বৃষ্টিতে মার খাচ্ছে সিউড়ির পুজোর বাজার
রাত পেরোলে মহালয়া। অকাল বোধনের মতোই অকাল বৃষ্টি মন্দার বাজারে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে রাঢ়বঙ্গের শহর ও গ্রামের মানুষদের। মন্দার বাজারে ক্রেতা কম বেশ কিছুদিন ধরেই। নগদের ঘাটতিতে প্রভাব পড়েছে পুজোর বাজার থেকে দৈনন্দিন বাজারেও। পরিস্থিতি একটু বদলানোর পরিবেশ তৈরি হলেও বাধ সেধেছে তিনদিন ধরে চলা নিম্নচাপের বৃষ্টি। বোলপুর থেকে মহম্মদবাজার সর্বত্রই বৃষ্টির জন্য মার খেয়েছে ব্যবসা। বৃষ্টিতে শুকনো জমি চাষের যোগ্য হলেও সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় ফসল মার খেয়েছে। চাষিরা তাই এই বৃষ্টিকে ভরসা করতে ভয় পাচ্ছেন। কৃষি নির্ভর জেলায় চাষির হাতে নগদ টাকা না থাকায় পুজোর বাজারের মতো বাড়তি খরচে রাশ পড়েছে। ভাটা পড়েছে মহম্মদবাজার ব্লকের পাঁচামির পাথর খাদানের কাজেও।
স্থানীয় পোশাক বিক্রেতা ঠাকুরদাস মণ্ডল, শম্ভুনাথ শর্মাদের মতো অনেকেই জানান, পুজোর আগে মন্দা, মন্দা কাটতে না কাটতেই অসময়ের বৃষ্টি – সবমলিয়ে ক্ষতির মুখে ব্যবসা। বিক্রি যতটুকু হচ্ছে তাতে দোকানের অন্যান্য খরচ, কর্মচারীদের বেতন আর মালপত্র কিনতে লগ্নি করা টাকার অঙ্কের ধারেকাছে পৌঁছচ্ছে না, লাভ তো দূর অস্ত। অথচ ফি বছর পুজোর সময় ক্রেতাদের সামলাতে বাড়তি লোক নেওয়া হয়। কিন্তু এবার উল্টোছবি। কর্মচারি কমিয়েছেন কয়েকজন দোকানদার। রোজের বেতনে প্রতিবছর পুজোর মুখে পোশাকের দোকানে কাজ করেছেন সঞ্জয় বাগদি, নয়ন সরকারেরা বলেন, ‘‘সারা বছর এটা ওটা করে চলে। পুজোর সময় দোকানে কাজ করে যেটুকু টাকা আসে তা দিয়ে খাওয়া পরার পাশাপাশি বাড়ির লোকেদের পুজোর জামাকাপড় কিনে দিতে পারি। এবার কোথাও কাজই পেলাম না।’’ সমস্যায় পড়েছেন ছোট ব্যবসাদারেরা। মহাজনের কাছ থেকে মাল নিয়ে টাকা শোধ করতে না পেরে অনেকে ঋণ নিয়েছেন। কেউ ব্যাঙ্ক থেকে, কেউ আবার মহাজনের কাছ থেকেই। কিন্তু পুজোর একমাস আগে তোলা সামগ্রী পড়ে আছে একই অবস্থায় দেখান সিউড়ি, সাঁইথিয়া, মহম্মদবাজারের বেশ কয়েকজন পোশাক বিক্রেতা। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির জের বৃহস্পতিবারও ছিল। কোথাও বেশ জোরে, কোথাও ঝিরঝিরে। সিউড়ি, সাঁইথিয়া, নলহাটির বহু ব্যবসায়ীই বলেন, ‘‘পুজোর বাজার একে খারাপ তার উপরে এই বৃষ্টিতে তিনদিন ব্যবসা একেবারে লাটে উঠেছে। দোকানের বাইরে পোশাক সাজানো যাচ্ছে না। বেশকিছু পোশাক নষ্টও হয়েছে।’’ বোলপুরেও সারাদিন নাগাড়ে বৃষ্টিতে বাজারে যেমন লোকজন বিশেষ দেখা যায়নি তেমনই পুজোর প্যান্ডেলের কাজও থমকে গিয়েছে।