তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের ভিতরে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক ঠিকা শ্রমিকের। আহত হলেন আরও একজন। বৃহস্পতিবার মেজিয়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের ৭ ও ৮ নম্বর ইউনিটের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সুশান্ত মণ্ডল (২৮) ছাতনার করণজোড়া এলাকার বাসিন্দা। আহত জয়দেব ঘোষের বাড়ি বড়জোড়ার ঘুটগড়িয়ায়।
এই ঘটনায় ফের একবার এমটিপিএসে কর্মরত ঠিকাশ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। যদিও কর্মীরা নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম নিয়েই কাজ করছিলেন বলে দাবি করছেন ওই ঠিকা সংস্থার সুপারভাইজার ফনিভূষণ কেওড়া। তবে ঠিকা সংস্থার কর্মীদের দাবি, কোনওরকম নিরাপত্তা সরঞ্জামই তাঁদের দেওয়া হয় না।
তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুরে এমটিপিএসের ৭ ও ৮ নম্বর ইউনিটের স্যুইচ ইয়ার্ডে কাজ করছিলেন প্রায় ২৪ জন কর্মী। সুশান্তবাবু ও জয়দেববাবু একটি তারের সংযোগ খুলছিলেন। সেই সময় হঠাত্ই দু’জনে ছিটকে পড়েন। তাঁদের উদ্ধার করে তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের নিজস্ব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিত্সক পরীক্ষা করে সুশান্তবাবুকে মৃত বলে জানান। জয়দেববাবুকে দুর্গাপুরের একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তর করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মীরা।
লটিয়াবনি অঞ্চল তৃণমূল নেতা নিমাই মাজি বিদ্যুত্কেন্দ্রে গিয়ে মৃত ও আহত শ্রমিকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তোলেন। বিক্ষোভকারী কর্মীদের মধ্যে বিশ্বনাথ মাইতি, দশরথ ভুঁইয়া, জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায়দের অভিযোগ, “ঠিকা সংস্থা কোনও নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয় না। তার বদলে ওই সব সরঞ্জাম কিনতে প্রতি মাসে মাত্র ২০ টাকা করে কর্মীদের দেওয়া হয়। ওই টাকায় কি সেফটি জুতো, গ্লাভস কেনা যায়?” তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ওই সব সরঞ্জাম দেওয়ার দাবি জানিয়েও পাওয়া যায়নি। তাঁদের মতে, ওই সরঞ্জাম থাকলে হয়তো এ দিনের দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
ঠিকা সংস্থার সুপারভাইজার ফণিভূষণবাবুর অবশ্য দাবি, “ঠিকা শ্রমিকরা নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিয়েই কাজ করছিলেন। হঠাত্ করে ওই তারে বিদ্যুত্ সংযোগ দেওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে আমাদের মনে হচ্ছে।” এমটিপিএসের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দাবি, “স্যুইচ ইয়ার্ডের কর্মীরা নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করবে না তা হতে পারে না? এটা একটা দুর্ঘটনা।” কর্মীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। তাঁদের দাবি, এটা প্রথম নয়। নিরাপত্তা সামগ্রী নিয়ে কাজ না করতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই কয়েকজনের প্রাণ গিয়েছে। বারবার এ ব্যাপারে সতর্ক করা হলেও ঠিকা সংস্থা বা তাপবিদ্যুত্ কর্তৃপক্ষ আমল দেয়নি।