বিধানসভা ভোটের পর থেকে নিস্তরঙ্গ বিরোধী রাজনীতিতে আলোড়ন এনে দিয়েছে ভাঙড়। ছোট-বড় সব বিরোধী দলই রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সক্রিয়। ব্যতিক্রম বিজেপি! ভাঙড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জনের মৃত্যুর পর শুধু বিবৃতি দিয়েছে তারা। আউশগ্রামের ঘটনার পরে পুলিশি অত্যাচার বন্ধের জন্য থানায় দাবিপত্র দিয়েছে।
কিছু দিন আগেও কলকাতায় মিছিল থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় প্রতিবাদে যোগ দিয়ে রাজ্যে বিরোধী রাজনীতির পরিসর দখলে তৎপর ছিল বিজেপি। তৃণমূলের সঙ্গে এ রাজ্যে বিজেপিরই লড়াই হচ্ছে, এমন ছবি তুলে ধরতেই সচেষ্ট ছিল। কিন্তু ভাঙড়ের মতো ঘটনার পরে সেই বিজেপিকেই রিজার্ভ বেঞ্চে দেখে দলেরই একাংশ প্রমাদ গুনছে! তাদের প্রশ্ন, আবার কি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ‘ঠান্ডা’ পড়ে যাচ্ছে তৃণমূল-বিরোধিতায়? তৃণমূল কেন্দ্রের বাজেট বক্তৃতা বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিজেপি কর্মীদের সন্দেহ বেড়েছে।
আন্দোলনে ঢিলে দেওয়ায় বিজেপি কর্মীদের একাংশ যে আশঙ্কার কথা একান্তে বলছেন, তা-ই প্রকাশ্যে বলছেন অন্য বিরোধী নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘দিদিভাই-মোদীভাইয়ের গড়াপেটা ফের দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হল! সরস্বতী পুজোর কারণে কেউ গোটা দিন ব্যস্ত থাকেন, এমনটা শুনিনি। এই অধিবেশনেই তো নোট-বাতিল নিয়ে মোদীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সুযোগ ছিল।’’ সিপিএমের সাংসদ মহম্মদ সেলিমের মতে, ‘‘সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারিতে ভয় পেয়ে মমতা যে বাজেটে না থেকে মোদীকে বার্তা দিতে চাইছেন, বিষয়টা এমনও নয়। মমতা এবং তাঁর দল অমিত শাহ একাদশের দ্বাদশ ব্যক্তি! বিজেপি-র যখন যে রকম দরকার, সে রকম আচরণ করেন!’’ বিজেপি কর্মীদের একাংশের মতো অধীর-সেলিমদেরও আশঙ্কা, রোজ ভ্যালি তদন্তে সিবিআই না ‘ঝিমিয়ে’ পড়ে!
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ এবং কোর কমিটির সদস্য শমীক ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্ন নেই। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আন্দোলন হলেই যেতে হবে, তার মানে নেই! ভাঙড়ে দু’দলের মারামারি হচ্ছে। আবার সরকারেরও ব্যর্থতা আছে। বিজেপি মারামারির রাজনীতি করে না। আমরা সংগঠন গোছাচ্ছি।’’ বিজেপি-র এক রাজ্য নেতা অবশ্য দিলীপ-শিবিরের প্রতি কটাক্ষ করছেন, ‘‘ওঁরা রাজনীতি করা বলতে বোঝেন ব্যায়াম (আরএসএসের শরীরচর্চার কর্মসূচি) করা! তাই গোটা দল এখন ব্যায়াম করছে। জেলায় জেলায় ব্যায়ামবীররা সভা করছেন!’’ তবে ভাঙড়ে যে হেতু আন্দোলন হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পের বিরুদ্ধে, তাই সেখানে যোগ দেওয়া তাদের পক্ষে অসুবিধাজনক বলে বিজেপি-র আর একটি অংশের মত।