Mayureshwar

বাড়ি-গ্রামে বাধা, তবু দায়িত্বে অটল

এলাকার দুটি সরকারি নিভৃতবাসে আটকে থাকা লোকজনের একটিতে দু’বেলা রান্না করা খাবার জোগাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ০৫:০৮
Share:

ব্যস্ত: নিভৃতবাসের জন্য রান্না করছেন সদস্যারা। নিজস্ব চিত্র

কোয়রান্টিন কেন্দ্র বা নিভৃতবাস কেন্দ্রে গড়া নিয়ে জেলায় জনতার বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল প্রশাসনকে। জেলায় করোনা আক্রান্ত ছ’জনের মধ্যে পাঁচ জনই আবার ছিলেন সরকারি নিভৃতবাসে। তাতে নিভৃতবাস নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। বাসিন্দাদের অনেকেই নিভৃতবাস কেন্দ্রগুলির আশপাশও মাড়াচ্ছেন না। কিন্তু সেই কেন্দ্রগুলিতেই রান্না করা খাবার জুগিয়ে যাচ্ছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের উলকুন্ডা পারিজাত স্বনির্ভর সঙ্ঘ সমবায়ের ওই মহিলা সদস্যরা বলছেন, ‘‘উদ্বেগ তো থাকবেই। তা বলে তো দায়িত্ব এড়াতে পারি না!’’

Advertisement

এলাকার দুটি সরকারি নিভৃতবাসে আটকে থাকা লোকজনের একটিতে দু’বেলা রান্না করা খাবার জোগাচ্ছেন তাঁরা। অন্যটিতে বাজার, রোজকার কাঁচা মাল সরবরাহ করছেন তাঁরা। পরিবারের আপত্তি আছে। আপত্তি রয়েছে গ্রামেও। তবু সে সব অগ্রাহ্য করে একটি মাস্কের উপর ভরসা করেই দায়িত্বে অবিচল হীরারানি দাস, মিতালি মণ্ডল, সমিনা বিবিরা।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ব্লকের সাতটি সঙ্ঘ সমবায় রয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মাস্ক তৈরি স্যানিটাইজার তৈরি, রেশনের কুপন বিলি করছিলেনই সঙ্ঘ সমবায়ের মহিলা সদস্যরা। পরে নিভৃতবাসে পরিষেবা দেওয়াও যুক্ত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে এই মুহূর্তে জেলায় ৩৩টি সরকারি নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে বাইরের জেলা বা রাজ্যে থেকে জেলায় ফেরা পুরুষ মহিলা ও শিশুদের। ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকে বেশ কয়েকটি নিভৃতবাস রয়েছে। তারই একটি তৈরি হয়েছিল উলকুন্ডা গ্রামে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী সমূহের সঙ্ঘ সমবায়ে। ২৪ মার্চ থেকে ধারাবাহিকভাবে সেখানে হাটবাজার ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছচ্ছেন সঙ্ঘের সদস্যার।

Advertisement

বর্তমানে ওই কেন্দ্রে রয়েছেন ৪৯ জন বাসিন্দা। পরে বাইরে থেকে এলাকায় ফেরা লোকজনের সংখ্যা বাড়তে থাকায় নোয়াপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্বিতীয় নিভৃতবাস তৈরি হয়েছে। দিন কয়েক ধরে সেখানে আটকে থাকা মহিলা ও পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে ৪১জনের জন্য রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন ওঁরা। হীরারানি, মিতালি ও সামিনারা বলছেন, ‘‘পরিবারের লোকজন বলছেন এ কাজ করার প্রয়োজন নেই। বাড়িতে ঢুকতে দেব না। গ্রামের লোক বলছে এলাকায় সংক্রমণ হলে তোদের জন্যই হবে। কিন্তু কী করব যাঁরা ওখানে থাকতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা তো আমাদের এলাকারই মানুষ। তাঁরা কোথায় খাবেন?’’

সঙ্ঘের মহিলা সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি নিভৃতবাসে আটকে থাকা এলাকারই বিক্রম দাস গোপাল দাস, তপন বায়েনরা। একই প্রতিক্রিয়া যমুনা দাস, ফেন্সি ভল্লা, গীতা ভল্লাদেরও। গীতা বলছেন, ‘‘আমার তিন বছরের ছোট ছেলে রয়েছে। তার জন্য দুধ, গরম জলের জোগানও দিদিরা করে দিচ্ছেন।’’

ওই মহিলাদের ভূমিকাকে প্রশংসার চোখেই দেখছে ব্লক প্রশাসন। ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের বিডিও অর্ণবপ্রসাদ মান্না বলেন, ‘‘আমার এলাকায় নিভৃতবাস কেন্দ্র গড়া নিয়ে সাধারণ মানুষের তরফে কোনও বাধা আসেনি। তবে সঙ্ঘ সমবায়ের মহিলা সদস্যরা যে ভাবে কেন্দ্রের আবাসিকদের খাওয়া দাওয়ার বিষয়টিতে নজর রেখেছেন তা প্রশংসার যোগ্য।’’ ওই মহিলারা জানাচ্ছেন, প্রশাসনের নির্দেশ তো আছেই। সেই সঙ্গে মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ থেকেই তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। ব্লকের মহিলা উন্নয়ন আধিকারিক রঞ্জনা দে বলছেন, ‘‘প্রত্যেক মহিলার মধ্যেই একজন মা লুকিয়ে। শুধু নিজের সন্তানের জন্য নয়, নিভৃতবাসে আটকে থাকা মানুষের খাবার পৌঁছে দেওয়ার মধ্যেও কোথাও সেই মমত্বই কাজ করেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement