ছ’ফুঁকো এলাকায় জমেছে জল। জলমগ্ন মাড়গ্রাম মোড়।
কাঁদর ছাপানো জল ছ’ফুঁকোর কাছে রামপুরহাট-দুমকা রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। কোথাও জল দাঁড়িয়ে রয়েছে ২-৩ ফুট। রাতভর বৃষ্টিতে এ ভাবেই ভাসল গোটা রামপুরহাট শহর। সেই সঙ্গে নিকাশি নালার বেহাল অবস্থা ফের সামনে এল। শুধু এ বারই নয়, প্রতি বছর বর্ষায় এমনই দুর্ভোগ পোহাতে হয় এই শহরের বাসিন্দাদের।
বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিতে রামপুরহাট পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ে। রামপুরহাট-দুমকা রাস্তার উপর দিয়ে জল বয়ে যাওয়ায় পুরসভার ১, ২, ৩ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা কার্যত গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন। শহরের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের চাকলা মাঠেও জল জমেছে। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থায় জন্য শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়া রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও দুর্ভোগে পড়েছেন। একই অবস্থা রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দাদেরও। রাতভর বৃষ্টির জন্য ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম পাড়ায় বেশ কিছু কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকাবাড়ির দেওয়ালও ভেঙে পড়েছে। মাড়গ্রাম মোড়, মহাজনপট্টি, চামড়া গুদাম এলাকার রাস্তায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাঁটু সমান জল বইতে দেখা যায়। আবার দুপুর ২টোর পর রাস্তা থেকে জল নেমে যাওয়ার পরে মহাজনপট্টি গলির রাস্তা, কামারপট্টি মোড় থেকে লোটাস প্রেস মোড় সংলগ্ন কালীমন্দির এলাকার নর্দমা নোংরা আবর্জনায় ভরে যায়।
বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য প্রতি বছরই বর্ষায় ঘরে, দোকানে জল ঢুকে যায়। রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় যান চলাচলও ব্যাহত হয়। কিন্তু নিকাশি সমস্যা মেটাতে পুরসভা কিংবা প্রশাসনের তরফ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। রণজয় বর্মন, জয় বর্মনরা জানালেন, রাত ১টার সময় এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে, দোকানঘর, গুদামে জল ঢুকতে থাকে। উপায় না থাকায় এক জায়গায় উঁচু করে ইট দিয়ে জলের গতিপথ আটকানোর ব্যবস্থা করা হয়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভার অপরিকল্পিত কাজের জন্য চার বছর ধরে নিকাশি সমস্যা মিটছে না।
এ দিন, সকালে এলাকার বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি, রামপুরহাট শহর তৃণমূল সভাপতি সুশান্ত মুখোপাধ্যায়-সহ অন্য তৃণমূল নেতারা এলাকায় গেলে স্থানীয় বাসিন্দার ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কাজের মান নিয়ে অভিযোগ করতে থাকেন। বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন খাতে টাকা খরচ করে এলাকার সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বাসিন্দারা। কারণ, পুরসভা যে ভাবে কাজ করেছে তাতে, নালা দিয়ে জল বেরোনোর বদলে ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে আসছে নালাতেই। এ দিন আশিসবাবুকে দেখা যায়, জলের তোড়ে ভেসে আসা কাঁদরের কচুরিপানা সরাতে, আবার কখনও হাঁটু সমান জলে দাঁড়িয়ে স্রোতের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে মানা করতে। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে জল কাদা ঘেঁটে বিধায়ককে দেখা গেল, কামাড়পট্টি মোড় এবং লোটাস প্রেস, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিমপাড়া, বাগানপাড়া এলাকায় দুর্গত মানুষদের খোঁজ খবর নিতে।
মাড়গ্রাম বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় ভাসছে দোকানপাট।
বাসিন্দারা দাবি করেন, কামারপট্টি মোড় পর্যন্ত নালা করে জল নিকাশির ব্যবস্থা করতে হবে। এলাকায় জল নিকাশি পুরসভা থেকে পাম্পিং স্টেশন করার কথা, কিন্তু তাও হয়নি। বিধায়ক সব কিছু শুনে পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারিকে বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পুরসভা এলাকার জল নিকাশি সমস্যা নিয়ে রামপুরহাট মহকুমাশাসক একটি বৈঠকও করেন তিনি। পুরপ্রধান বলেন, “নিকাশি নিয়ে এই শহরের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান দরকার। কারণ, রামপুরহাটের নিকাশি নালাগুলি ছোট। তা ছাড়া, নালার উপর অনেকে অবৈধ ভাবে ব্যবসা, ঘরবাড়ি তৈরি করেছেন।” পুরপ্রধান জানান, প্রায় ৫০টি কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। তাদেরকে আপাতত ত্রিপল দেওয়া হবে এবং সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে কীভাবে নতুন করে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া যায় সে ব্যাপারেও চেষ্টা করা হবে।
কিন্তু সকাল থেকে সকলে এত কিছু করলেও, এত সমস্যার কথা শোনালেও নিকাশি সমস্যা কবে মিটবে, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।
বৃহস্পতিবার ছবিগুলি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।