নিহতের বাড়িতে তৃণমূল নেতারা। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
সোমবার রাতে নিহত, পাড়ুইয়ের সাত্তোর এলাকার সেই নেতা রবাই চৌধুরীকে নিয়ে রাজনীতি থামছে না। মঙ্গলবার দলের সচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এসে তাঁকে ‘শহিদ’ বলার পর, বুধবার রবাই চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বললেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী। সভাধিপতি বলেন, “রবাই চৌধুরীর স্ত্রী এবং ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই দিনের ঘটনার কথা সবিস্তারে তাঁর পরিবার এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।”
দু’মাস আগেই পুরনো দল তৃণমূল ছেড়ে প্রকাশ্য মঞ্চে বিজেপি-র পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন রবাই। তাঁর মৃত্যুর পর অবশ্য তাঁকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করে তৃণমূল-বিজেপি, দু’দলই রাজনীতির ময়দানে নেমেছে। এবং ওই খুনের ঘটনায় দু’দলই পরস্পরের দিকে আঙুলও তুলতে শুরু করে। গত সোমবার রাতে বাড়ির বিস্ফোরণের পর, বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী যায় ঘটনাস্থলে। সেখান থেকেই উদ্ধার করে রবাইয়ের দেহ। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিউড়ি সদর হাসপাতালে পাঠায়। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “অভিযুক্তদের ধর পাকড়ের জন্য তল্লাশি অভিযান চলছে।”
ঘটনার দিন রাতেই সিউড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে সাংবাদমাধ্যমের কাছে নিহতের ছেলে আজিজুল চৌধুরী বাবাকে বিজেপি কর্মী বলেই দাবি করেছিলেন। যদিও পরের দিনই তিনি বাবার খুনের ঘটনায় পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা নিমাই দাস-সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তারই ভিত্তিতে পুলিশ মঙ্গলবার চার ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করেছে।
এ দিন দুপুরে বিকাশবাবু নিহতের বাড়িতে যান। কথা বলেন তাঁর পরিবার এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। এতে করে আরও পরিষ্কার হয়ে গেল, রবাইকে নিয়ে রাজনীতির ময়দান ক্রমশই ঘোলা হয়ে উঠছে। মঙ্গলবার সিউড়িতে দলের পার্টি অফিসে আজিজুলের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে পার্থবাবু নিহতের দেহে মাল্যদান করে শেষশ্রদ্ধাও জানান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “বিজেপি বীরভূম-সহ বেশ কিছু জেলায় খুন জখমের রাজনীতি শুরু করেছে। রবাই চৌধুরী খুন তারই প্রমাণ।”
বিজেপি অবশ্য পার্থবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের পাল্টা অভিযোগ করেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ যুক্ত নয়। তৃণমূলই রবাইকে খুন করেছে। সবাই জানে রবাই ক’দিন আগেই তৃণমূল ছেড়ে আমাদের দলে যোগ দিয়েছিল।”
বিকাশবাবু এ দিন আলাদা করে নিহতের স্ত্রী তহমিনা বিবি এবং ছেলে আজিজুল চৌধুরীর সঙ্গে ঘরে গিয়ে কথা বলেন। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। ওই দিনের ঘটনা নিয়ে সবিস্তারে জানতে চান তিনি। তহমিনাবিবি, “বিকাশবাবু এসেছিলেন। আমার বাঁচার শেষ সম্বলটুকু ওরা কেড়ে নিয়েছে। ওই অপরাধীরা যেন সাজা পায়, তার আর্জি জানিয়েছি।” একই দাবি নিহতের আত্মীয় শেখ নিয়ামতেরও। তিনি বলেন, “এই দুঃসময়ে পরিবারের পাশে থাকার আর্জি জানিয়েছি।”
এ দিন দুধকুমার বলেন, “পরিবারকে চাপে রাখতে চাইছে তৃণমূল। সে জন্য বাড়িতে গিয়েছিল। রবাই আমাদেরই কর্মী ছিল। তৃণমূল খুন করেছে ওকে। ভয় দেখিয়ে রবাইয়ের পরিবারকে আমাদের বিরুদ্ধে বাধ্য করছে তৃণমূল।”