প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিল ওরা। কিন্তু আগের মতোই মনিকা বাগদি, ইফতিয়ার আলম, প্রণব পাত্র বা মেঘা মিত্রদের ক্লাস করতে হয় মেঝেতে বসেই। খয়রাশোলের বড়রা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসঘরে বসার কোনও বেঞ্চই নেই! তাই বাধ্য হয়ে গাদাগাদি করে কোনও রকমে মেঝেতেই পড়াশোনা চলে। আর স্কুল ব্যাগে বই-খাতা ছাড়াও পড়ুয়াদের নিয়ে আসতে হয় বসার আসনও। স্কুলের পরিকাঠামোর এই হাল ক্ষুব্ধ করেছে অভিভাবকদের। তাঁদের প্রশ্ন, এলাকার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ছেলেমেয়েদের জন্য বসার নূন্যতম ব্যবস্থাটুকু থাকবে না?
স্কুল সূত্রের খবর, পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বড়রা স্কুলে দু’হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী পড়ে। এক একটি ক্লাসে ছাত্রছাত্রীর গড় প্রায় ১৭০-১৮০ জন। শুধু পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতেই পড়ে ৫২৩ জন। এই বিপুল পড়ুয়ার জন্য স্কুলটিতে অঢেল ক্লাসঘর রয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যা বসার বেঞ্চ নিয়ে। দীর্ঘ দিন ধরে স্কুলে প্রয়োজনের তুলনায় বসার বেঞ্চের সংখ্যা বেশ কম। জেলা পরিষদের টাকায় নতুন বেঞ্চ তৈরির পরে শ’খানেক পড়ুয়া বসার জায়গা পেলেও সামগ্রিক সমস্যা মেটেনি। তার জেরে স্কুলের একটি বড় অংশে পঠনপাঠন নিয়ে অসুবিধা রয়েই গিয়েছে। সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ কাঞ্চন অধিকারীও। তিনি বলেন, “দীর্ঘ দিন থেকেই স্কুলে বেঞ্চের অভাব রয়েছে। বেঞ্চ তৈরি করার টাকা চেয়ে খয়রাশোলের ব্লক ও জেলাপরিষদে স্কুলের তরফে আবেদন জানানো হয়েছিল। জেলা পরিষদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ায় কিছুটা সুরাহা হয়েছে। কিন্তু এখনও তিনটি শ্রেণিকক্ষে পড়ুয়াদের বসতে হয় মেঝেতেই।”
সমস্যা মেটাতে কী করেছেন?
খয়রাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার জানান, স্কুলের আবেদন পেয়ে তিনি ‘পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদে’র টাকায় সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ করেছিলেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব গ্রহণ না করায় তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। অন্য দিকে, জেলার সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, “খয়রাশোলের দু’টি স্কুলকে ৫০ হাজার টাকা করে নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হয়েছে। এর বেশি একটি স্কুলকে দেওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।” প্রশাসনের এই মনোভাবে ক্ষোভ বাড়ছে অভিভাবক শ্যামাপদ সাধু, ঝর্ণা বাগদি, ইনতাজ শেখদের। তাঁরা দুষছেন স্কুলকেও। তাঁরা বলছেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন একটু সক্রিয় হলেই ছেলেমেয়েদের আর মেঝেয় বসতে হয় না।”
এ দিকে, প্রশাসন সূত্রের খবর, সাধারণত স্কুলের বেঞ্চ তৈরির জন্য তেমন কোনও নির্দিষ্ট ফান্ডে টাকা দেওয়া হয় না। স্কুলই কোনও ভাবে এর ব্যবস্থা করে থাকে। তবে, নির্দিষ্ট ফান্ড না থাকলেও সর্বশিক্ষা মিশন থেকে প্রতি বছর স্কুলগুলি উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ নির্দিষ্ট অঙ্কের একটা টাকা পেয়ে থাকে। এ ছাড়া অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য সর্বশিক্ষা যে টাকা দেয়, হিসেব করে খরচ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকা বেঁচে যায়। নির্ধারিত শ্রেণিকক্ষের টাকার জন্য বরাদ্দের অঙ্কটা যথেষ্টই। যদিও ‘ইউসি’ (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) সেই খাতেই দিতে হবে। সেখান থেকেও বেঞ্চের জন্য খরচ হতে পারে। পাশাপাশি প্রতি বছর স্কুল পড়ুয়াদের কাছ থেকে স্কুলের উন্নয়ন খাতে ফি বাবদ কিছু টাকা সংগৃহীত হয়। সেখান থেকেও ওই বেঞ্চ তৈরি করা যেতে পারে।
যদিও টিচার-ইন-চার্জ বলছেন, “আমার স্কুলও সর্বশিক্ষার অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের টাকা পেয়েছে। তবে, প্রতি ক্ষেত্রেই শ্রেণিকক্ষের নির্দিষ্ট মাপের থেকে বাড়িয়ে সেগুলি করায় টাকা বাঁচেনি।” তাঁর আরও দাবি, স্কুল উন্নয়ন খাতে যে টাকা পড়ুয়াদের কাছ থেকে প্রতি বছর নেওয়া হয়, সেই টাকা বিভিন্ন ভাবে খরচ হয়। সেখান থেকে বেঞ্চ করানো জন্য লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে ইফতিয়ার, মনিকাদের সমস্যা কীভাবে মিটবে তার সদুত্তর নেই কারও কাছেই।