পণের জন্য স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হল স্বামীর। বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী বৃহস্পতিবার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। সরকারি পক্ষের আইনজীবী সুপ্রকাশ হাট্টি বলেন, “পণের দাবিতে বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে স্ত্রী কুমকুম দাস বৈরাগ্যকে পুড়িয়ে মারার দায়ে স্বামী রাজকমল দাস বৈরাগ্যকে শুক্রবার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শোনানোর পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাও করেছেন বিচারক।”
২০১৩ সালের ২ জুন বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম থানার শ্রীকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা বুদ্ধদেব দাস বৈরাগ্যের মেয়ে কুমকুমের সঙ্গে বোলপুর থানার বিনুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ দাস বৈরাগ্যের ছেলে পেশায় নটকোনা দোকানী রাজকমলের বিয়ে হয়। অভিযোগ উঠেছিল, বিয়ের পর থেকে পণের দাবিতে কুমকুমদেবীকে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে নির্যাতন করত তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পণ বাবদ ৬০ হাজার টাকা দামের একটি মোটরবাইক দাবি করেছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ওই বছর ১৯ অক্টোবর ভোর রাতে কুমকুমের আর্তনাদ শুনে শ্বশুরবাড়িতে পাড়াপড়শিরা জড় হন। ওই সময়ে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় কুমকুমদেবীকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শরীরের আশি শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকেরা তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। ওই দিনই মৃতার বাবা বোলপুর থানায় জামাই রাজকমল-সহ মেয়ের শ্বশুরবাড়ির ৬ জন সদস্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। ২১ অক্টোবর প্রথমে ওই বধূর শ্বশুর বিশ্বনাথ দাস বৈরাগ্য ও ২৩ অক্টোবর স্বামী রাজকমলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ অক্টোবর রাতে মারা যান।
কুমকুমদেবীর মৃত্যুকালীন জবানবন্দী এবং অভিযোগের প্রেক্ষিতে বধূ নির্যাতন, খুন, বিয়ের অল্প দিনের মধ্যে বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু, ষঢ়যন্ত্র, পণ চাওয়া এই সব ধারায় মামলা শুরু করে পুলিশ। চলতি বছর ২ এপ্রিল এই মামলার চার্জ গঠন হয় বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজের আদালতে। স্বামী রাজকমল দাস বৈরাগ্য কেরোসিন তেল ঢেলে তাঁর গায়ে গায়ে আগুন দিয়েছেন বলে মৃত্যুকালীন জবানবন্দীতে কুমকুমদেবী চিকিৎসক ও নার্সদের জানিয়েছিলেন। গ্রেফতারের পর থেকে অভিযুক্ত জেল হাজতে ছিল। এই ঘটনায় বোলপুর এবং বর্ধমানের দুই চিকিৎসক, দুই নার্স-সহ মোট ১৮ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে আদালত। এই মামলায় অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী ছিলেন কার্তিক চক্রবর্তী ও শ্যামসুন্দর কোনার।