গ্রাম্য বিবাদের জেরে কুপিয়ে খুন করার দায়ে যাবজ্জীবন হল এক ব্যক্তির। পেশায় পুরোহিত ওই ব্যক্তির নাম অশ্বিনী সিংহ লায়া। সোমবার এই রায় দিয়েছেন পুরুলিয়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক কানাইয়া প্রসাদ শাহ।
সরকারি আইনজীবী মমতাজ হোসেন আনসারি জানিয়েছেন, ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঘটনা। সে দিন সন্ধ্যার সময়, আড়শা থানা এলাকার কেন্দুয়াডি গ্রামের বাসিন্দা মানিকচন্দ্র মাহাতো পাশের গ্রাম হেঁটজাড়ি থেকে মোটরবাইকে ফিরছিলেন। পরের দিন সকালে মানিকবাবু বাড়ি না ফেরায় তাঁর বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। রাস্তার পাশে ধানখেতে তাঁর রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে রয়েছে শুনে ছেলে বিমল মাহাতো গিয়ে বাবার মৃতদেহ শনাক্ত করেন। সরকারি আইনজীবী বলেন, “আততায়ীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে আঘাত করার পাশাপাশি, মৃত্যু সুনিশ্চিত করতে গামছা জাতীয় কোনও কাপড় দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে দিয়েছিল অপরাধী।” ময়নাতদন্তে অবশ্য প্রমানিত হয় যে, ধারাল অস্ত্রেই মানিকবাবুর মৃত্যু হয়েছিল।
মৃতদেহ শনাক্ত করে বিমল তাঁদের গ্রামের ওই পুরোহিত সহ মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে আড়শা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ওই বছরের জুন মাসে আদালতে চার্জশিট পেশ করে। বিচার শুরু হয় ২০১২ সালের মার্চ মাসে। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিচারক অভিযুক্তদের মধ্যে অশ্বিনী সিংহ লায়াকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। প্রমাণের অভাবে অন্য অভিযুক্তেরা অব্যাহতি পেয়ে যান।
সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, এই পুরোহিতকে নিয়েই গ্রামে একটি সভা বসেছিল। পুরোহিতের কাজকর্ম নিয়ে গ্রামে কিছু অভিযোগ ছিল। সেই সভায় পৌরহিত্য করেছিলেন মানিকবাবু। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি পুরোহিতের বিপক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। তাতে, অশ্বিনী সিংহ লায়ার বদলে অন্য এক জন পুরোহিতকে গ্রামে পুজোর কাজে নিয়োগ করা হয়। তার পর থেকেই মানিকবাবু হুমকি পেতেন যে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।
সরকারি আইনজীবী বলেন, “এই খুনের ঘটনা সেই ঘটনার রাগের জের। সাক্ষ্য প্রমাণে তাই উঠে এসেছে। এ দিন বিচারক অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিনমাস কারাবাসের আদেশ দিয়েছেন।”