ভোট-উৎসব দেখল পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল

কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের কাঁধে ঝুলছে এ কে ৪৭, এসএলআর, কারবাইন-সহ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। পিঠের ব্যাগে হ্যান্ডগ্রেনেড। যুদ্ধক্ষত্রে নয়। অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপের মোড় ছাড়িয়ে কয়েক কিমি দূরে অতিস্পর্শকাতর বুথ সাহারজুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুধবার এ ভাবেই কড়া নিরাপত্তায় ভোট হল। তাঁদের পাশ দিয়েই বুথে ঢুকে ভোট দিয়ে গেলেন সোনাহারা, কালহা, বোঙাদা, কমলাবহালের মতো গ্রামগুলির বাসিন্দা মালতী মুর্মু, জুমিশ্বর সোরেনরা। বস্তুত পুরুলিয়া জেলার জঙ্গলমহলের রাস্তা থেকে বুথসর্বত্র ঘিরে রেখেছিল আধা সেনা ও পুলিশ।

Advertisement

প্রশান্ত পাল ও সমীর দত্ত

বাঘমুণ্ডি ও বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০০:২৭
Share:

ভোট শেষে ফেরার পালা। পাহারায় জওয়ান। বলরামপুরের পারডিতে সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের কাঁধে ঝুলছে এ কে ৪৭, এসএলআর, কারবাইন-সহ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। পিঠের ব্যাগে হ্যান্ডগ্রেনেড। যুদ্ধক্ষত্রে নয়। অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপের মোড় ছাড়িয়ে কয়েক কিমি দূরে অতিস্পর্শকাতর বুথ সাহারজুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুধবার এ ভাবেই কড়া নিরাপত্তায় ভোট হল। তাঁদের পাশ দিয়েই বুথে ঢুকে ভোট দিয়ে গেলেন সোনাহারা, কালহা, বোঙাদা, কমলাবহালের মতো গ্রামগুলির বাসিন্দা মালতী মুর্মু, জুমিশ্বর সোরেনরা। বস্তুত পুরুলিয়া জেলার জঙ্গলমহলের রাস্তা থেকে বুথসর্বত্র ঘিরে রেখেছিল আধা সেনা ও পুলিশ।

Advertisement

বাঁধডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬৭ নম্বর বুথে গত লোকসভা নির্বাচনে মাওবাদীদের ভোট বয়কটের ডাকে কোনও ভোটই পড়েনি। জঙ্গলের মধ্যে প্রায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো এই ভোটকেন্দ্রে এ দিন সকালে পৌঁছেছেন ভোট কর্মীরা। রাস্তার বাঁকে বাঁকে ছিল নাগাবাহিনীর জওয়ান। প্রিসাইডিং অফিসার গোরাচাঁদ মাহাতো গম্ভীর মুখে বুথের ভিতরে বসেছিলেন। তিনি বলেন, “দুপুর ১টাতেই ৭৫৯ জন ভোটারের মধ্যে ৫৬০ জন ভোট দিয়ে গিয়েছেন।” তিনদলের এজেন্টরা ছিলেন। তাঁরা জানালেন, ভোট ঠিকঠাক চলছে। ১৬১ নম্বর বুথের ছাতনি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই ছবি। সকাল ১০টায় দেখা গিয়েছিল বুথে লম্বা লাইন। প্রিসাইডিং অফিসার প্রভাস মাহাতো জানিয়েছিলেন, সেখানে সকাল ৯টাতেই ৩০ শতাংশ ভোট ফড়ে গিয়েছিল।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পারডি গ্রামে একইদিনে মাওবাদীরা তিনজনকে খুন করে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই বুথেও একটি ভোটও পড়েনি। টানা ছয় কিলোমিটার পথ হেঁটে এ দিন সকালে ভোটকর্মীরা এখানকার বুথে আসেন। বিকেলে ফের ওই পথেই হেঁটে তাঁরা ফিরে যান। খন্দভরা পথে ল্যান্ডমাইনের ঝুঁকি এড়াতে এই সতর্কতা। গাছের আড়লে বা কালভার্টের নীচেও জওয়ানদের কড়া নজর ছিল। বুথের চারপাশে বাঙ্কার।

Advertisement

জেলার জঙ্গলমহলের আর এক প্রান্ত বান্দোয়ানেও মাওবাদী নাশকতার ইতিহাস এখনও টাটকা। ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা এই এলাকাতেও নির্বিঘ্নেই এ দিন ভোট পর্ব মিটেছে। ২০০৩-র অক্টোবরে বান্দোয়ান থানার ওসি নীলমাধব দাস মাওবাদীদের পুঁতে যাওয়া ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে এবং গুলিতে মারা যান। এই এলাকার বহু সিপিএম নেতা-কর্মী খুন হন। ২০০৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিএসএফ জওয়ানদের গাড়ি ল্যান্ডমাইনে উড়িয়ে দেয় মাওবাদীরা। দুই জওয়ান মারা গিয়েছিলেন। সেই অতীতের কথা মাথায় রেখে এ বার বান্দোয়ানের ৯৩টি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মজুত ছিল। এ ছাড়াও সশস্ত্র বাহিনীর জওয়ানরা সীমানা এলাকা বরাবর টহলদারি চালিয়েছেন।

এ দিন দুপুরে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বান্দোয়ানের শিরকা বুথে গিয়ে দেখা গেল বুথের চারপাশ বিএসএফের জওয়ানরা ঙিরে রেখেছেন। বান্দোয়ানের বিডিও মধুসূদন মণ্ডল বলেন, “বান্দোয়ানের প্রতিটি বুথে বড় গাড়ি যেতে পারে। কিন্তু অতীতের কথা মাথায় রেখে জওয়ানরা হেঁটে ওই বুথে গিয়েছেন।” তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে বলে এ দিন সকালে অভিযোগ তুলেছিলেন বান্দোয়ানের সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত বেসরা। প্রশাসন অবশ্য তা মানেনি। তবে বান্দোয়ানে সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য পীযূষকান্তি কর জানিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement