মৌ-এর হাতে মার্কশিট তুলে দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রাম থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্কুলের দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। তাই এলাকার আরও অনেকের মতো পাশের গ্রামের মাদ্রাসাতেই পড়তে গিয়েছিল বিষ্ণুপুরের জিয়াবান্দির মৌ হালদার। আর সেখান থেকেই এ বার হাই মাদ্রাসার পরীক্ষায় ষষ্ঠ স্থান পেল সে। সেই সুবাদে মৌকে শুভেচ্ছা জানাতে বিডিও গ্রামে গেলে তাঁর কাছে একটি মাধ্যমিক স্কুল তৈরির আর্জি জানানোর সুযোগও পেয়ে গেলেন গ্রামবাসীরা।
মৌয়ের বাড়ি তালড্যাংরার পাঁচমুড়া গ্রামে। তবে ছোট থেকেই সে জিয়াবান্দি গ্রামে মামার বাড়িতে বড় হয়েছে। এই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই চতুর্থ শ্রেণি পাশ করে সে। তার পরে ভর্তি হয় পাশের গ্রামে বগডহরা সিদ্দিকিয়া হাইমাদ্রাসায়। সেখানকার শিক্ষকেরা জানান, মৌ প্রথম থেকেই পরীক্ষায় ভাল ফল করত। তাই সে যে এই পরীক্ষাতেও ভাল করবে, সে নিয়ে তাঁদের সংশয় ছিল না। পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক তরুণ দে-র কথায়, “মৌ যে মেধাতালিকায় থাকবে, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত ছিলাম। পড়াশোনায় ও কখনও গাফিলতি করেনি।”
মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পরে মৌয়ের বাড়িতে ফোন করে খবর দেন প্রধান শিক্ষক মিরাজউল ইসলাম। এই মাদ্রাসা থেকে আগেও বহু ছাত্রছাত্রী রাজ্যের সেরার তালিকায় উঠে এসেছে বলে জানান তিনি। মৌ বলে, “রাজ্যে প্রথম তিন জনের মধ্যে থাকব বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু তা হল না। তবে আমার ভাল ফলের পিছনে শিক্ষকদের বড় অবদান রয়েছে।” অঙ্ক তার প্রিয় বিষয়। মৌ জানায়, অঙ্ক ও ইংরেজির জন্য তাকে আলাদা করে টিউশন নিতে হয়েছিল। এ ছাড়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। বড় হয়ে ডাক্তার হওয়াই এখন তার স্বপ্ন।
মৌকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে মঙ্গলবারই তার বাড়ি যান বিষ্ণুপুরের বিডিও প্রশান্ত মাহাতো। গ্রামবাসীরা তাঁকে জানান, কাছাকাছি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্কুল না থাকায় জিয়াবান্দি, ছোট আঙারিয়া, খড়কাটার মতো বহু গ্রামের পড়ুয়ারাই হাই মাদ্রাসায় পড়তে যায়। ফলে, মাদ্রাসার উপরে পড়ুয়ার চাপ বাড়ছে। বিডিও বলেন, “জিয়াবান্দি ও লাগোয়া গ্রামে দু’টি নিউ সেট আপ জুনিয়র স্কুল চালু হয়েছে। ক্রমে সেগুলিতে মাধ্যমিক চালু করা গেলে সমস্যা মিটবে।”
মৌয়ের সাফল্যে বেজায় খুশি তার বাড়ি ও গ্রামের সকলেই। তার বড় মামা লালু কর বলেন, “মৌ আমাদের সবার মুখ উজ্বল করেছে। ওকে নিয়ে আমরা গর্বিত।”