এত দিন দাবিটা ছিল আদ্রা থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত রেলপথের। পরে সেই দাবি হয়ে ওঠে পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম রেলপথ তৈরির। এ বার সেটাও বদলে গেল। বিজেপি দাবি করেছে, পুরুলিয়ার আনাড়া থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত রেলপথ তৈরির নিক রেল মন্ত্রক। ইতিমধ্যেই পুরুলিয়ার জেলা বিজেপি-র তরফে এই রেলপথ নির্মাণ-সহ আরও কিছু দাবি জানানো হয়েছে রেল মন্ত্রকে। আজ। বৃহস্পতিবার এনডিএ সরকারের রেলবাজেটে এই রেলপথ তৈরি নিয়ে কোনও ঘোষণার দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি অসংখ্য সাধারণ মানুষও।
ওই রেলপথ তৈরির পাশাপাশি আদ্রায় উড়ালপুল, আনাড়ায় রেলের কামরার মধ্যবর্তী পুনর্বাসন কারখানার কাজে গতি আনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে আমাদের দল। ফলে এটাই স্বাভাবিক যে, এলাকার উন্নয়নের প্রেক্ষিতে কিছু দাবি আমরা রেল বাজেটের আগে রেল মন্ত্রক-সহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানাব। সেই দাবিগুলি ইতিমধ্যেই আমরা জেলা পার্টির তরফে রেল মন্ত্রকে জানিয়েছি। তবে দাবি পূরণের বিষয়ে কোনও আশ্বাস এখনও মেলেনি।”
প্রথম ইউপিএ সরকারের সময় থেকেই জঙ্গলমহলের তিন জেলা ছুঁয়ে যাওয়া আদ্রা থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। যে দলই রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছে, পুরুলিয়ায় সেই দলের নেতারা নিয়ম করে রেলবাজেটের আগে এই রেলপথ তৈরির দাবি তুলে ধরেছেন রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। তাই জেলা বিজেপি-র এ বারের দাবিও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু বিজেপি চাইছে, আদ্রা নয়, আদ্রা ডিভিশনের অন্দরেই জেলার পাড়া ব্লকের আনাড়া থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত এই রেলপথ তৈরি করা হোক। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা আনাড়ার বাসিন্দা গৌতম চক্রবর্তী বলেন, “পাড়া ব্লকের একাংশ রেল পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। তাই আমরা চাইছি আনাড়া থেকে কাশীপুর হয়ে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত রেলপথ হোক। তা হলে এই জেলার পাড়া, কাশীপুর, মানবাজার ও বান্দোয়ান চারটি বিধানসভা এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ রেল পরিষেবার সুযোগ পাবেন।”
আদ্রা রেলশহরে উড়ালপুল না থাকায় নিত্যদিন রেললাইন পারাপার করতে সমস্যায় পড়তে হয় বাসিন্দাদে। শহরের দক্ষিণ ও উত্তরপ্রান্তের মধ্যে উড়ালপুল নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। অধীর চৌধুরী রেলের প্রতিমন্ত্রী থাকার সময়ে এই উড়ালপুল তৈরি নিয়ে কিছুটা নড়াচড়া হয়েছিল। জয়চণ্ডী পাহাড় স্টেশনে রেলের একটি অনুষ্ঠানে এসে অধীরবাবু ঘোষণা করেছিলেন, প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের সাহায্য না নিয়ে রেল একাই এই উড়ালপুল গড়বে। তার পরে অবশ্য সামান্য অর্থ উড়ালপুল তৈরিতে বরাদ্দ হয়েছিল রেল বাজেটে। গত বছর রেল ও রাজ্যের পূর্ত দফতর (সড়ক) যৌথ সমীক্ষাও করে। হয়েছে মাটি পরীক্ষার (সয়েল টেস্টিং) প্রাথমিক কাজ। তার পর থেকে পুরোপুরি থমকে রয়েছে উড়ালপুল তৈরির প্রক্রিয়া। অন্য দিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় আনাড়ায় এসে রেলের কামরার মধ্যবর্তী পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি শিলান্যাস করেছিলেন। সাহেববাঁধের পাশে প্রস্তাবিত জমিতে কারখানার কাজও চলছিল। কিন্তু রেল বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় সেই কাজও এখন বন্ধ। ফলে কারখানা ঘিরে যে উন্নয়নর স্বপ্ন দেখেছিলেন এলাকাবাসী, তা এখন বিশ বাঁও জলে।
পুর-নির্বাচনের মুখে জেলা বিজেপি চাইছে, আদ্রার উড়ালপুর এবং আনাড়ার রেলের কারখানা নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ করিয়ে একটা ইতিবাচক বার্তা দিতে। বিশেষ করে আনাড়ার প্রকল্প নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে ইতিমধ্যে দরবারও করেছে জেলা বিজেপি। বিকাশবাবু ও গৌতমবাবু আনাড়া এলাকারই বাসিন্দা। ফলে রেল বাজেটে আনাড়ার প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হলে এলাকায় দলের ভিত আরও মজবুত করা সম্ভব বলেই মনে করছেন বিজেপির স্থানীয় কর্মীরা।
সাম্প্রতিক অতীতের রেলবাজেটে জেলার প্রকল্পগুলির ভাগ্যে কার্যত কিছুই জোটেনি। এ বারের রেলবাজেটে পুরুলিয়ার প্রকল্পগুলির ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে কিনা, সেটাই এখন দেখার।