বই মিলবে কবে, বিপাকে পড়ুয়ারা

রাজ্য শিক্ষা দফতর জানিয়েছিল, এ বার নবম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক বই স্কুলে স্কুলে তারাই জোগান দেবে। কিন্তু শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে গেলেও সেই বই পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার অধিকাংশ স্কুলে এখনও পৌঁছয়নি। এর ফলে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৩
Share:

রাজ্য শিক্ষা দফতর জানিয়েছিল, এ বার নবম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক বই স্কুলে স্কুলে তারাই জোগান দেবে। কিন্তু শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে গেলেও সেই বই পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার অধিকাংশ স্কুলে এখনও পৌঁছয়নি। এর ফলে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।

Advertisement

পুঞ্চা থানার চাঁদড়া স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া রাজেশ সিং, পূর্ণিমা সিং জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে তারা স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু নাম ডেকে ঘণ্টাখানেক পরে তাদের স্কুল থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, শিক্ষা দফতর থেকে এখনও তাদের বই পাঠায়নি। জেলা শিক্ষা দফতর ও বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এ সমস্যা শুধু পুঞ্চার ওই স্কুলে বিছিন্ন ঘটনা নয়, পুরুলিয়ার প্রায় ৭৫০টি স্কুলে কমবেশি একই সমস্যা চলছে।

সমস্যার কারণ চলতি বছর থেকে নবম শ্রেণির সিলেবাসের পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। এতদিন স্কুলগুলিতে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের বই বিনামূল্যে মিলত। মধ্য শিক্ষা পর্ষদের ঘোষণা ২০১৫ সাল থেকে রাজ্যের সমস্ত স্কুলে নবম শ্রেণিতে আগের সিলেবাস পরিবর্তন করে নতুন বই চালু করা হচ্ছে। তার মধ্যে বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক বই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে প্রতিটি স্কুলে দেওয়া হবে। বাকি বই বাজার থেকে স্কুলের চাহিদামতো কেনা যাবে।

Advertisement

পুরুলিয়া জেলা পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, স্কুলগুলির পাঠানো পড়ুয়ার পরিসংখ্যান অনুযায়ী বই পাঠানো তারা শুরু করে দিয়েছে। যদিও বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, পড়ুয়ার তুলনায় তাদের কাছে কম বই এসেছে। কোথাও পড়ুয়া অনুপাতে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ বই এসেছে। আবার কোনও কোনও স্কুলে এখন পর্যন্ত একটি বইও যায়নি।

যারা কিছু বই পেয়েছেন তাদের সমস্যা অন্যরকম। যেমন বরাবাজার থানার সিন্দরি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া অনুপাতে সম্প্রতি বই মিলেছে শতকরা ৭০ ভাগ। প্রধানশিক্ষক অমিয় মাহাতো বলেন, “সব পড়ুয়াকে বই দেওয়া যাবে না। এতে অশান্তি ছড়াতে পারে। তাই এখনই বই বিলি করতে পারছি না।” স্কুল সূত্রে জানা হয়েছে, ওই বই এখন বিলি করতে মানা করা হয়েছে। আবার কেন্দা থানার রাজনোয়াগড় ডিপিএম হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক পার্বতীচরণ মাহাতো বলেন, “আমার স্কুলে এখন পর্যন্ত ২৫০ জন নবম শ্রেণির পড়ুয়া আছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ২২৫ জনের বই পেয়েছি। আবার বিভিন্ন মধ্যশিক্ষা কেন্দ্র থেকে আমাদের স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি নিতে হচ্ছে। ফলে আমাকে আবার বই চেয়ে নতুন করে তালিকা পাঠাতে হবে।”

নবম শ্রেণির একটি বইও ঢোকেনি এমন স্কুলও রয়েছে। পুঞ্চার চাঁদড়া স্কুলের প্রধানশিক্ষক গোপাল দে জানান, তাঁদের স্কুলে ২ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বই তাঁরা পেলেও এখনও পর্যন্ত নবম শ্রেণির বই তাঁরা হাতে পাননি। কবে পাবেন তাও জানাতে তিনি পারেননি। তাঁর কথায়, “স্থানীয় স্কুল পরিদর্শকের অফিস ও জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসে যোগাযোগ করেও কবে নাগাদ বই মিলবে স্পষ্ট কিছু জানতে পারছি না।” ওই স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক শিবাজি দত্ত বলেন, “বইয়ের অভাবে পড়াশোনা তো বন্ধ রাখা যায় না। তাই নবম শ্রেণির অন্য অঙ্কের বই এনে যেগুলো নতুন বইতে থাকে মনে হচ্ছে, সেগুলোই শেখাচ্ছি।”

আবার মানবাজার থানার প্রমোদ দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষক মঙ্গল গড়াই জানান, বই না পাওয়ায় তাঁরা নবম শ্রেণির ক্লাস নিতে পাচ্ছেন না। এতে পড়ুয়াদের ক্ষতি হচ্ছে। পরীক্ষার আগে সিলেবাসের কতখানি শেষ করতে পারবেন তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন। পুঞ্চার নপাড়া হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক সাম্যবিপ্লব মাহাতো বলেন, “বই হাতে না পাওয়ায় স্কুলের বিষয় শিক্ষকরাও জানেন না কী ধরনের পড়াতে হবে। বিষয় শিক্ষকরা তাঁদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বিকল্প বই এনে আপাতত নবম শ্রেণির ক্লাসে পড়াচ্ছেন।”

পুরুলিয়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রাধারানি মুখোপাধ্যায় বলেন, “নবম শ্রেণির বই এসেছে। কিছু স্কুলে পাঠানোও শুরু হয়েছে। তবে এখনও কিছু বই বাকি আছে। সর্বশিক্ষা মিশন থেকে পাওয়া ‘ডাইস’-র তথ্য অনুযায়ী স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের পরিসংখ্যান ঠিক আছে কি না যাচাই করে নেওয়া হচ্ছে।” বই পাঠাতে দেরি কেন? এর স্পষ্ট জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, “মাধ্যমিকের পাশাপাশি আমাকে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে। এই চাপ সামাল দেওয়া খুব মুশকিল।”

নবম শ্রেণির পাঠ্য বই বাঁকুড়া সর্বশিক্ষা মিশন দফতরে এসে পৌঁছালেও তা পর্যাপ্ত নয়। সর্বশিক্ষা মিশনের বাঁকুড়া জেলা আধিকারিক অরূপ দত্ত জানিয়েছেন, যত বই চাওয়া হয়েছিল সব আসেনি। যে বইগুলি এসেছে আগামী মঙ্গলবার থেকে তা বিলি করা শুরু হবে। তিনি বলেন, “আমরা ৬০ হাজার বই চেয়েছিলাম, ৫১ হাজার এসেছে। বাকি বইগুলি দ্রুত পাঠাতে রাজ্যকে জানিয়েছি।”

বই হাতে না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা উদ্বেগ চেপে রাখতে পারছেন না। তাঁদের আশঙ্কা, বই সময়মতো হাতে না পেলে পড়ুয়াদেরই আখেরে ক্ষতি হবে। তাই গুরুত্ব দিয়ে আগেই স্কুলে বই পাঠিয়ে দিলে এই সমস্যায় পড়ুয়াদের পড়তে হতো না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement