এই এসএমএস পান শিক্ষক দশরথ দাস।—নিজস্ব চিত্র
সকালে ঘুমের ঘোর তখনও ভাঙেনি। মোবাইলে একটা এসএমএস আসতেই চমকে উঠেছিলেন দশরথবাবু। এসএমএস-এ লেখা, প্রিয় গ্রাহক, আপনার ব্যাঙ্কের ডেবিট/এটিএম কার্ডটি ব্লক হয়ে গিয়েছে অবৈধ ভাবে ব্যবহারের জন্য। শীঘ্রই যোগযোগ করুন নীচের নম্বরে। যে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে মেসেজ এসেছে সেই ব্যাঙ্কের নাম করেই। ঠিক কী করা উচিত প্রথমে ভেবে উঠতে পারছিলেন না দুবরাজপুরের মেটেগ্রামের বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক দশরথ দাস। তার পরেই নিজের এটিএম কার্ডের ‘ব্লক’ খুলতে ফোন করেন এসএমএস থেকে পাওয়া নম্বরে।
ফোনের ওপারে প্রথমে মহিলা কণ্ঠ ও পরে পুরুষ কন্ঠ শোনেন ওই শিক্ষক। পুরুষ কণ্ঠটি দশরথবাবুর কাছ থেকে খুঁটিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও এটিএম কার্ডের পিছেনে থাকা চার সংখ্যার নম্বর, গোপন পিন নম্বর জেনে নেন। আর এখানেই চরম ভুল হয়ে গিয়েছিল ওই শিক্ষকের। যখন বুঝতে পারলেন তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ধাপে ধাপে ৪৫ হাজারেপ বেশি টাকা উধাও হয়ে যায় তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে। ২৫ জুন সকালে ওই মেসেজ পাওয়ার পর থেকেই ধাপে ধাপে যখন টাকা টাকা কেনাকাটার নামে উঠছে এবং মেসেজ আসছে। সেটা ভাল করে লক্ষ্য করতে বা বুঝতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষক।
টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার পর সোমবার বিকেলে ব্যাঙ্ক কর্তাদেরকেও মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবারই তিনি দুবরাজপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু টাকা ফেরত পাবেন বা অপরাধী ধরা পড়বেন এমন আশ্বাস নেই কোনও পক্ষ থেকেই। দুবরাজপুর পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। আর ওই রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্কের দুবরাজপুর শাখার প্রবন্ধক গৌর সর্দার বলছেন, “সাইবার ক্রাইমে এ ভাবে খোঁজা সমস্যার। তবে ওই গ্রাহক লিখিত অভিযোগ করলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব।”
দুবরাজপুরের লোবা পঞ্চায়েত এলাকার জোপলাই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক দশরথবাবু বলছেন, “সকালে ব্যাঙ্কের নামে ওই মেসেজ এসেছিল বলেই মস্ত ভুল হয়ে গেল। নিজেকে ভীষণ বোকা মনে হচ্ছে। সংবাদপত্রে পড়ে বা টিভিতে দেখেও এতদিন সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল না। তাই বলে সেই সাইবার ক্রাইমের দৌলতে অ্যাকউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়ে যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি।”
শুধু দুবরাজপুরের ওই রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্ক নয়। এমন মেসেজ আসার পর বেশ কয়েকজন ফাঁদে পড়ে টাকা খুইয়েছেন এমন খবর শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গৌরবাবু। তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত এমন সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জানাননি। তবে ব্যাঙ্কে বড় করে এটিএম কার্ডের পিন নম্বর, কার্ডের পেছেনে থাকা ৪ সংখ্যা নম্বর কাউকে না জানানোর কথা লেখা থাকলেও মানুষ কেন এত ভুল করছেন বুঝতে পারছি না।”