সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হবে কবে? —ফাইল চিত্র
জেলায় জেলায় শুরু হয়ে গিয়েছে ধান তোলার কাজ। কোনও কোনও এলাকায় ইতিমধ্যেই কৃষক ঘরে ধান তুলে বস্তা করেও ফেলেছেন বিক্রির জন্য। শুরু হয়েছে অভাবী ধান বিক্রির পালাও। কিন্তু ধানের বাজার দর দেখে রীতিমত শঙ্কিত জেলার চাষিরা!
মরশুমের গোড়ায় ধানের দাম ছিল সর্বাধিক ১২২০ টাকা। সহায়ক মূল্য ছিল ১৩৬০ টাকা। ঘটনা হল, খোলা বাজারে এখনই দাম কমছে ধানের। এতেই কপালে হাত বীরভূমের চাষিদের। সদুত্তর নেই সরকারের কাছেও। সপ্তাহ খানেক আগেও যে ধান বিক্রি হয়েছে ক্যুইন্টাল প্রতি ১২০০-১২২০ টাকায়, সেই ধানের বাজার দর জেলাজুড়ে কোথাও ১১০০ টাকা, কোথাও ১১৪০ টাকা। সমস্যা ধীরে ধীরে প্রকট আকার নিতে শুরু করেছে তার অন্যতম কারণ, এখনও জেলায় সরকারি শিবির করে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হয়নি বলে।
জেলার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা সমস্যায় পড়েছেন, কারণ চাষের সার বীজ কেনার জন্য কিংবা সংসারের খরচ চালানোর জন্য এই সময় ধান বিক্রি করতেই হয় চাষিকে। আর এই অসহায়তাতেই সুযোগ হিসাবে কাজে লাগাচ্ছেন আড়তদার থেকে ধানকল মালিকেরা। এমন অভিযোগ করছেন, জেলার চাষিরা। তেমনই একজন নলহাটি ২ ব্লকের লোহাপুরের আবদুল্লাহিল কাশি। সোমবার সন্ধ্যায় দু’ ক্যুইন্টাল ধান বিক্রি করেছেন ২২০০ টাকায়। আবদুল্লাহিল বলেন, “এ দিন সকাল বেলায় এলাকার এক আড়তদারের কাছে দাম জিজ্ঞাসা করে জেনেছিলাম বাজার দর ১১৩০ টাকা। সেই দরই সন্ধায় ৩০ টাকা কমে গিয়েছে। আগামী কাল হয়ত আরও কমবে! এভাবে ধানের দাম কমতে থাকলে কী ভাবে চলবে?”
তাঁর দাবি, অবিলম্বে সরকার সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু করুক। ধানের বাজারদর নলহাটি ২ ব্লকের মতো এতটা খারাপ না হলেও যথেষ্টই কম দুবরাজপুরে। এই এলাকায় আড়তদারেরা ধান কিনছেন ১১৪০ টাকা থেকে ১১৫০ টাকায়। উপায় না দেখে সেই দরেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের।
ধানের ক্রমহ্রাসমান দর নিয়ে বিরক্ত মহম্মদবাজারের চাষি মহম্মদ জালালউদ্দিন, খয়রাশোলের ভাদুলিয়া গ্রামের চাষি রামকৃষ্ণ পালেরা। তাঁরা বলছেন, “মাত্র কয়েকদিন আগেই ১২০০ টাকায় সামান্য ধান বিক্রি করেছিলাম। সেই দরই সোমবারে ১১৪০ টাকায় এসে ঠেকেছে!” চাষিরা বলছেন, একে এবার শেষের দিকে বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন মার খেয়েছে, তার উপর ধানের দরও যদি ঠিকমত না পাই তাহলে কী করব।
ধানের দর সামান্য কিছুটা বেশি সাঁইথিয়ার মাঠপলসা পঞ্চায়েত এলাকার কুনুরীগ্রামের। চাষি স্বপন বিশ্বাস, বঙ্কিম ভট্টাচার্যরা বলেন, “এখানে বাজারদর ১১৮০ টাকা। কিন্তু চাষের বিপুল খরচ মিটিয়ে এটা কোনও দর হল?”
প্রশ্ন হল, চাষিরা ধানকলগুলিতে যাচ্ছেন না কেন? সহায়ক মূল্যে ধান তো কিনতে বাধ্য এই ধানকলগুলি। চাষিরা মিলিত ভাবে বলছেন, ধানকলে ধান নিয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। প্রথমত প্রত্যন্ত এলাকায় ধানকল নেই। ধানকলগুলি শহরঘেঁষা। সেই কারণ ওখানে ধান বয়ে নিয়ে যাওয়ার খরচ রয়েছে। এছাড়া ধানকলে পৌঁছে যাওয়ার পর ক্যুইন্টালপ্রতি প্রায় ৮-১০ কেজি ধান বাদ দিয়ে নিয়ে থাকে। ফলে বাজার দর গিয়ে দাঁড়ায় ১২২৫-১২৫০ টাকায়।
এছাড়া ধানকলে চাল নিয়ে যাওয়ার আরও কিছু সমস্যা রয়েছে বলছেন চাষীরা। তার একটি চেকে পেমেন্ট। সঙ্গে সঙ্গে টাকা না পাওয়ার সমস্যা রয়েছে বলেও অনেকে পিছিয়ে আসেন।
কেউ কেউ বলছেন, গত বারের ঠিক বিপরীত ছবি এবার। গতবারে সরকারি সহায়ক মূল্য ছিল ১৩১০টাকা। সেখানে বাজার দর ছিল ১৩৮০ টাকা থেকে ১৪১০ টাকা। ফলে আধিকাংশ চাষি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির জন্য সরকারি শিবির বা চালকলে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। এবার নানা সমস্যা সত্ত্বেও সরকারি শিবিরে ধান বিক্রির দিকে তাকিয়ে জেলার ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষিরা।
এ দিকে ঠিক কবে থেকে শিবির করে ধান কেনা শুরু হবে তেমন নির্দেশ এখনও হাতে আসেনি। এমন বলছেন, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শ্যামল মণ্ডল। জেলা খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, “এ ব্যাপারে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। তার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”