অবৈধ দোকানের গ্রাসে রাস্তা। —ফাইল চিত্র।
দিনে দিনে ঘিঞ্জি হয়ে ওঠা পুরুলিয়া শহরের পথঘাটের হাল ফেরাতে আজ শনিবার থেকে শহরে অবৈধ দখলদার হটাতে অভিযান শুরু করছে পুরসভা ও প্রশাসন। সম্প্রতি পুরসভা ও প্রশাসন যৌথ বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরেই শহরের রাস্তাঘাট সাজানোর কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ।
পুরবাসীর অভিযোগ, দিনে দিনে এই শহরে ভিড় বাড়ছে। বাড়ছে যানবাহনের চলাচল। অথচ সংকীর্ণ হচ্ছে রাস্তাঘাট। রাস্তার দু’ধার ঘেঁষে অবৈধ দখলদারি বেড়েই চলেছে। পুরুলিয়া শহরের কেন্দ্রস্থলে জেলা প্রশাসনিক ভবনকে ঘিরে থাকা হাসপাতাল মোড়, পোস্টঅফিস মোড়, কোর্ট মোড়, বাসস্ট্যান্ড, হাটের মোড় এবং জেলা পরিষদ ও পুরভবন লাগোয়া সাহেব বাঁধ রোড, রেডক্রশ রোড দিনে দিনে ঘিঞ্জি হয়ে উঠছে। সকাল থেকেই ব্যস্ত রাস্তাগুলিতে লোকজনের যাতায়াত বেশি। বেশির ভাগ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের পথে এই মোড়গুলি রয়েছে। বেলায় অফিসের সময়েও ওই রাস্তায় ভালই থাকে। তার উপরে রাস্তার দু’পাশে অবৈধ দখলদারির ফলে রাস্তা আরও সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনাও।
রাজ্য সরকার পুরুলিয়ার সৌন্দর্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছে। অযোধ্যা পাহাড়, গড় পঞ্চকোট, জয়চণ্ডী পাহাড়, দুয়ারসিনির মতো পাহাড়-জঙ্গলে কিংবা মুরগুমা, দোলাডাঙা, কয়রাবেড়া, বড়ন্তি, ফুটিয়ারির মতো মনোরম জলাধার বা পাকবিড়রা, তেলকূপি, দেউলঘাটার মতো মন্দির ক্ষেত্র অথবা কাশীপুরে পঞ্চকোট রাজবংশের অনুপম শিল্পশৈলীর রাজপ্রাসাদ সবই জেলার গর্ব। পুরুলিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রেও রয়েছে বিশাল জলাশয়— সাহেববাঁধ। পুরসভার এক কর্তার মতে, “দিনে দিনে অব্যবস্থার চেহারা নিয়ে বেড়ে ওঠা এই জেলা শহরের যদি এহেন হাল হয়, তাহলে পযর্টকদের কাছেও অন্য বার্তা পৌঁছতে পারে। বাসিন্দাদের এ নিয়ে অভিযোগ তো ছিলই। তাই পুরসভা ও প্রশাসন যৌথ ভাবে শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে মানভূম স্টেডিয়াম মোড় থেকে জগন্নাথ কিশোর কলেজ, স্টেডিয়াম মোড় থেকে রেল স্টেশন, মানভূম ভিক্টোরিয়া ইন্সস্টিটিউশন মোড় থেকে ভাটবাঁধ, পোস্ট অফিস মোড় থেকে রথতলা, হাসপাতাল মোড় থেকে কোর্ট মোড়, বাসস্ট্যান্ড থেকে হাটমোড় এই রাস্তাগুলিকে সুন্দর করে সাজানো হবে। সাজানো হবে সাহেব বাঁধের পাড়ও। মানুষজন যাতে নিরালায় দু’দন্ড কাটাতে পারেন তারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গত নভেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় প্রথমবার প্রশাসনিক বৈঠক করতে এলে তাঁকে প্রশাসনের তরফে একনজরে পুরুলিয়া সংক্রান্ত যে ছোট্ট পুস্তিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল, তাতেই উল্লেখ ছিল পুরুলিয়া শহরকে সবুজ ও পরিস্কার করে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। এই উদ্যোগ সে সময় নেওয়া হলেও নানা কারণে তা আর এগোয়নি। এ বার অবশ্য পুরসভা ও প্রশাসন এই কাজে নামতে চলেছে।
পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছি। কারণ শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট দিনে দিনে ঘিঞ্জি হয়ে উঠছে।” আজ শনিবার থেকেই এই কাজ শুরু হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পুরপ্রধান। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “শহরের কিছু রাস্তায় অবৈধ দখলদারি বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনাও বেড়েছে। পুরসভা এই অবৈধ দখল সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রশাসন পুরসভাকে সবরকম ভাবে সাহায্য করবে।”
তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে কংগ্রেসও। পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের বিভাস দাস বলেন, “শহরের ঘিঞ্জি এই চেহারাটা বদলাক আমরাও চাই। পুরসভার এই উদ্যোগে আমরা আপাতত বিরোধিতা করছি না। তবে উচ্ছেদ হওয়ার ফলে যাঁরা রুজি হারাবেন, তাঁদের বিকল্প রুজির ব্যবস্থা করতে হবে।”
এ দিকে, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের প্রতিবাদে শুক্রবার শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে প্রতিবাদ সভা করে এসইউসি-র পুরুলিয়া শহর কমিটি। কমিটির পক্ষে রঙ্গলাল কুমার দাবি করেন, “শহরের কিছু রাস্তার ধারে ঝুপড়ি করে যাঁরা কোনও রকমে কুটিরুজি করছেন, তাঁদের উচ্ছেদ করলে বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।” এ দিন প্রশাসনের কাছে তাঁরা এই দাবি জানিয়েছেন।