সিদ্ধান্তও। কিন্তু সারছে না রেলের আদত অসুখ। বিভিন্ন ট্রেনের, বিশেষত দূরপাল্লার ট্রেনের দেরি ঠেকানো যাচ্ছে না!
রেল সূত্রের খবর, কলকাতা থেকে উত্তরমুখী রুটে তো বটেই, উত্তর-পূর্বের ট্রেনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ‘লেট’। যাত্রীদের অভিযোগ, সময় মেনে ট্রেন না-চলায় তাঁদের কর্মসূচির দফারফা। মাঝরাস্তায় আটকে থেকে নাকাল হতে হচ্ছে নিত্যদিন। ভোগান্তি বাড়াচ্ছে ট্রেনের খবর দেওয়ার ব্যাপারে রেলের অনীহা, উদাসীনতা। কেন ট্রেন দেরি করছে, কখন মিলবে ট্রেন— মোবাইলের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সময়মতো যাত্রীদের তা জানানোর প্রয়োজন বোধ করেন না রেল-কর্তৃপক্ষ। ফলে তাঁরা জানতে পারছেন না, নির্দিষ্ট স্টেশনে ট্রেন কখন ঢুকবে। টাইম টেবিল ও টিকিটে দেওয়া সময়সূচি দেখে স্টেশনে পৌঁছে অনেকে জানতে পারছেন, ট্রেন কখন মিলবে, ঠিক নেই। ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানাচ্ছেন, গত এক-দেড় বছর ধরে রেলের টাইম টেবিলের সঙ্গে বাস্তবে ট্রেনের সময়ের কোনও মিল থাকছে না। সব ট্রেনই চলছে নিজের সময়ে!
কলকাতা থেকে বিভূতি এক্সপ্রেসে আসন সংরক্ষণ করে সপরিবার বারাণসী বেড়াতে গিয়েছিলেন তপন ঘোষ। ওই ট্রেনেই তাঁর ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টায় যে-ট্রেনের বারাণসীতে পৌঁছনোর কথা, সে স্টেশনে ঢুকল রাত ১টার পরে! ‘‘অত রাতে বয়স্ক লোকজনকে নিয়ে বিপদে পড়ে গেলাম,’’ বললেন তপনবাবু। জানালেন, দেরির কারণ জানানোর তাগিদ অনুভব করেননি রেলকর্তারা।
দূরপাল্লার যাত্রীদের বক্তব্য, যে-সব ট্রেন যাওয়ার পথে দেরি করে, তাদের অধিকাংশই যে (যে-হেতু বাড়তে রেক নেই) ফেরার পথেও দেরি করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু দেরির খবর যাত্রীদের জানানো হচ্ছে না। জানালে ট্রেনের অপেক্ষায় ১০-১২ ঘণ্টা স্টেশনে বসে থাকতে হয় না। রেলকর্তারা যাত্রীদের এই পরিষেবাটুকু দিতেও যেন রাজি নন। উল্টে প্রিমিয়াম ট্রেনের যুক্তি দেখিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
দেরির মোকাবিলা করা যাচ্ছে না কেন? ট্রেন যে সময়ে চালানো যাচ্ছে না, তা জানাতেই বা অনীহা কেন?
রেলের যুক্তি, গত বছর পুজোর পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কয়েকটি দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে পুরনো রেললাইন সংস্কার শুরু হয়েছে। উত্তর ও উত্তর-মধ্য রেলে এখনও চলছে সেই কাজ। তাই ট্রেন দেরি করছে। যাত্রীদের বক্তব্য, কত দিন ওই কাজ চলবে, রেল সেটা জানিয়ে দিক। সংস্কারের কাজের জন্য প্রতিদিন ওই সব রুটে কোন ট্রেন কতটা দেরি করতে পারে, সেটাও এসএমএস করে যাত্রীদের জানানোর ব্যবস্থা হোক।
দাবি মেনে এই পরিষেবাটুকু দেওয়া যাবে কি না, রেল-কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়ে উচ্চবাচ্য করছেন না। রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, সংস্কারের কাজ শেষ হলে পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে শীতের কুয়াশার দাপট। তখন ট্রেন চলবে আরও ধীরে। তাই ট্রেন কবে থেকে সময় মেনে চলবে, কেউই তা বলতে পারেন না।