হাত বদল। মুকুটমণিপুরের সভা। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের উপহার দেওয়া শাড়ি মমতা দিয়ে দিলেন বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী মুনমুন সেনকে। মঙ্গলবার দেবব্রত দাসের ছবি।
পঞ্চমবারের জন্য বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে এসে সেখানে শান্তি ফেরানোর জন্য জঙ্গমহলের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরে অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদ আয়োজিত একটি সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গলমহলে আগে বহু মানুষ খুন হয়েছেন। প্রতি বছর খুন হত। এখন আর সেই খুনোখুনি নেই। জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। এ জন্য আমি জঙ্গলমহল আর পাহাড়ের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।”
পুরুলিয়ার কোটশিলা থেকে এ দিন দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ খাতড়া স্টেডিয়ামে নামে মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার। সেখান থেকে গাড়িতে প্রায় ১০ কিমি দূরে গোড়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন মাঠের এই সভায় যোগ দেন মমতা। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের তরফে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ধামসা মাদলের তালে আদিবাসী নৃত্যের মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বরণ করে নেওয়া হয়। মঞ্চে ওঠার আগেই আদিবাসী প্রথায় তাঁর পা ধুইয়ে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী উপহার পান একটি সবুজ রংয়ের শাড়ি। দৃশ্যতই আপ্লুত মমতা বলেন, “কিছুদিন আগেই আদিবাসী বিকাশ পরিষদ আমাকে এখানে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমি কথা দিয়েছিলাম যাব। তাই এসেছি। এখানে আসতে পেরে আমি গর্বিত। তবে, এটা রাজনৈতিক মঞ্চ নয়।”
কোটশিলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা চলাকালীনই এই ব্যাগটিকে ঘিরে ছড়ায় বোমাতঙ্ক। পরে অবশ্য দেখা যায়, ব্যাগটি এক সাংবাদিকের।
আর তাতে ছিল ক্যামেরার সঙ্গে থাকা বুম। মঙ্গলবার। ছবি: সুজিত মাহাতো।
এর পরেই তিনি জঙ্গলমহল ও পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসার প্রসঙ্গ তোলেন। পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্য প্রশাসক হিসাবে তিনি যে অনেক কাজ করেছেন, সে-কথাও বারবার বলেছেন। জানিয়েছেন, ১০০ দিনের কাজে বাঁকুড়া জেলা দেশের মধ্যে প্রথম হয়ে পুরস্কার পেয়েছে। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সভা হলেও গোড়াবাড়ির মাঠে মূলত ভিড় ছিল খাতড়া, রানিবাঁধ, রাইপুর, সারেঙ্গা, বারিকুল, হিড়বাঁধ থানা এলাকার তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদেরই। এ দিন মমতার সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন। মঞ্চে হাজির ছিলেন জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, পরিষদীয় সচিব শুভাশিস বটব্যাল। তবে, মমতা এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সভাপতি বীরসা তিরকে ছাড়া আরও কেউই বক্তৃতা দেননি। মঞ্চে উপস্থিত তৃণমূলের তারকা প্রার্থী মুনমুন সেনকে পরিচয় করাতে গিয়ে মমতা বলেন, “মুনমুনের বিয়ে হয়েছে আদিবাসী পরিবারে। সুচিত্রা সেন আমাদের গর্ব। তাঁর মেয়ে মুনমুন। মুনমুনের মেয়ে রিয়া, রাইমা।”
পিছনে অযোধ্যা রেঞ্জ। মঞ্চের পথে মোবাইলে ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী। ঝালদায় মঙ্গলবার সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই নিয়ে পঞ্চমবার বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে এলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে বারিকুলে দু’বার এবং খাতড়া ও সারেঙ্গায় এক বার করে সভা করেছেন মমতা। এ দিন দুপুর ১২টা থেকেই সভাস্থলে ভিড় বাড়তে শুরু করে। সভার বাইরে খাতড়া-অম্বিকানগর রাস্তার উপরে হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন মমতাকে দেখার জন্য। সংবর্ধনা নেওয়ার পরেই মমতা বলতে শুরু করেন, প্রশাসক হিসাবে তাঁর সরকারের সাফল্যের খতিয়ান। বাঁকুড়া জেলায় বিশেষ করে জঙ্গলমহলে পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে তাঁর সরকার দু’হাজার কোটি টাকার জল-প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দু’টি পর্যায়ে এই প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। প্রথমে ১৮টি ব্লক, পরে আরও ৬টি ব্লকে কাজ শুরু হবে। প্রকল্প শেষ হলেই পানীয় জলের অভাব পুরোপুরি মিটে যাবে।” জঙ্গলমহলের মানুষের জন্য টাকা কেজি দরে চাল, আটা থেকে কেন্দুপাতার দাম বাড়ানো, শিল্পীদের ভাতা দেওয়া থেকে শুরু করে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়, খাতড়ায় ব্লাডব্যাঙ্ক, জেলায় ১১টি মডেল স্কুলমুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে এসেছে তাঁর সরকারের সাফল্যের খতিয়ান।
জেলায় সরকারি উদ্যোগে পেঁয়াজ চাষের জন্য ছাতনার বিধায়ক শুভাশিস বটব্যালের প্রশংসা করেছেন মমতা। তেমনই ১০০ দিন কাজের সাফল্যের কথা বলার মাঝে ইশারায় কিছু বলার চেষ্টা করতেই মমতার মৃদু ধমক খেয়েছেন জেলা সভাধিপতি। অরূপ চক্রবর্তীকে উদ্দেশ করে মমতা বলেন, “তুমি তো সবে জেলা পরিষদে এসেছো। আমি তিন বছর ধরে কাজ করছি।” আদিবাসীদের সভা বলে মমতার গলায় শোনা গিয়েছে জঙ্গলের অধিকার রক্ষার কথা। তাঁর কথায়,“ জঙ্গলের অধিকার আদিবাসী ভাই-বোনেদের হাতে থাকুক এটা আমি চাই। কারণ এরাই পারবে জঙ্গলকে রক্ষা করতে।”
সাড়ে তিনটে নাগাদ মুকুটমণিপুর ছাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। তার আগে অবশ্য মমতা বলে গিয়েছেন,“আবার আসব, মুকুটমণিপুরে।”