—প্রতীকী ছবি।
রাজ্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার মাওবাদী নেতা সব্যসাচী গোস্বামী ওরফে কিশোরদা। পুরুলিয়ার বেলগুমা পুলিশ লাইনে ধৃতকে সামনে রেখে এ কথা জানালেন জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, শুক্রবারই সব্যসাচীকে পুরুলিয়া জেলা আদালতে হাজির করানো হবে।
অভিজিৎ জানান, গোয়েন্দাদের তথ্যসূত্র ধরে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া বাঘমুণ্ডি থানার চৌনিয়া এলাকার একটি জঙ্গল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে । তাঁর কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল, আট রাউন্ড গুলি, মাওবাদীদের বেশ কিছু নথিপত্র এবং চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে। সব্যসাচী গোস্বামী মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ছিলেন। সম্প্রতি তিনি নতুন করে বাংলায় মাওবাদীদের কার্যকলাপ শুরু করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বলেও দাবি করেছেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘‘নতুন করে মাওবাদী স্কোয়াডে নিয়োগের চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি, অর্থ সংগ্রহও করছিলেন ধৃত। স্বাভাবিক ভাবে এই গ্রেফতারি রাজ্য পুলিশের বড় সাফল্য।’’
২০১১ সালে কিষেনজির মৃত্যুর পর এ রাজ্যে মাওবাদী কার্যকলাপ থমকে যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল এলাকায় নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন মাওবাদীরা। দক্ষিণবঙ্গে এই সংগঠন বৃদ্ধির দায়িত্ব ছিল ‘কিশোরদা’র উপর। মধ্য পঞ্চাশের সব্যসাচীর সঙ্গে মাওবাদী সংগঠনের যোগ দীর্ঘ দিনের। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘোলা থানার সোদপুর রোড এলাকায়। ছাত্র অবস্থাতেই নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন সব্যসাচী। সে সময় নকশাল নেতা সন্তোষ রানার হয়ে কাজ করতে শুরু করেন। পরে তিনি যোগ দেন ‘জনযুদ্ধ গোষ্ঠী’তে। ২০০০ সালে মাওবাদীদের কলকাতা সিটি কমিটির সম্পাদকও নির্বাচিত হন কিশোরদা। ২০০৪ সালে তাঁকে রাজ্য কমিটির সদস্য করা হয়। বছর পাঁচেক আগে তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ দেয় দল। সম্প্রতি মাওবাদী দলের ‘ইস্টার্ন রিজিওনাল ব্যুরো’র দায়িত্ব পান সব্যসাচী। সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি, নতুন যুবকদের দলে আনার ব্যাপারে সচেষ্ট হয়েছিলেন ধৃত মাওবাদী নেতা। এ রাজ্যে একাধিক আন্দোলনে পিছন থেকে মদত দেওয়ার পাশাপাশি, ভিন্রাজ্যেও তাঁর কার্যকলাপ ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
যদিও এই প্রথম বার নয়, অতীতেও একাধিক বার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন সব্যসাচী। ২০০৫ সালে প্রথম তিনি সিআইডির হাতে গ্রেফতার হন। ২০১৩ সালে ফের তিনি গ্রেফতার হন যাদবপুর থেকে। ২০১৮ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। ২০২১ সালে ফের অসম থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। প্রতি বারই জামিন পেয়ে গা ঢাকা দেন সব্যসাচী। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে একাধিক বার হাতের কাছে পেয়েও সব্যসাচীকে ধরতে পারেনি পুলিশ। সব্যসাচীর খোঁজে লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল এনআইএ-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০২২ সালে এনআইএ সব্যসাচীর মাথার দাম ১০ লক্ষ টাকা ধার্য করে বলেও জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে।