ভোটের মুখে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশই বাড়ছে বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ও ইন্দাস এলাকা। ঠিক যেমন ভাবে এই দুই এলাকা তেতে উঠেছিল পাঁচ বছর আগের লোকসভা ভোটের মুখেও।
বুধবার রাতে ইন্দাসের সত্যপীরতলা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সিপিএমের এক নেতাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। অভিযোগের তির তৃণমূল কর্মীদের দিকে। সুশান্ত দিগের নামে ওই সিপিএম নেতাকে প্রথমে ইন্দাস ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে পাত্রসায়র থানার নাড়িচ্যা গ্রামে পতাকা টাঙানো নিয়ে বচসার জেরে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ভৈরব সাঁতরা-সহ পাঁচ জন জখম হন। ভৈরববাবুকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তৃণমূল কর্মী লালমোহন মুখোপাধ্যায় ও শেখ ভোদর বিষ্ণুপুর জেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোয় পুলিশের টহলদারি শুরু হয়েছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।
পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “দিন কয়েক আগে নাড়িচ্যা গ্রামে প্রচারে এসে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুস্মিতা বাউরি তাঁর দলের কর্মীদের উস্কানি দিয়ে গিয়েছেন। তাতেই উৎসাহিত হয়ে লাগোয়া হিংজুড়ি এলাকা থেকে সিপিএমের দুষ্কৃতীরা এসে এ দিন বিকেলে নাড়িচ্যার বকুলতলায় আমাদের দলের নেতা ভৈরব সাঁতরা, সুনীল বাজ-সহ কয়েক জনের উপরে হামলা চালিয়েছে।” সুস্মিতাদেবী অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, “আমাদের দলের কেউ এমন হামলা করেনি। আমি সেদিন ওখানে নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে প্রচার করতে গিয়েছিলাম। বিরোধী দলের কর্মীদের মারধর করা, হুমকি দেওয়া, বিরোধী প্রার্থীকে প্রচার করতে বাধা দেওয়া তো ওদের সংস্কৃতি। আমাদের নয়।”
ইন্দাসের ঘটনার ক্ষেত্রে আহত সুশান্ত দিগর হলেন সিপিএমের দিবাকরবাটি শাখা কমিটির সম্পাদক। সিপিএমের তরফে এই মারধরের ঘটনায় তৃণমূলের ছ’জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি। সিপিএমের ইন্দাস জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম দাসের অভিযোগ, “শাসপুর গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত বুধবার রাত আটটা নাগাদ সত্যপীরতলা বাজারে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার সময় স্থানীয় তৃণমূল নেতা দীনবন্ধু সূত্রধরের নেতৃত্বে জনা দশেক লোক তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। ওরা তাঁকে লোহার রড, লাঠি দিয়ে মারতে মারতে বেলেড়া পুকুর পাড়ে ফেলে রেখে পালায়।” খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই সিপিএম নেতাকে উদ্ধার করে।
স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, লোকসভা ভোটের জন্য এলাকায় তাঁরা বেশ কিছু পতাকা, পোস্টার দিয়েছিলেন। তৃণমূলের লোকেরা সব ছিঁড়ে দিয়েছে। গত শনিবার শাসপুরে দিঘলগ্রাম লোকাল কমিটির সদস্য ধনপতি রুদ্র-সহ তিন জনকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার এত দিন পরেও পুলিশ শাসকদলের কাউকে গ্রেফতার না করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলেছেন। অসীমবাবুর অভিযোগ, “ভোটে আমাদের দলের প্রার্থীর হয়ে যাতে কেউ না বেরোতে পারেন, তার জন্যই তৃণমূলের কর্মীরা এলাকায় ফের সন্ত্রাস শুরু করেছে।” ইন্দাস ব্লক তৃণমূলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল হোসেনের পাল্টা দাবি, “আমাদের দলের কেউ মারধর করেনি। সিপিএম প্রার্থীও এলাকায় নির্বিঘ্নে প্রচার করে গিয়েছেন। কিন্তু সিপিএমের প্রচার মিছিলে আর লোক হচ্ছে না। তাই আমাদের দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে ওরা প্রচার পেতে চাইছে।” তাঁর দাবি, দীনবন্ধু সূত্রধর ঘটনার সময় এলাকায় ছিলেন না। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, শাসপুরের ঘটনায় দু’দলের তরফেই অভিযোগ করা হয়েছে।