দলের চেষ্টা আপাতত কাজে এল না। প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থায় করা সই যে তাঁদেরই এবং স্বেচ্ছায় তাঁরা সেটা করছেন বুধবার দুবরাজপুরের যুগ্ম বিডিও অসিতকুমার বিশ্বাসকে জানিয়ে দিলেন বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের বিদ্রোহী সাত তৃণমূল সদস্য। প্রসঙ্গত, গত সোমবার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন সাত তৃণমূল সদস্যই। অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ার পর বুধবার সেটা খতিয়ে দেখতেই ব্লক অফিসে ডাকা হয়েছিল বিক্ষুব্ধ সদস্যদের। বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্কুটিনি শেষ। আগামী কাল শুক্রবার সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সদস্যদের চিঠি পাঠিয়ে ভোটাভুটির দিন জানানো হবে। আপাতত জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখ বালিজুড়ি পঞ্চায়েতে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ হয় কি না সে ব্যাপারে ভোটাভুটির দিন ঠিক করা হয়েছে।”
ঘটনা হল, বছর দেড়েক কাটতে না কাটতেই এ ভাবে দলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে পড়ায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছিল তৃণমূল। তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, দলের তরফে চেষ্টা হয়েছিল ওই বিক্ষুব্ধ সদস্যরা যেন স্কুটিনিতে উপস্থিত না থাকেন। দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, ভোটাভুটি করে অনাস্থা পাশ পর্যন্ত বিষয়টি না গড়লে সেক্ষেত্রে কিছুটা মুখ রক্ষা হবে দলের। তবে দলীয় নেতৃত্বের অনুরোধেও নিজেদের অবস্থান তাঁরা বদল করেননি বিক্ষুব্ধ সদস্যরা। যদিও দুবরাজপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র অবশ্য এই নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “ওই সদস্যরা ব্লক অফিসে গিয়েছিলেন কি না জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বলব।”
দুবরাজপুরের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ১১ জন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোট ৯টি আসন নিয়ে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। দু’টি আসন পায় সিপিএম। প্রধান হন তৃণমূলের শিবঠাকুর মণ্ডল। যিনি ব্লক সভাপতির কাছের লোক বলেই পরিচিত। কিন্তু গত কয়েক মাস থেকেই বেশ কিছু বিষয় নিয়ে প্রধানের সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় দলেরই অন্য পঞ্চায়েত সদস্যদের। পঞ্চায়েতের কাজের হিসেব চেয়ে কয়েকটি আরটিআই হয়। কিছুদিন আগে নিখিল বাউড়ি নামে এক তৃণমূল সদস্যের মৃত্যুর পরই প্রধানের বিরুদ্ধে অসন্তোষ আরও বেড়ে যায়। সোমবারই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সদস্য টুম্পা দাস, আশিস বাগদি, সুনীল বাগদি, জামাল খান, কল্পনা দাসদের অভিযোগ ছিল, প্রধান তাঁদের কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই বিভিন্ন বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের কার্যত পাত্তাই দেন না এবং পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজকর্মে (কংক্রিটের রাস্তা তৈরি থেকে বিভিন্ন ধরনের কাজ) আর্থিক নয়-ছয় ও দুর্নীতিতে যুক্ত। বহু বার এই নিয়ে ব্লক নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেও ফল শূন্য। বুধবার ব্লক অফিস থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও একই দাবি করেন সকলে।
তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিরোধী গোষ্ঠী হওয়ায় যাঁরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের টিকিট পাননি এমন অনেক স্থানীয় নেতাও প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনায় পিছন থেকে সমর্থন করছেন। বিরোধী গোষ্ঠীর তেমন অনেকের দাবি, তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি হান্নান খান ও প্রধানের সঙ্গে যোগসাজসের জন্যই আর্থিক নয়ছয়ে সুবিধা হয়ে গিয়েছে। যেটা আরও অস্বস্তিতে ফেলেছে দলকে। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি পঞ্চায়েত প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডল। তাঁর পাল্টা দাবি, “আমি কোনও অন্যায় করিনি। বিভিন্ন কাজে দলের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যরা অন্যায় ভাবে টাকা পয়সা দাবি করে থাকেন। সেটা না দেওয়াতেই ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন ওঁরা।” বিক্ষুব্ধ সদস্যরা অবশ্য প্রধানের কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, “এখন পরিস্থিতি তাঁর বিপরীতে রয়েছে বলেই উনি এমন কথা বলছেন।”