আত্মঘাতী সারদা-এজেন্ট যাদব মাঝির বাবা-মা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
সারদা কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ শুনে এক বছর পরে ফের আরও একবার কাঁদলেন বৃদ্ধ দম্পতি।
গত বছর এই সময়েই তাঁদের মেজো ছেলে যাদব মাঝির দুর্গাপুরের ভাড়াবাড়িতে গলায় ফাঁস দেওয়া দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তখনই বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির এই দম্পতি প্রথম জানতে পেরেছিলেন, যাদব সেখানে শুধু কাঠের কাজই করতেন না, সেই সঙ্গে সারদা নামের একটি সংস্থার এজেন্ট হিসেবে লোকের কাছ থেকে টাকাও তুলেছিলেন। সংস্থাটির ভরাডুবির জেরেই তিনি আত্মঘাতী হন।
ছেলের মৃত্যুতে প্রথমে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন যাদবের বাবা পূর্ণজয় মাঝি ও মা ভেলুমতি মাঝি। পরে সব জানতে পেরে একটা বছর ধরে শুধু হা-হুতাশ করে গিয়েছেন তাঁরা। আর বার বার মনে মনে আউরেছেন, তাঁর ছেলের মৃত্যুর জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের কি শাস্তি হবে না? গত এক বছর ধরে সারদা কর্তা সুদীপ সেন ও তাঁর কিছু সঙ্গী ধরা পড়ার পরে রাজ্য রাজনীতিতে এ নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। পুলিশের তদন্ত, ইডি-র তদন্তে একের পর এক রাজনৈতিক নেতার নাম উঠে এসেছে। তারই মধ্যে বিরোধীদের সিবিআই তদন্তের দাবিও বার বার উঠেছে। লোকসভা নির্বাচনের মুখে এ নিয়ে রাজ্যের নেতাদের গলাও চড়েছে। তাই ওই মামলার গতি কী হবে তা নিয়ে রাজ্যে সারদা-কাণ্ডে অন্য স্বজন হারানোর মতোই যাদবের বাবা-মাও উৎকণ্ঠায় ছিলেন।
এ দিন তাই সুপ্রিম কোর্টের সারদা-কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের নির্দেশের খবরে তাঁদের মতোই পড়শিরাও স্বস্তি পেয়েছেন। আশা করছেন, এ বার হয়তো সুবিচার পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে কিছুটা ক্ষোভও রয়েছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ছেলে হারানোর শোকে কাঁদতে কাঁদতে ওই বৃদ্ধ দম্পতি এ দিন বলেন, “আমার ছেলের মতোই সারদার আরও কতজন এজেন্ট ও আমানতকারী আত্মহত্যা করেছেন। আর এতদিন পরে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ এল! এত সময় লাগল কেন? অনেক আগেই ওই সংস্থার আসল চরিত্র সরকারের সর্বসমক্ষে তুলে ধরা উচিত ছিল। তা হলে আমাদের ছেলেকে হারাতে হত না।”
যাদবের মৃত্যুর পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছেন ওই দম্পতি। যাদব ছাড়াও তাঁদের দুই ছেলে রয়েছেন। বড়ছেলের মুদির ছোটখাটো দোকান আর ছোট ছেলে ভ্যানরিকশ চালান। বৃদ্ধ দম্পতি ছেলেদের সঙ্গে থাকেন না। পূর্ণজয়বাবু বলেন, “ছেলে দুর্গাপুরে কাঠের কাজ করত। এটুকুই আমরা জানতাম। কিন্তু সে কবে সারদার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জানতে পারিনি। টাকা তোলার কাজ সে দুর্গাপুরেই করেছিল। পরে জানতে পারি সে নিজেও ওই সংস্থায় লক্ষাধিক টাকার আমানত করেছিল। কিন্তু সেই টাকাও ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা কেউ করলো না।” তাঁর আক্ষেপ, জমিজমাও নেই। গায়ে গতরে পরিশ্রম করার জোরও তাঁদের নেই। দুই ছেলে ও পড়শিদের সাহায্যে তাঁরা কোনওরকমে দু’টি খেয়ে পরে বেঁচে রয়েছেন।
পূর্ণজয়বাবু বলেন, “দুর্গাপুরের ভাড়াবাড়িতে যাদব মোটরবাইক কিনে রেখেছিল বলে শুনেছিলাম। কিন্তু সে সব কিছুই পাওয়া যায়নি। ছেলে দুর্গাপুরেই জমি কিনেছিল বলে শুনেছি। সে সব কোথায় কিছুই জানি না।” আশাও ছেড়ে দিয়েছেন। এখন শুধু ছেলের মৃত্যুর জন্য দোষীদের কঠোর শাস্তি দেখতে চান তাঁরা।