তাপবিদ্যুতের ছাইয়ে ইট গড়বেন মহিলারা

১০ জানুয়ারি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ৩৮ লক্ষ টাকা খরচে তৈরি ‘ফ্লাই অ্যাশ ব্রিকস’ কারখানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্মসচিব (এনআরইজিএ) অপরাজিতা সরেঙ্গি।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪০
Share:

জোটবদ্ধ: ইট তৈরির যন্ত্রের সামনে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র

ইটভাটায় শ’য়ে শ’য়ে ইট তৈরি করছেন মহিলারা। জেলায় এমন দৃশ্য প্রায়ই নজরে পড়বে। কিন্তু, কারখানায় বিশাল যন্ত্রের সাহায্যে ‘ফ্লাই অ্যাশ’ ইট তৈরি করছেন মহিলারা— এত দিন তা চোখে পড়েনি। দুবরাজপুরের সাহাপুরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই থেকে সে ভাবেই ইট তৈরি করবেন মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। তার দায়িত্বে রয়েছে ৩২৫টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী সমূহের শীর্ষে থাকা ‘আত্মসম্মান সঙ্ঘ সমবায়’।

Advertisement

১০ জানুয়ারি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ৩৮ লক্ষ টাকা খরচে তৈরি ‘ফ্লাই অ্যাশ ব্রিকস’ কারখানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্মসচিব (এনআরইজিএ) অপরাজিতা সরেঙ্গি। শেড গড়ে গুজরাত থেকে যন্ত্র নিয়ে এসে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে ইটের উৎপাদন শুরু হয়েছে। জেলা ও ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কতটা শক্ত এবং সহ্যক্ষমতা রয়েছে ওই ইটের, সিউড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে দেখার পরই বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু করা হবে। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলছেন, ‘‘সাহাপুরের ওই প্রকল্পটির প্রশংসা করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্মসচিব (এনআরইজিএ) অপরাজিতা সরেঙ্গি মহাশয়ার এত পছন্দ হয়েছিল প্রকল্পটি, যে অন্য রাজ্যে এমনটা করা যায় কি না তা দেখেতে উনি ছত্তিসগঢ় থেকেও প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলেন। শনিবারই ওঁরা এসেছিলেন।’’

১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জেলার নোডাল অফিসার প্রদীপ্ত বিশ্বাস ও দুবরাজপুর ব্লকের বিডিও বনমালি রায় জানান, ওই প্রকল্পের সঙ্গে সরকারি অন্য দফতরের মিলিত উদ্যোগে এখন অনেক ‘উদ্ভাবনী’ কাজ হচ্ছে। সঙ্গে জোর দেওয়া হচ্ছে নারীশক্তির বিকাশের দিকেও। ১০০দিনের প্রকল্পে শুধু কর্মদিবস তৈরি করেই কাজ শেষ না করে মহিলাদের স্বরোজগারের পথ দেখানোই উদ্দেশ্য। রাজ্য এমআরইজিএ সেল পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াতেও এই ধরনের পদক্ষেপ করেছে। সেই সূত্র ধরেই সাহাপুরে ‘ফ্লাই অ্যাশ ব্রিকসের’ কারখানা। কাঁচামাল পেতে ব্লকেই রয়েছে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। যেখান থেকে প্রতি দিন টন টন ছাই বের হয়।

Advertisement

জেলা প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, সাধারণত ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় উর্বর অংশ চলে যায়। চাষের ক্ষতি হয়। অন্য দিকে, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই দিয়ে ইট তৈরি হলে পরিবেশ বাঁচে। পাশাপাশি বাঁচে জমির উর্বরতাও। দুবরাজপুর ব্লকেই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থাকায় সুবিধা পাচ্ছে আত্মসম্মান সঙ্ঘ সমবায়। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা সাহায্য করেছে রাজ্য ‘পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’।

আত্মসম্মান সঙ্ঘ সমবায়কে দায়িত্ব দেওয়ার পিছনেও কারণ রয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রায় চার হাজার মহিলা সদস্য নিয়ে কলেবরে বড়ই নয়। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে দেশের সেরা সঙ্ঘ সমবায়ের সম্মান পেয়েছে তারা। দ্বিতীয়ত, ইউনিট গড়তে প্রয়োজনীয় খাস জমি পাওয়া গিয়েছিল সাহাপুরের চণ্ডীদাসপুর মৌজাতেই। নানা ধরনের কাজ করছে সঙ্ঘ। আরও একটি ভিন্নধর্মী কাজের সঙ্গে আগামী দিনে জুড়তে পারবেন, অর্থনৈতিক স্বাচ্ছল্য আসবে মহিলা সদস্যদের— সেটা ভেবেই আনন্দিত সকলে।

আত্মসম্মান সঙ্ঘের মর্জিনা বিবি, দীপা হাজরা, মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, আসমত বিবি, কুলসুম খাতুনের নজরদারিতে চলবে ওই কারখানা। তাঁরা জানান, দিনে তিন হাজার ইট তৈরি করা হবে। প্রতিদিন গড়ে ১০ জন সদস্য কাজ করবেন। মর্জিনারা বলছেন, ‘‘আমাদের খুব ভাল লাগছে যে এই দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হল।’’ তাঁরা জানিয়েছেন, শুধু ফ্লাই অ্যাশ ব্রিকস তৈরিই নয়, ১০০ দিনের কাজে ইট কারখানার পাশে পুকুর খনন করানো হয়েছে। সেখানে মাছ চাষ করা হবে। প্রাণীসম্পদ বিকাশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পোল্ট্রি গড়ে তুলবেন মহিলারা। তৈরি হবে পড়ে থাকা জমিতে কিচেন গার্ডেন ও নার্সারি। যাতে অন্তত ৪০ জন মহিলা নিয়মিত কাজ পান। আর জেলাশাসক বলছেন, ‘‘ইট কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়ে গেলেই গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা সরকারি কাজে মহিলা স্বনির্ভর দলের তৈরি ফ্লাই অ্যাশ ব্রিকস ব্যবহারের জন্য ঠিকাদারদের নির্দেশ দেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement