গৃহস্থের দরজায় যেতে হয়নি, অন্য একটা দিন ভিক্ষুকদের

বছর চৌদ্দ আগেই দুর্ঘটনায় ডান পা হরিয়েছেন নিমাই বাউড়ি। কিন্তু সংসার প্রতিপালনের দায়িত্ব কাঁধ থেকে নামেনি বৃদ্ধের। বিধবা হওয়ার পর দুই নাবালক ছেলের দায়িত্ব এখনও যেমন মিনতি বৈরাগ্যের উপরেই। অথবা, ভাগু অঙ্কুর যেমন। বিয়ের পর ছেলে আর মায়ের কাছে থাকে না। নিজের দায়িত্ব নিজেকেই তাই নিতে হয়েছে এই বিধবাকে। ভিক্ষাপাত্র নিয়ে গৃহস্থের দরজায় রবিবার আর যেতে হয়নি এঁদের কাউকেই!

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০১
Share:

দুবরাজপুরে ভিক্ষুকদের নিয়ে চড়ুইভাতি।

বছর চৌদ্দ আগেই দুর্ঘটনায় ডান পা হরিয়েছেন নিমাই বাউড়ি। কিন্তু সংসার প্রতিপালনের দায়িত্ব কাঁধ থেকে নামেনি বৃদ্ধের। বিধবা হওয়ার পর দুই নাবালক ছেলের দায়িত্ব এখনও যেমন মিনতি বৈরাগ্যের উপরেই। অথবা, ভাগু অঙ্কুর যেমন। বিয়ের পর ছেলে আর মায়ের কাছে থাকে না। নিজের দায়িত্ব নিজেকেই তাই নিতে হয়েছে এই বিধবাকে। ভিক্ষাপাত্র নিয়ে গৃহস্থের দরজায় রবিবার আর যেতে হয়নি এঁদের কাউকেই!

Advertisement

পৌষের রোদে পিঠ দিয়ে দাঁতিনদিঘির ধারে জমিয়ে বনভোজনে সারলেন ওঁরা। একদিনের জন্য হলেও রবিবারের রুটিনটা বদলে গিয়েছে ওঁদের। ওঁরা সকলেই দুবরাজপুরের আশপাশ অঞ্চলে বসবাসকারি ভিক্ষাজীবী। এলাকার ভিক্ষুকদের একটি অন্যরকম দিন উপহার দিলেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক।

প্রতি রবিবার দুবরাজপুর আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিমাই, মিনতি বা বুড়ি দাস বৈষ্ণবের মতো বহু ভিক্ষাজীবীকে দুবরাজপুর বাজার এলাকায় ভিক্ষা করতে দেখা যায়। কিন্তু এ দিন সকলেরই দেখা মিলল বনভোজনের আসরে। জমিয়ে খাওয়া দাওয়ার সঙ্গে চলল গান এবং খোল কর্তালের তালে দু’বাহু তুলে নাচ। এক দিনের এমন জীবন অভিজ্ঞতা থেকে সকলেই খুশি। একজন ভিক্ষাজীবী বললেন, “প্রতিদিনই তো লড়াই চলে। আজ একটু আনন্দ করলাম। যাঁরা এমন সুযোগ করে দিয়েছেন, তাঁদের আর্শীবাদ করছি আমরা।”

Advertisement

এই আয়োজনের কারণ? ভিক্ষাজীবীদের নিয়ে বনভোজেনের মূল উদ্যোক্তা রাজু বাউড়ি বলেন, “নিজে একাটা ছোট্ট ব্যবসা চালাই। প্রতি রবিবারই ওঁদের সঙ্গে কথা হয়। অনেকের কাছ থেকেই শুনেছি কোনও পরিস্থিতিতে ওঁরা ভিক্ষাপাত্র হাতে নিতে বাধ্য হয়েছেন। নিজেদের পিকনিক করার কথা মনে পড়ল। আর তখনই মনে হল, ওঁদেরকে ওই মজা দিতে পারলে ভাল হত।” প্রাথমিকভাবে এই ভাবনা থেকেই উদ্যোগের শুরু। রাজুবাবুর প্রস্তাব শুনে এগিয়ে আসেন তাঁর বন্ধুরা। রাজুর সহযোগী সমীর বাউড়ি সুভাষ কর্মাকার। সন্তু বক্সী, দিব্যেন্দু সূত্রধরেরা জানালেন, প্রত্যকের নাম ঠিকানা জানা, যোগাযোগ করা, দিন ঠিক করা এসব করতেই বেশ কিছুদিন সময় লাগল। তবে কয়েকদিন আগে করতে পারলে আরও কয়েকজনকে পাওয়া যেত। কারণ, অনেকেই গঙ্গাসাগর মেলা গিয়েছেন।

যত্ন করে যেমন পরিবেশন করা হল, সকলে খেলেনও তৃপ্তি করেই। এমনকী এঁটো পাতাও কাউকে তুলতে দেন নি উদ্যোগী যুবকেরা। অতিথিদের খাওয়ার পর নিজেরা খাওয়া দাওয়া সারলেন। আয়োজনে বাহুল্য না থাকলেও সকলেই তৃপ্ত, বলছিলেন তাঁরা। অনেকেই বলেছিলেন যে তাঁরা নিরামিষ খান জানালেন রাজুরা। তাই সকালে টিফিনে ছিল মুড়ি, ঘুগনি, বোঁদে। দুপুরের মেনু ছিল খিচুড়ি, বাঁধাকপির তরকারি, আলুপোস্ত, এবং মিক্স চাটনি। পিকনিকের জায়গায় যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল যন্ত্র চালিত ভ্যান।

কেমন হল খাওয়া দাওয়া?

যাবার সময় নিমাই, মিনতি, ভাগু, বুড়িরা বললেন, “খাওয়াটা বড় কথা নয়। যে সম্মান ওঁরা আমাদের দিলেন, নিজের লোকের কাছেও যে এমন সম্মান আমরা পাই না!”

—নিজস্ব চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement