গ্রামের এক যুবককে খুনের দায়ে দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল বোলপুর আদালত। মঙ্গলবার বোলপুরের অতিরক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী এই সাজা শুনিয়েছেন। সরকারি আইনজীবী ভাস্কর ঘোষ বলেন, “নানুরের পাকুড়হাঁস গ্রামের যুবক দেবাশিস কোনাইকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গ্রামের তিন মাথার মোড়ে লাঠি, রড ও টাঙ্গি দিয়ে খুনের দায়ে ওই গ্রামের বাসিন্দা দুই ভাই চন্দন চিত্রকর এবং রাজকুমার চিত্রকরকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে।”
২০১৩ সালের ২৩ জুন পাকুড়হাঁস গ্রামে ধর্মরাজ পুজো হচ্ছিল। ওই সময়ে ওই গ্রামের কোনাই পরিবারের সঙ্গে চিত্রকর পরিবারের বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে ওই দিন দুপুরে চিত্রকর পরিবারের চন্দন চিত্রকর, রাজকুমার চিত্রকর, সম্রাট চিত্রকর এবং চন্দনবাবুর ছেলে রাজেশ চিত্রকর দেবাশিস কোনাইকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসে। দুপুরে গ্রামবাসী শুভেন্দু দত্তের বাড়ির সামনে তিন মাথার মোড়ে দেবাশিস বাবুকে লাঠি, রড, টাঙ্গি দিয়ে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা করে। সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে বোলপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন দেবাশিসবাবুর মৃত্যু হয়। ২৩ জুন নানুর থানায় চিত্রকর পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নিহত দেবাশিসবাবুর দাদা গৌতম কোনাই। এই ঘটনায় প্রথমে একই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ভাবে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয় নানুর থানায়। দেবাশিসবাবুর মৃত্যুর পর ওই চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ হয়। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেবাশিসবাবুর দেহ ময়না তদন্ত হয়। ২৪ জুন ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩৪১, ৩২৬, ৩৪ ধারায় প্রথমে অভিযোগ এবং মৃত্যুর পরে ৩০২ ধারা যোগ করে মামলা শুরু করে পুলিশ। জুলাই মাসের ৫ তারিখ এই ঘটনার অভিযুক্ত দুই ভাই চন্দন চিত্রকর এবং রাজকুমার চিত্রকরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্ত চার জনের বিরুদ্ধে নানুর পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৪১ এবং ৩৪ ধারায় ওই বছর ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট পেশ করে। চার অভিযুক্তের মধ্যে সম্রাট চিত্রকর এবং রাজেশ চিত্রকর এখন পলাতক। গ্রেফতারের পর দুই অভিযুক্তের জেল হাজতে থেকেই বিচার শুরু হয়।
ঘটনার তদন্তকারী অফিসার, ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক, নিহতের পরিবার এবং গ্রামবাসী তথা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে আদালত। শুক্রবার বিচারক অভিযুক্ত দুই ভাইকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন।