একটা সিদ্ধান্ত। তার জেরে চেনা স্রোতটা বেমক্কা বইছে উল্টো দিকে। এও যেন অকালে ‘ঘর ওয়াপসি!’
দু’পয়সা বেশি রোজগারের আশায় বরাবাজারের সুমিত্রা মাহাতো, বোরো থানার উকিল কিস্কু, চিমু হাঁসদাদের কেউ ভিন্ জেলায় কেউবা ভিন্ রাজ্যে শ্রমিক হিসাবে গিয়েছিলেন। নোট বাতিলের প্রভাবে মজুরি অনিয়মিত হয়ে পড়ায় কোনও ক্রমে ভাড়ার টাকা জোগাড় করে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। দক্ষিণ পুরুলিয়ার বিভিন্ন থানা এলাকায় এখন এমন ছবি দেখা যাচ্ছে। তার জেরে স্থানীয় বাজারে মন্দার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বরাবাজারের সিন্দরি অঞ্চলের শিমূলডাঙা গ্রামের সুমিত্রা মাহাতো নিজের জাকে সঙ্গী করে অগ্রহায়ণ মাসের গোড়ায় বর্ধমানের গলসি গিয়েছিলেন। এ বার জনপ্রতি ১৮০ টাকা মজুরি এবং ২ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা ছিল। দুই জায়ে মিলে প্রথমে ধান কাটার কাজে পরে আলু বীজ লাগানোর কাজ করেছিলেন। রবিবার দু’জনেই বাড়ি ফিরে এসেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, সাধারণত এই এলাকার শ্রমিকেরা নিজের জমির দু’এক বিঘা ধান কেটে বাড়িতে জমা রেখে বাড়তি উপার্জনের আশায় পুব যান। ফিরে এসে ওই ধান ঝাড়েন। যাঁদের নিজস্ব জমি নেই, তাঁরা আরও অনেক আগেই রওনা দেন। সবাই পৌষ সংক্রান্তিতে বাড়ি ফেরেন। জমানো টাকায় ধার শোধ করা, গেরস্থালির দু’একটা বাড়তি জিনিস কেনা হয়।
পৌষমাস পড়ার আগেই বাড়ি ফিরলেন কেন?
সুমিত্রার জবাব, ‘‘মনিবের কাছে দুই জায়ের মজুরি বাবদ ৫৪০০ টাকা জমে আছে। ভেবেছিলাম, আরও কিছু টাকা জমলে একেবারে বাড়ি ফিরব। তা ছাড়া ভাইঝির বিয়ে। টাকা দরকার। কিন্তু মনিব টাকা জোগাড় করতে পারেননি। আমরা দেখেছি উনি ব্যাঙ্কে কয়েক বার গিয়েও ফিরে এসেছেন। বাধ্য হয়ে টাকা বাকি রেখে আমাদেরও ফিরতে হয়েছে।’’
বোরো থানার রামপুর গ্রামের উকিল কিস্কু এবং চিমু হাঁসদাও মঙ্গলবার বাড়ি ফিরেছেন। দু’জনেই চেন্নাইয়ে একটি নির্মাণ সংস্থার অধীনে কাজ করেন। প্রতিদিন ৩৫০ টাকা করে মজুরি পান। দু’জনেই ভেবেছিলেন, পৌষমাসের শেষে বাড়ি ফিরবেন। চিমুর কথায়, ‘‘বাবার শরীর খারাপ। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে বলে ফোনে জানতে পারি। আমার অ্যাকাউন্ট নেই। বোরোর এক ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে বাড়িতে ফোন করতাম। এ বার বহু চেষ্টা করেও টাকা জমা দিতে পারিনি। বাধ্য হয়ে নিজেই চলে এলাম।’’
সময়ের আগেই একে একে এ ভাবে ঘরে ফিরতে শুরু করায় আগামী দিনে স্থানীয় বাজারেও মন্দা আসতে পারে বলে আশঙ্কা মানবাজার ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র আনন্দময় সেনের। একই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বোরোর ব্যবসায়ী ভীম মাহাতোও। তাঁদের কথায়, ‘‘এলাকার বাজারে এ বার বাড়তি টাকা আসবে কী ভাবে? বাজার তেজি হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটা কম। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা মার খাবেন।’’