কিষান বিকাশ পত্র এবং মাসিক সঞ্চয় প্রকল্পের জন্য পুরুলিয়া ডাকঘরের এজেন্টকে বিশ্বাস করে লক্ষাধিক টাকা দিয়েছিলেন এক গ্রাহক। টাকা ফেরত তিনি পাননি। উধাও সেই এজেন্টও। ওই টাকা আত্মসাত্ করার দায়ে পুরুলিয়া ডাকঘর কর্তৃপক্ষ এবং অভিযুক্ত এজেন্টকে তিন মাসের মধ্যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। শুক্রবার এই রায় দিয়েছে আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ।
পুরুলিয়া ডাকঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা সুনীত মুখোপাধ্যায় ১৯৯৭ সালে ডাকঘরের অনুমোদিত এজেন্ট অমলাংশু চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১৭টি কিষান বিকাশপত্র কেনেন। যার প্রতিটির মূল্য ছিল ১০ হাজার টাকা। সেগুলি ছিল সুনীতবাবুর স্ত্রী ও ছেলের নামে। কেনার কিছুদিনের মধ্যেই সুনীতবাবুর ছেলের মৃত্যু হয়। যাঁর মাধ্যমে ওই কিষান বিকাশপত্রগুলি সুনীতবাবু কিনেছিলেন, সেই অমলাংশুবাবু সুনীতবাবুকে জানান, সার্টিফিকেটগুলি থেকে তাঁর ছেলের নাম বাদ দিতে হবে। এ কারণে তিনি সেগুলি সুনীতবাবুর স্ত্রীকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে তাঁর কাছ থেকে নিয়ে নেন। ওই বছরই সুনীতবাবু আরও ১ লক্ষ ২ হাজার টাকার ব্যাঙ্ক ড্রাফট অমলাংশুবাবুকে মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প (এমআইএস) করার জন্য দেন। এই ড্রাফটটি পুরুলিয়া ডাকঘরের পোস্টমাস্টারের নামে ছিল। এর কিছুদিন পরে সুনীতবাবু তাঁর দুই মেয়ের নামে কিষান বিকাশপত্র কেনার জন্য পোস্টমাস্টারের নামে আরও ৯০ হাজার টাকার অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক ওই এজেন্টের হাতে তুলে দেন। কিন্তু, প্রকত সার্টিফিকেটগুলি ওই ডাকঘর এজেন্ট কখনওই সুনীতবাবুকে ফেরত দেননি বলে অভিযোগ।
ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, যখন সুনীতবাবু ওই এজেন্টের কাছে পাসবুক দাবি করেন, তখন তিনি একটি পাসবুকের প্রতিলিপি সুনীতবাবুকে এনে দেন। এবং বলেন, আসল পাসবুকটি কয়েক দিন পরে এনে দেবেন। প্রথম ১৭টি কিষান বিকাশপত্রের মেয়াদপূর্তির কিছুদিন আগে ডাকঘরে খোঁজ নিয়ে সুনীতবাবু জানতে পারেন, অনেক আগেই সেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। সন্দেহ হওয়ায় আরও খোঁজ নিয়ে দেখেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার ১ লক্ষ ২ হাজার এবং ৯০ হাজার টাকাও জালিয়াতি করে তুলে নেওয়া হয়েছে। একসঙ্গে এত টাকা খুইয়ে তিনি প্রথমে ডাকঘর কর্তৃপক্ষকে এবং তার পরে কলকাতায় পোস্টমাস্টার জেনারেলকে ঘটনার প্রতিকার চেয়ে চিঠি লেখেন। কোনও জায়গা থেকেই তদন্তের আশ্বাসের বেশি কিছু মেলেনি। শেষ অবধি ২০১২ সালে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন। সুনীতবাবু বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে থাকেন।
বৃহস্পতিবার ক্রেতাসুরক্ষা আদলতের প্রেসিডেন্ট নীরেন্দ্রকুমার সরকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ ডাকঘর কর্তৃপক্ষ ও অভিযুক্ত এজেন্টের উদ্দেশে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে। ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে সুনীতবাবুকে ১৭টি কিষাণ বিকাশ পত্রের উপর সাড়ে ৮ শতাংশ হারে সুদ সমেত ক্ষতিপূরণমূল্য মেটাতে হবে। যেদিন ওই সার্টিফিকেটগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, সেদিন থেকেই এই সুদ দিতে হবে।
একই ভাবে পরবর্তী ১ লক্ষ ২ হাজার এবং ৯০ হাজার টাকার টাকাও সাড়ে ৮ শতাংশ সুদ সমেত সুনীতবাবুকে ফেরত দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারকেরা। এর পাশাপাশি টাকা আত্মসাতের তিনটি ঘটনার প্রতিটির জন্য ৩০ হাজার টাকা করে মোট ৯০ হাজার টাকা এবং মামলার খরচ বাবদ আরও ৩০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রায় দিতে গিয়ে বিচারকেরা মন্তব্য করেছেন, যেহেতু সুনীতবাবু পুরুলিয়ার পোস্টমাস্টারের নামে ড্রাফ্ট ও চেক দিয়েছিলেন এবং অমলাংশু চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ওই ডাকঘরেরই এজেন্ট, তাই পুরুলিয়া ডাকঘর কর্তৃপক্ষ টাকা আত্মসাতের দায়িত্ব কোনও ভাবেই এড়াতে পারেন না।
ডাকঘরের পক্ষে যে আইনজীবী এই মামলা লড়ছেন, সেই আদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি এই রায়ের কোনও কপি এখনও হাতে পাইনি। তাই এ নিয়ে কোন মন্তব্য করব না।” পুরুলিয়ার পোস্টাল সুপার তপন চক্রবর্তীও মন্তব্য করতে চাননি। ডাকঘর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি এই রায়ের কপি অভিযুক্ত এজেন্টের কাছেও পাঠানো হবে বলে আদালত সূত্রের খবর। তবে, ওই এজেন্টের কোনও হদিস মিলছে না। এ দিন তাঁকে আদালত চত্বরে দেখা যায়নি। যোগাযোগের ফোন নম্বরও মেলেনি। সুনীতবাবুর আইনজীবীর সঙ্গেও এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।