দলীয় কর্মসূচি সেরে ফেরার পথে ইলামবাজারে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় ধৃত বিজেপি কর্মীদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করল বোলপুর আদালত। যদিও বিজেপির পাল্টা দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার রাত পর্যন্ত পুলিশ শাসক দলের অভিযুক্ত কর্মীদের কাউকেই গ্রেফতার করেনি। ঘটনার পর থেকেই বিজেপির দাবি ছিল, বাড়ি ফেরার পথে তাদের কর্মীরাই তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছিল। পুলিশ উল্টে আক্রান্তদেরই ধরেল নিয়ে যায়। এসডিপিও (বোলপুর) অবশ্য এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন।
রবিবারের ওই ঘটনায় পুলিশ প্রথমেই পাঁচ বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল। পরে আরও চার জনকে ধরা হয়। সোমবার বোলপুর আদালতে হাজির করানো হলে সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল ধৃত ৯ জনেরই জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন। পরে তিনি বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে অস্ত্র নিয়ে জড়ো হওয়া, ষড়যন্ত্র করা, খুনের চেষ্টা-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এসিজেএম সঙ্ঘমিত্রা পোদ্দার তাঁদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। দু’জনকে একদিনের পুলিশি হেফাজত এবং বাকিদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।” ধৃতদের আগামী ১৮ অগস্ট ফের আদালতে হাজির করানো হবে।
প্রসঙ্গত, ইলামবাজার-কয়রা রাস্তা সংস্কার, এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, পুলিশ-প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা-সহ একাধিক দাবিতে রবিবার দুপুরে এলাকায় একটি প্রতিবাদ মিছিল এবং ইলামবাজার বাস্ট্যান্ডে পথসভার আয়োজন করে বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব। ওই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটে গেলেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাড়ি ফেরার পথে দলীয় এক কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। এর পরেই ক্ষিপ্ত বিজেপি কর্মীরা এক তৃণমূল কর্মীকে পাল্টা মারধর করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে তৃণমূলের লোকজনও দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালায় এবং এক কর্মীকে মারধর করে বলে বিজেপির দাবি। গোটা ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। ইলামবাজার বাসস্ট্যান্ডে দু’দলের নেতা-কর্মীরাই জড়ো হয়ে যান। এলাকায় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ঘটনার জেরে বিজেপি এবং তৃণমূল উভয় নেতৃত্বই থানায় একে অপরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অবশ্য ঘটনায় শুধু মাত্র বিজেপি কর্মীদেরই গ্রেফতার করেছে।
এর পর থেকেই ফের জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক কাজের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। বিজেপি জেলা নেতৃত্বের ক্ষোভ, পুলিশ শাসক দলের অঙ্গুলিহেননে নিরপরাধ কর্মীদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। এ নিয়ে রবিবারই অভিযোগ করেছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। যদিও বিজেপির সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন এসডিপি (বোলপুর) সূর্যপ্রতাপ যাদব। তাঁর দাবি, “পক্ষপাতের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ওই ন’জনকে ধরা হয়েছে। তবে, দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তদন্ত করে আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিকে, ওই ঘটনার পরে রাতেই স্থানীয় তৃণমূল ব্লক নেতৃত্ব শতাধিক কর্মী-সমর্থক নিয়ে এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল করেন। এ দিন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ দাবি করেন, “বিজেপি দুষ্কৃতী ও সমাজবিরোধীদের নিয়ে এলাকা অশান্ত করছে। আমাদের এক কর্মীকে মারধর করে মরে গিয়েছে ভেবে নালায় ফেলে দিয়েছিল। ওই ঘটনায় অস্ত্র-সহ বিজেপি আশ্রিত ওই দুষ্কৃতীরা হাতেনাতে ঘটনাস্থল থেকে ধরা পড়েছে। বিজেপির এই সন্ত্রাসের জবাব সাধারণ মানুষ দেবেন। পুলিশকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
বিজেপি অবশ্য মন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক তথা ইলামবাজার ব্লক পর্যবেক্ষক চিত্তরঞ্জন সিংহের প্রতিক্রিয়া, “আসলে তৃণমূল সাধারণ মানুষকে বোকা ভাবছে। কারা সন্ত্রাস করছে, তা তাঁরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছেন। পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের মদতে শাসক দলই গণ্ডগোল পাকাচ্ছে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই এলাকায় সন্ত্রাস তৈরি করছে। উল্টে পুলিশ নিরপরাধদের গ্রেফতার করছে।”