শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
সিপিএম ও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ধারা অব্যাহত। শুক্রবার বীরভূমের ময়ূরেশ্বর থানার মহুলা গ্রামে শতাধিক কর্মী-সমর্থক সহ বিজেপিতে যোগ দিলেন সিপিএমের কানাচি লোকাল কমিটির সদস্য মনসারাম লেট, ডিওয়াইএফআই-এর ময়ূরেশ্বর জোনাল কমিটির সদস্য বিলাসপুর গ্রামের বাসুদেব লেট। এ দিন এলাকার তৃণমূল নেতা বামদেব সাহার নেতৃত্বেও বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপির ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক সভাপতি অতনু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওঁদের দলের নেতারা সাধারণ কর্মীদের পাশে থাকছে না। সেই জন্য নোংরা রাজনীতির প্রতিবাদ করতে এ দিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন সিপিএম ও তৃণমূলের বহু লোকজন।”
এক সময় মহুলা ছিল সিপিএমের ময়ূরেশ্বর থানার অন্যতম শক্ত ঘাঁটি। মহুলা গ্রামের বাসিন্দা বিষ্ণু লেট ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের দু’বারের বিধায়ক ছিলেন। এখনও ১ পঞ্চায়েত সমিতি অধীন কানাচি পঞ্চায়েতের মহুলা গ্রামে সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য আছেন। সেই গ্রামে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগদান ঘিরে বিজেপি জেলা নেতৃত্বের মধ্যে চরম উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি অর্জুন সাহা বলেন, “মহুলা গ্রাম এক সময় সিপিএমের আঁতুড়ঘর ছিল। সম্প্রতি ওই গ্রামে তৃণমূলে বেশ কিছু সিপিএম কর্মী যোগ দিয়েছিল। এখন গ্রামের বেশির ভাগ সিপিএম কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে যোগ দিল।”
দিন কয়েক আগে বাজিতপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সিপিএম সদস্য তাপস দাস বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। শুক্রবার মহুলা ছাড়াও ভেলিয়ান, গুরুচন্দ্রপুর, কুমোড্ডা, বিলাসপুর এলাকা থেকেও শতাধিক সিপিএম কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে যোগ দেন। এ দিন মহুলা গ্রামে বিজেপিতে যোগ দিয়ে বাসুদেব লেট, ডাবলু লেট, সুমিত লেট, সূর্য মাড্ডিরা বলেন, “পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে থাকার জন্য গ্রামে সিপিএম সদস্য আছে বলে তৃণমূল নানা ভাবে গ্রামের ভিতরে নোংরা রাজনীতি করছে। ১০০ দিনের কাজ থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সিপিএম কর্মীদের বঞ্চিত করছে। দলের নেতারা এ ব্যাপারে কোনও রকম আন্দোলন করছে না। সেই জন্য দল ছাড়ছে কর্মী-সমর্থকরা।”
তৃণমূলের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মহুলা গ্রামের এক সময়ের তৃণমূল গ্রাম কমিটির সভাপতি বামদেব সাহা। তিনি বলেন, “তৃণমূলের নীতির কোনও ঠিক নেই। দলে পুরনো কর্মীদের পাত্তা দেওয়া হয় না। কোনও কাজে দলের কিছু নেতাদের দাদাগিরি মনোভাব দল ছাড়তে বাধ্য করেছে সাধারণ সদস্যদের।” তৃণমূল ছেড়ে বামদেব সাহা-সহ তাঁর পঞ্চাশ অনুগামীদের নিয়ে বিজেপিতে যোগদানের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওঁরা তৃণমূলের কেউ ছিলেন না। সুতরাং আমাদের দলে যারা ছিল তারাই আছে। উপরন্তু একমাত্র ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ঢুকেছেন।”
এ দিন বিকেলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে রামপুরহাট থানার আখিড়া গ্রামেও এক অনুষ্ঠানে বিজেপিতে যোগ দেয় কুশুম্বা অঞ্চলের আখিড়া, রামরামপুর, চাকাইপুর গ্রামের শতাধিক সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মী সমর্থক। আখিড়া গ্রামে বিজেপিতে যোগদানকারীদের হাতে পতাকা তুলে দেন বিজেপি জেলা সহসভাপতি শুভাশিস চৌধুরী, জেলা নেতা স্বরূপরতন সিংহ, অরুণ দাস বিশ্বাস। মহুলা গ্রামে পতাকা তুলে দেন বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি অর্জুন সাহা। মহুলা এবং আখিড়া দু’টি জায়গাতেই উপস্থিত ছিলেন বিজেপিতে আসা সদ্য প্রাক্তন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শিবদাস লেট। তিনিও বলেন, “সিপিএমের সঙ্গে এখন মানুষ নেই। তারা এখন পোষ্টারিং-এর রাজনীতি করছে। আস্তে আস্তে গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ বিজেপিতে আসছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “যাঁরা যাচ্ছেন কিছু একটা মোহগ্রস্ত হয়ে।” তাঁর দাবি, “দলের শীর্ষ নেতারা এখনও কেউ দল ছাড়েননি। তাঁরা দলকে আরও বেশি সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবুও আমরা যাঁরা যাচ্ছে তাঁদের ব্যাপারে খোঁজ নেব।”