অসমাপ্ত: সরকারি হোমের নির্মাণ কাজ চলছে সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র
সিউড়িতে সরকারি হোমের আবাসিক পড়ুয়াদের ভবন তৈরির জন্য বরাদ্দ হয়েছিল দু’কোটিরও বেশি টাকা। কিন্তু, এক বছরেও কাজ না হওয়ায় ফেরত গিয়েছে তা। বরাদ্দ টাকা কেন খরচ করা গেল না, সেই প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার উষ্মা প্রকাশ করলেন জনশিক্ষা প্রসার দফতর ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী।
মঙ্গলবার সিউড়ি এসেছিলেন সিদ্দিকুল্লা। বৈঠক ছিল জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার পরিষেবা বিষয়ক। উপস্থিতি ছিলেন দফরত ও জেলা প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক। সেখানেই টাকা কেন ফেরত গেল, তার উত্তর হোম কর্তৃপক্ষ, প্রশাসনের আধিকারিক, জনশিক্ষা প্রসার ও প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা পূর্ত (সামাজিক বিভাগ) এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে জানতে চান মন্ত্রী। তবে, সব দিক খতিয়ে দেখে ফের ওই টাকা বরাদ্দ করার ঘোষণা করেন সিদ্দিকুল্লা।
ঠিক কী ঘটেছে?
সিউড়ির কলেজ পাড়ায় রয়েছে সরকারি ওই হোমটি (স্টেট ওয়েলফেয়ার হোম)। অর্থনৈতিক ভাবে পিছনের সারিতে থাকা পরিবারের পড়ুয়ারা এখানে থেকে পড়াশোনো করে। কারা এই হোমে থেকে পড়াশোনোর সুযোগ পাবে, সেটা ঠিক করে একটি কমিটি। পদাধিকার বলে সেই কমিটির এবং হোমের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রঞ্জনকুমার ঝা। হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির ৭৬ জন পড়ুয়া হোমে রয়েছে। কিন্তু, যে ভবনে পড়ুয়ারা রয়েছে, তার একটি অংশে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। সেই দুর্দশা মেটাতে গত বছর অগস্টে জনশিক্ষা প্রসার দফতর একটি দোতলা ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করে ২ কোটি, ৪০ লক্ষ ১৭ হাজার ৪২৪ টাকা। দরপত্র ডেকে রূপায়ণের দায়িত্ব বর্তায় পূর্ত (সামাজিক বিভাগ)-এর উপরে।
‘‘সেই ভবন সম্পূর্ণ হওয়া দূরের কথা, দরপত্র ডেকে কাজ শুরু হতেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি হয়ে গিয়েছিল’’— বলছেন হোমের সুপারিনটেনডেন্ট কাকলি কুণ্ডু। তিনি জানান, এর পরেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের কাজের গতি এতই কম ছিল যে, এ পর্যন্ত জমি থেকে সবে মাথা তুলেছে নির্মাণ। বহু বার এই নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। তা মেনে নিয়েছেন জেলা জনশিক্ষা প্রসার আধিকারিক মহম্মদ হাসিবউদ্দিনও। প্রশাসন সূত্রের দাবি, রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা দফতরের তত্ত্বাবধানে ঘাটতি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের কাজের গতি কম থাকাতেই গত ৩১ মার্চ বরাদ্দ টাকা ঘুরে গিয়েছে দফতরে।
পূর্ত (সামাজিক বিভাগ) দফতরের এগজিকিউ়িভ ইঞ্জিনিয়ার তাপস বসাক সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলতে চাননি। তবে জানা গিয়েছে, মন্ত্রীর সামনে তাঁর ব্যাখ্যা ছিল: দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা কাজে বিলম্ব করছে ঠিকই। সমস্যা ছিল গাছ কাটা নিয়েও। যেখানে ভবনটি তৈরি হচ্ছে, সেখানে বড় বড় গাছ ছিল। সেই গাছ কেটে জায়গা তৈরি করতেই এক মাস পেরিয়ে যায়। জেলা জনশিক্ষা প্রসার আধিকারিক মহম্মদ হাসিবউদ্দিন অবশ্য বলছেন, ‘‘মোটেও একমাস নয়। বন দফতরের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটতে সময় লেগেছিল দিন পনেরো। তার পরেও যতটা কাজ এগোবার কথা ছিল, সেটা হয়নি।’’ হোমের তরফে কাকলিদেবী বলছেন, ‘‘ভেবেছিলাম পড়ুয়ারা বর্ষার আগেই নতুন ভবনে আসতে পারবে। শুধু তাই নয়, যে ভবনে আবাসিক পড়ুয়রা রয়েছে। সেটিরও সংস্কার প্রয়োজন। তারও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, এই নির্মাণ যত সময় শেষ না হচ্ছে সেটার টাকাও মিলবে না।’’