ধর্ষণ ও প্রতারণা, জেলে গেল ছেলে-বাবা

ধর্ষণের পরে প্রথমে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস। পরে বিয়েতে রাজি হয়েও বিয়ের আসরে গরহাজির থেকে মেয়েকে প্রতারণা। এই দুই অপরাধে বুধবার পুরুলিয়া আদালত এক যুবককে ১০ বছর কারাদন্ডের রায় দেয়। একই সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেও কনেপক্ষকে প্রতারণার দায়ে ওই যুবকের বাবাকেও সাজা শুনিয়েছেন বিচারক। তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। আসামীরা হল বরাবাজার থানার রাখডি গ্রামের যুবক বিশ্বনাথ মাহাতো ও তার বাবা প্রশান্ত মাহাতো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০১:০৮
Share:

আদালত চত্বরে সাজাপ্রাপ্তেরা। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।

ধর্ষণের পরে প্রথমে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস। পরে বিয়েতে রাজি হয়েও বিয়ের আসরে গরহাজির থেকে মেয়েকে প্রতারণা। এই দুই অপরাধে বুধবার পুরুলিয়া আদালত এক যুবককে ১০ বছর কারাদন্ডের রায় দেয়। একই সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেও কনেপক্ষকে প্রতারণার দায়ে ওই যুবকের বাবাকেও সাজা শুনিয়েছেন বিচারক। তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। আসামীরা হল বরাবাজার থানার রাখডি গ্রামের যুবক বিশ্বনাথ মাহাতো ও তার বাবা প্রশান্ত মাহাতো।

Advertisement

এই সাজা ঘোষণা করেছেন পুরুলিয়ার ফাস্ট ট্র্যাক ২ আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সুতপা সাহা। মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী অজিতকুমার সিংহ জানিয়েছেন, বলরামপুর থানা এলাকার এক কিশোরী বছর সাতেক আগে রাখডি গ্রামে তার এক সর্ম্পকিত দিদির বাড়িতে গাজনের মেলা দেখতে গিয়েছিল। সেখানেই বিশ্বনাথের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মেলা দেখাতে নিয়ে গিয়ে ফাঁকা জায়গায় বিশ্বনাথ ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পরে কিশোরী কান্নাকাটি করতে শুরু করায় ওই যুবক শিবমন্দিরে শপথ করে জানায় সে ওই কিশোরীকেই বিয়ে করবে। ঘটনার কথা কাউকে জানাতেও বারণ করে সে। এরপরে আরও কয়েকবার ওই যুবক কিশোরীর সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক করে বলে অভিযোগ।

ওই কিশোরী পরে বিশ্বনাথকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে শুরু করে। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে একদিন স্কুল থেকেই ওই কিশোরীকে পুরুলিয়া শহরে নিয়ে যায় যুবকটি। সেখানে ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অফিস চত্বরে নিয়ে গিয়ে একটি আবেদনপত্র পূরণ করে এক ব্যক্তির কাছে জমা দিয়ে আসে। কিশোরীকে জানায় তাদের বিয়ে হয়ে গেল। সেই রাতটা পুরুলিয়ার একটি লজে তারা কাটায়। পরের দিন বরাবাজারে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটায়। তার পরের দিন রাখডি গ্রামে নিজের বাড়িতে ওই কিশোরীকে নিয়ে যায় যুবকটি। তার আগে বাজার থেকে সে শাঁখা-সিঁদুর কিনে ওই কিশোরীকে পরিয়ে দেয়। ওই কিশোরীকে দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ‘একটু পরে আসছি’ বলে সে সরে পড়ে। ওই কিশোরী বিশ্বনাথের বাড়িতে আগেও গিয়েছিল। কিন্তু বধূর বেশে সে বাড়িতে ঢোকার পরেই গোলমাল শুরু হয়ে যায়। তাকে বিশ্বনাথের বাড়ির লোকজন অপমান করতে শুরু করে। সে দিন ওই কিশোরী ওই যুবকের বাড়িতে আশ্রয় পায়নি। ঘটনাটি যাতে পাঁচকান না হয় তাই সেই রাতেই সাইকেলে চাপিয়ে ওই কিশোরীকে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে সে বাবা-মাকে সব ঘটনা খুলে বলে। এরপর কিশোরীর পরিবার থানায় যান। খবর পেয়ে ওই যুবকের বাড়ির লোকজন আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের বিয়ে দিতে রাজি হন।

Advertisement

সরকারি আইনজীবী জানান, পরে কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে বিয়ের কথাবার্তা পাকা করে যায় বিশ্বনাথের বাড়ির লোকজন। কিশোরীর বাবার কাছ থেকে মোটা টাকা পণও নেওয়া হয়। দু’পক্ষই পাত্র ও পাত্রীকে আনুষ্ঠানিক ভাবে আশীর্বাদ করেন। মেয়ের বাড়ি থেকে বিয়ের সমস্ত আয়োজন সেরে ফেলে। আমন্ত্রণ পেয়ে বিয়ের দিনে অতিথি ও আত্মীয়-স্বজনেরা আসেন। রাতে খাওয়া-দাওয়াও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু বর আর বিয়ে করতে আসেনি।

পরের দিন পাত্রপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, এই বিয়েতে তারা রাজি নয়। তখন ওই কিশোরী নিজেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। পরে ওই কিশোরী আদালতেও অভিযোগ দায়ের করে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে পুলিশ অভিযুক্ত বিশ্বনাথ মাহাতো ও তার বাবা প্রশান্ত মাহাতো-সহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের অগস্ট মাসে আদালতে চার্জশিট পেশ করে। মামলার বিচার শুরু হয় ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে। মামলা চলাকালীন দু’জনের মৃত্যু হয়। বাকি আট জনের মধ্যে ছ’জনকে বিচারক খালাস ঘোষণা করেন।

বিয়ে ঠিক করেও কনে পক্ষের সঙ্গে প্রতারণা করার দায়ে প্রশান্ত মাহাতোকে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০০০ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছ’মাস কারাবাসের নির্দেশ দেয় আদালত। বিশ্বনাথকে ধর্ষণ, প্রতারনা-সহ বিভিন্ন অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ১ বছর কারাবাসের নির্দেশ দেন।

এ দিন আদালতে রায় শুনতে এসেছিল অভিযোগকারিণী। এখন তিনি তরুণী। রায় শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমাকে দিনের পর দিন মিথ্যে কথা বলে আমার নির্যাতন, অপমান করা হয়েছে। বিশ্বাস করেই আমাকে ঠকতে হল।” তাঁর বাবার কথায়, “আমি অত্যন্ত গরিব। চাষবাস করেই আমার সংসার চলে। বিয়ের পণ দিতে ও অনুষ্ঠানের খরচ জোগাতে জমিজমা বিক্রি করেছিলাম। ওরা এমন ভাবে ঠকাবে ভাবতে পারিনি। এতে কার কী লাভ হল?” সাজাপ্রাপ্ত বাবা-ছেলের কাছে এর জবাব পাওয়া যায়নি। পুলিশের ঘেরাটোপে মুখ ঘুরিয়ে তারা গাড়িতে উঠে পড়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement