জঙ্গি ডেরা ফেরত দীপকে নিয়ে মিছিল ইন্দাসে

তাঁর মুক্তির দাবিতে একসময় লাগাতার অবরোধ, বিক্ষোভ, অনশন, মিছিল হয়েছিল এলাকায়। এক সপ্তাহ আগে জঙ্গিদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া সেই দীপ মণ্ডলকে নিয়ে রবিবার বাঁকুড়ার বিকেলে ইন্দাসে মিছিল করলেন বাসিন্দারা। আবির উড়ল আকাশে। পথের দু’পাশ থেকে দীপের মাথায় ফুল ছুঁড়লেন বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইন্দাস শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৪ ০১:৫২
Share:

উচ্ছ্বাস। মিছিলের সামনের সারিতে দীপ ও তাঁর পরিবজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।

তাঁর মুক্তির দাবিতে একসময় লাগাতার অবরোধ, বিক্ষোভ, অনশন, মিছিল হয়েছিল এলাকায়। এক সপ্তাহ আগে জঙ্গিদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া সেই দীপ মণ্ডলকে নিয়ে রবিবার বাঁকুড়ার বিকেলে ইন্দাসে মিছিল করলেন বাসিন্দারা। আবির উড়ল আকাশে। পথের দু’পাশ থেকে দীপের মাথায় ফুল ছুঁড়লেন বাসিন্দারা।

Advertisement

মিজোরামের মামিত জেলার তুইপুইবাড়ির জঙ্গলে একটি মোবাইল টাওয়ার বসানোর কাজ করতে গিয়ে ২৩ নভেম্বর জঙ্গীদের হাতে অপহৃত হন দীপ ও তাঁর সঙ্গী দুই মিজোরামবাসী। পরে ওই দু’জনকে ছেড়ে দিলেও জঙ্গীরা দীপকে ছাড়েনি। তাঁর জন্য মোটা টাকার মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তারপর দীর্ঘ চারমাস ধরে অনেক টালবাহানা চলেছে। দীপের পরিবার রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়। সেখান থেকে মিজোরাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। সেই সঙ্গে দীপের কোম্পানির সঙ্গেও পরিবার যোগাযোগ রাখেন। সব শেষে ২২ মার্চ তাঁকে মুক্তি দেন জঙ্গীরা। ওই ক’টা মাস দীপের মুক্তির জন্য তাঁর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন যাঁরা, সেই বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক, পড়শি থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা আজ দীপকে কাছে পেয়ে মিছিল করলেন এলাকায়। দিবাকরবাটি গ্রামে দীপের গলায় মালা পরিয়ে, তাসা বাজিয়ে রীতিমতো বিজয় মিছিল শুরু হয়। সন্ধ্যায় তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হল।

মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই দীপকে নিয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে রয়েছে ইন্দাস। এ দিনের অনুষ্ঠানেও দেখা গেল সে বাঁধনভাঙা উচ্ছ্বাসই। এ দিন বিকেল পাঁচটায় ইন্দাসের সুপার মার্কেট থেকে এই মিছিল শুরু হয়। মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন দীপ, তাঁর বাবা নিখিল মণ্ডল, পিসতুতো দাদা অর্ণব মণ্ডল, কাকা রাজীব কুণ্ডু প্রমুখ। ইন্দাসের পীরতলা, বাজার, সিনেমাতলা হয়ে মিছিলে শেষ হয় সুপার মার্কেটে। তখন সন্ধ্যা নেমেছে। শুরু হয় সংবর্ধনা জানানোর অনুষ্ঠান। প্রদীপ জ্বালিয়ে, কপালে চন্দনের তিলক এঁকে দীপকে বরণ করা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজক তথা দীপের জন্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে তাঁর বন্ধু মানস রায়, বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য, দীনবন্ধু পাকড়ে, রাজীব কুণ্ডুু বলেন, “জঙ্গীদের হাত থেকে দীপকে উদ্ধারের জন্য আমরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছি। কত কষ্ট করে যে ছেলেটা মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছে! আমাদের আশা পূরণ হয়েছে। তাই দীপকে সংবর্ধনা জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Advertisement

আর দীপ বলছেন, “গ্রামের আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের সঙ্গে আমার কোনও তফাত নেই। তবে কারও সঙ্গে বিবাদ ছিল না। কিন্তু এতবড় বিপদে পড়তেই বুঝলাম বন্ধু বান্ধবদের পাশাপাশি গ্রামের সকলেই আমাকে কতখানি ভালবাসেন। ওঁদের এই ভালবাসার কাছে আমি সারা জীবন ঋণী।” তাঁর পিসতুতো দাদা অর্ণব বলেন, “ভাইকে আমিই কাজে ঢুকিয়েছিলাম। গুয়াহাটি পাঠিয়েছিলাম। ওকে জঙ্গিরা অপহরণ করায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম আমিই। ওকে ফিরে পেয়ে সবচেয়ে বেশি আনন্দ হয়েছে আমার।”

দীপকে মুক্ত করার ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি তাঁর কোম্পানিও যথেষ্ট সাহায্য করেছে বলে তাঁদের উদ্দেশ্যেও বাসিন্দারা প্রশংসা করেন।এ দিনের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ছিলেন দীপ যে বেসরকারি টেলিকম সংস্থায় কাজ করতেন তার ম্যানেজার বিজয় যাদব। তিনি বলেন, “অনেক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে দীপকে মুক্ত করা গিয়েছে। এতে কিছুটা সময় লেগেছে। দেরিতে হলেও দীপকে তাঁর পরিবারের লোকেদের হাতে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা খুশি।”

খুশি সকলেইবন্ধু বান্ধব, শিক্ষক, খেলার সাথী থেকে ব্যবসায়ী। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে ভিড় ঠেলে বাড়িমুখো দীপকে তাই কাঁধে তুলে নিয়ে উৎসাহী যুবকেরা সোল্লাসে বলেই উঠলেন, “দীপ জিন্দাবাদ, যুগ যুগ জিও।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement